আন্তর্জাতিক অভিবাসন থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০১৯ সালের রেকর্ড সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ থেকে ২০২০ সালে ৬৮ শতাংশে নেমে এসেছে
কোভিড-১৯ মহামারি নানাভাবে কানাডিয়ানদের জীবনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মহামারির দুই বছর পূর্ণ হতে চলায় দেশজুড়ে এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব পর্যালোচনা করে দেখেছে স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা। চোখ রাখা যাক সেদিকে।
২০২০ সালে হেট ক্রাইম বেড়েছিল ৩৭ শতাংশ অর্থাৎ ২০১৯ সালের তুলনায় এ ধরনের ৭১৮টি ঘটনা বেশি পুলিশের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়েছিল। তুলনায় উপাত্ত সংরক্ষণের সময় থেকে এখন পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনার সর্বোচ্চ সংখ্যা ২ হাজার ৬৬৯টি। এসব ঘটনার প্রায় ৬০ শতাংশই ঘটেছে বর্ণ বা নৃতাত্ত্বিক কারণে। মহামারির সময় কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয় ও আদিবাসী কমউিনিটিকে লক্ষ্য করে অপরাধ বাড়তে দেখা গেছে।
২০২০ সালের মার্চ ও এপ্রিলে ৪০ শতাংশ কানাডিয়ান সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন ছিলেন। কোভিড-১৯ এর কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়া ৬১ শতাংশ কানাডিয়ান সামাজিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন। এর বিপরীতে ৩২ শতাংশ আর্থিক ক্ষতি হতে পারে এমনটা ভাবেন নি।
২০২০ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসে। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর এমনটা আর দেখা যায় নি। একই বছর বার্ষিক মৃত্য ৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়, কানাডিয়ানের ইতিহাসে যা নতুন। এছাড়া আয়ুস্কাল কমেছে দশমিক ৬ বছর, ১৯২১ সালের পর এক বছরে যা সর্বোচ্চ হ্রাস। কোভিড-১৯ মহামারি কানাডিয়ানদের বাবা-মা হওয়ার পরিকল্পনা পাল্টে দিয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতি পাঁচ জনের একজন বলেন, মহামারি তাদেরকে সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দিয়েছে অথবা কম সন্তান গ্রহণে বাধ্য করেছে।
অভিবাসনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে মহামারি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০১৯ সালের রেকর্ড সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ থেকে ২০২০ সালে ৬৮ শতাংশে নেমে এসেছে। নন-পারমানেন্ট বাসিন্দাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে শিক্ষার্থী ও ওয়ার্ক পারমিট ধারীরা। অন্যদিকে অন্য দেশে বসবাসকারী বেশি সংখ্যক কানাডিয়ান দেশে ফিরেছেন। এ সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ শুরু হওয়ার পর থেকে এটা সর্বোচ্চ। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে অভিবাসীর সংখ্যা মহামারি পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে এসেছে।
সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা ও চাহিদার ঊর্ধ্বগতি ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৫ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত ৩০ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতির এতো উচ্চ হার আর দেখা যায় নি। বছরওয়ারি খাবারের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। কানাডিয়ানদের মুদি পণ্য বাবদ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। কারণ বার্ষিক হিসেবে মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০০৯ সালের মে মাসের পর যা দ্রুত গতির। গ্যাসোলিন বাদ দিলে ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ১৯৯৯ সালে সূচক চালু পর থেকে এটাই সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। যদিও সে তুলনায় মজুরি বাড়েনি। ২০২১ সালের বসন্তকাল থেকে ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার মজুরি বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মজুরি বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
এদিকে বাড়ির দাম কানাডাজুড়েই অব্যাহতভাবে বেড়েছে। ২০২১ সালে বাড়ি নির্মাতারা নতুন বাড়ির দাম দুই অংকের ঘরে বাড়তে দেখেছিলেন। উইন্ডসর, উইনিপেগ, অটোয়া ও লন্ডনে দাম বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। কিচেনার, ক্যামব্রিজ, ওয়াটারলু এলাকাতেও নতুন বাড়ির দাম আকাশ ছুঁয়েছে।