চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অফ কানাডা ইনক্ (CUAAC) এর আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা ও পিঠা উৎসব গত ২১ এপ্রিল রোববার অনুষ্ঠিত হয়।টরন্টো শহরের স্কারবরোর এজিনকোর্টস্হ সিটি কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তন উপচে পড়া প্রায় পাঁচ শতাধিক সুপ্রিয় প্রাক্তনী, সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলী, তাদের পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবের সরব উপস্হিতিতে উৎসবটি মুখরিত হয়ে উঠে।
বৈশাখী মেলা ও পিঠা উৎসব পুরো বাঙালি জাতির অন্যতম একটি উৎসব।চুয়াকের এ ইভেন্টটি কার্যত আবহমান বাংলার চিরায়ত বৈশাখী আমেজ সমেত মিলন মেলার রুপ ধারণ করে।পুরো হল জুড়ে সুদৃশ্য ও নান্দনিক ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, বর্ণিল সাজে সজ্জিত রকমারি স্টল, সর্বোপরি প্রাক্তনীদের দৃষ্টিনন্দন বাহারি বৈশাখী পোষাক পরিধান ছিল লক্ষ্য করার মত যা অনিন্দ্য সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
সংগঠনের সভাপতি শফিউদ্দিন আহমদ বেলা তিনটায় ফিতা কেটে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ খান এর সঞ্চালনায় বাংলাদেশ ও কানাডার জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্হিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক কাজি সদরুল হক, অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন, অধ্যাপক সুজিত দত্ত, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন ও বাংলাদেশ থেকে আগত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ বিজনেস এডমিন এর বর্তমান ডিন ও ডিপার্টমেন্ট অফ একাউন্টিং এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামি, সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লুৎফুন নাহার বেগম, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস মিয়া ও সব্যসাচী দত্ত কে পুষ্পস্তবক প্রদানের মাধ্যমে সম্মাননা জানানো হয়।
পুরো উৎসব চলাকালীন রকমারি পিঠা-পুলির সম্ভার, নানা স্বাদের মুড়ি-মুড়কি, বৈশাখী আবহ সমৃদ্ধ বিভিন্ন স্টল, শিশুদের জন্য ফেস পেইন্টিং ও যেমন খুশী তেমন সাজো, হেনা আর্টিস্ট সর্বোপরি বিরামহীন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দুপুর তিনটা থেকে শুরু হয়ে রাত নয়টা ইভেন্ট সমাপ্তি পর্যন্ত মেলা স্পট ছিল জমজমাট।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চুয়াক প্রাক্তনী ও তাদের পরিবারের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন মুক্তা পাল,মেহজাবিন বিন্তে ওসমান,স্নেহা ভট্টাচার্য্য,শ্রদ্ধা পোদ্দার,বিশাল পাল,অস্মিতা চক্রবর্তী,অনিন্দিতা বিশ্বাস,আর্য নাথ,সীমা নাথ,সিরাজী খান,জহিরুল হক,ফেরদৌসি মুন্নি,শাহিদা জুলেখা,রৌশন আকতার ও অনুশ্রী বড়ুয়া প্রমুখ।অনুষ্ঠানে একক ও সমবেত সংগীত এবং নৃত্য পরিবেশনা ছিল চমকপ্রদ।এই পর্বের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন অনুপ সেনগুপ্ত , কাজী আবদুল বাসিত ও কানিজ ফাতেমা।
এছাড়া গতানুগতিক রেস্টুরেন্ট কিংবা বাজার থেকে অর্ডার না করে কার্যনির্বাহী পর্ষদ সদস্যদের সহধর্মিনী ও সদস্যদের ঘরে বানানো ৩৫ পদের পিঠা-পুলি ও ঝাল আইটেম পরিবেশনা ছিল উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ।পিঠা-পুলির মধ্যে অন্যতম হলো—মধুভাত,ছিটা পিঠা, মেরা পিঠা, সেমাই পিঠা, চুটকি পিঠা,দুধ চিতই পিঠা, ঝাল চিতই পিঠা, শুকনা চিতই পিঠা,তালের পিঠা,তেলের পুয়া পিঠা,ফুলঝরা পিঠা,নকশি পিঠা,কেক পিঠা,দুধ পুলি পিঠা,পাটিশাপটা পিঠা,ভাপা পিঠা,নারকেলের পুলি পিঠা,কামরাংগা পিঠা,তালের তেলের পিঠা, মুখপাকন পিঠা,বিনি চালের পিঠা, পেপের সেমাই ইত্যাদি।
এছাড়া ঝাল আইটেমের মধ্যে ঝালমুরি,ঝাল চানাচুর, চটপটি, ফুচকা, ছোলাবুট, চিকেন পেটিস, দই বরা, পিয়াজু, ঝাল পুয়া,পাকোরা, তুনা কাবাব,চিকেন কাবাবসহ বিরামহীন মালাই চা পরিবেশন- সমগ্র সুপ্রিয় উপস্হিতির রসনা তৃপ্ত করেছে।চুয়াকের ইতিহাসে প্রথম ও টরন্টোর বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে বহুল আলোচিত পিঠা-পুলির এই অভিনব বিশাল কর্মযজ্ঞের সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন সেলিনা সরওয়ার।
বহুমাত্রিক সমগ্র এই অনুষ্ঠানের শৃংখলা ছিল নজরকাড়া।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অফ কানাডা ইনক্ এর নব নির্বাচিত কার্যকরি পর্ষদের নিরলস পরিশ্রমের কারণে এই ইভেন্ট ছিল সফলতম এবং যুগপৎ প্রশংসার দাবিদার। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।