অন্টারিওর একটি বড় কর্পোরেট অফিসের জনবহুল ব্রেকরুমে লোকজনের মধ্যে যে কথাবার্তা চলে তাতে উদ্বেগই উঠে এসেছে। গত বছর ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কানাডায় পালিয়ে এসে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষকের চাকরি নেন স্টেলা ভিতিয়ুক ও নাতালিয়া ভাবিয়াক। প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েকজন নবাগত ইউক্রেনীয়কে নিয়োগ দিয়েছিল।
তাদের অন্য সহকর্মীরা যখন ছুটির দিনের পরিকল্পনা করেন ভিতিয়ুক ও ভাবিয়াক তখন কানাডায় অবস্থানের চেষ্টার কথা একে অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন। সময় যত যাচ্ছে তাদের জরুরি ভিসার মেয়াদ তত ফুরিয়ে আসছে। যুদ্ধ বন্ধেরও কোনো লক্ষণ তারা দেখতে পাচ্ছেন না। এই যুদ্ধই তাদেরকে কানাডায় নিয়ে এসেছে।
ভিতিয়ুক বলেন, আমি শক্ত মানুষ। তারপরও আমি চাপের মধ্যে রয়েছিল। যেকোনো ব্যক্তির জন্যই এটা পীড়াদায়ক।
২০২২ সালের গ্রীষ্মে তার স্বামী ও বাবা-মাকে ফেলে দুই মেয়েকে নিয়ে কানাডায় আসার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল তাকে। সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এখানে থাকতে চান বলে জানান তিনি। ভিতিয়ুক বলেন, আমি তাদেরকে নতুন কিছু, ভালো কিছু দিতে চাই।
১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ এর বেশি ইউক্রেনীয় জরুরি ভিসা কর্মসূচির আওতায় কানাডায় এসেছেন। কর্মসূচিটি অনির্দিষ্ট সংখ্যক ইউক্রেনীয়কে রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে পালানোর সুযোগ দিচ্ছে। এটা অনন্য এক কর্মসূচি. যা দ্রুততম সময়ে বিপুল সংখ্যক ইউক্রেনীয়কে কানাডায় আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু শরনার্থী কর্মসূচির মতেদা একই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা এতে নেই।
কানাডায় আসা ইউক্রেনীয়দের মধ্যে অনেক বেশি নারী ও শিশু। কারণ, যুদ্ধ করার মতো বয়স হয়েছে এমন পুরুষদের ইউক্রেন ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সামরিক আইনের অধীনে তাদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
ভিতিয়ুক ও ভাবিয়াকের মতো অনেকেই স্থায়ী বাসিন্দার জন্য আবেদন করতে পারবেন বলে মনে করেন না। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনীয়দের অভিবাসন ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যেতে কাজ করছে কানাডিয়ান সংস্থা পাথফাইন্ডার ফর ইউক্রেন। কানাডায় জরুরি ভিসাপ্রাপ্ত ৯২২টি পরিবারের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে তারা। কানাডার বাইরে সমীক্ষা চালানো হয়েছে ২৭২টি পরিবারের ওপর। ফলাফলে দেখা গেছে, কানাডায় অবস্থানকারী ৯০ শতাংশ স্থায়ী বসবাসের সুযোগ চান। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থায় সুযোগটি নিতে পারবেন বলে বিশ^াস করেন মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মানুষ।