আহমদীয়া মুসলিম জামাতের মারকাজি বাংলা ডেস্কের ইনচার্জ মাওলানা ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ সম্প্রতি এসেছিলেন টরন্টো সফরে। এরই অংশ হিসেবে ভিজিট করেছেন বাংলামেইল অফিস। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন আমাদের সঙ্গে।
বাংলামেইল : কেন জানি আমার কাছে মনে হয় যে আহমদীয়া মুসলিম জামাতের যে অ্যাক্টিভিটিগুলো, যেগুলো আমি ১০ বছর আগে দেখতাম সেটি অনেকখানি স্থিমিত, হয়তো আমি ভুল কিন্তু এরকম কোনো কারণ আছে কিনা যে অ্যাক্টিভিটিগুলো আগের চাইতে একটু কম হচ্ছে? এবং এই প্রশ্নটি করার নেপথ্যে আমার আর একটি কারণ আছে যে বর্তমান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামোফোবিয়া বিরাট একটা ইস্যু বিশেষ করে ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে, ইসলামের নামে প্রচুর সংগঠন রয়েছে যারা সরাসরি সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে জড়িত, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে জড়িত, তাদের এই অ্যাক্টিভিটির কারণে ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে ওয়েস্টার্ন সোসাইটিতে। এরকম প্রেক্ষাপটে আহমদীয়া মুসলিম জামাত যে শান্তির পক্ষের সম্প্রদায় তারা সবসময় শান্তির কথা বলে, তাদের এক্টিভিটি তো আরো বেশি হওয়ার কথা। আপনি কি বলবেন?
ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ : আমি জানিনা আপনার এই ধারণা সৃষ্টি হয়েছে কোন কারণে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমাদের অ্যাক্টিভিটি অনেকটা বেড়েছে। কোভিডের যুগে অনসাইট প্রোগ্রাম হয়তো সম্ভব ছিল না কিন্তু ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম শত শত গুণ বেড়ে গেছে। এই কারণে হয়তো আপনার চোখে পড়েনি । কারণ ভার্চুয়াল প্লাটফর্মগুলোতে আমরা আপনাকে হয়তো সেই জায়গা দিতে পারিনি।
বাংলামেইল : আহমদীয়া মুসলিম জামাত বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ইন্টারফেইথ ডায়লগ এর আয়োজন করতো যেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের উপস্থিতি থাকতো। আপাতত এরকম আয়োজনতো দেখছি না।
ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ : এটা অহরহ হচ্ছে এখনও।
বাংলামেইল : কিন্তু গত ৪-৫ বছর আসলে হয়নি, এসব কারণে হয়তো অনেকের কাছে মনে হয়, তাদের অনেকে আমাকে করেন …..
ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ : অ্যাক্টিভিটি বরং আরও বৃদ্ধি পেয়েছে আমাদের, বহু গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু ওই কোভিডের সময় সেটা এতটা সামনে আসেনি, কিন্তু তা সত্বেও আমাদের ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম শত শত গুন বৃদ্ধি পেয়েছে আর এখনো আমার এই ট্যুরে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারফেথ অনুষ্ঠান করেছি, আমরা সাস্কাটুনে প্রোগ্রাম করেছি সেখানে হিন্দু ভাইকে ডাকা হয়েছে তিনি লেকচার দিয়েছেন আমি সেখানে ইসলামের পক্ষে কথা বলেছি। তো অ্যাক্টিভিটি সব জায়গাতে আছে, বাংলাদেশে হয়েছে আমাদের ইদানিং আর বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটেও প্রচুর প্রোগ্রাম হচ্ছে আমাদের বিভিন্ন জায়গায়। ইংল্যান্ডে হয়েছে তারপর ভ্যাঙ্কুভারে আমরা করেছি। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধর্মের লোকদের ডাকা হয়েছে এবং বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেটি নিয়েও আমরা কাজ করছি। অ্যাক্টিভিটি অহরহ জারি আছে।
বাংলামেইল : বাংলাদেশে এই মুহূর্তে আপনারা কীরকম পরিস্থিতিটা পার করছেন? আগের চাইতে ভালো নাকি একই রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আপনারা যাচ্ছেন?
ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ : বাংলাদেশের যে বিরাজমান পরিস্থিতি সেটিতে তেমন একটা পরিবর্তন আসেনি যদিও হামলা প্রকাশ্যে হচ্ছে না কিন্তু চোরা গুপ্তা হামলায় বিভিন্ন জায়গায় আহমেদীদের ক্ষতিগ্রস্থ করার চেষ্টা চলছে। আমরা আসলে এখনো শতভাগ নিরাপদ বোধ করি না কোনো জায়গাতেই।
বাংলামেইল : সংখ্যার দিক থেকে আমি যদি জানতে চাই, যে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশী-বাঙালীরা আপনাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। সারাবিশ্বে বাংলাদেশী ও বাঙালীদের এই সংখ্যার পরিমান কত?
ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ : আসলে এটি বলা খুব কঠিন কারণ প্রতিদিন আমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব জায়গায় নতুন নতুন লোক যারা স্টাডি করছে এবং তাদের সামনে সত্য স্পষ্ট হচ্ছে। আল্লাহতালা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। অনেকে এই সত্য স্বপ্ন দেখে আল্লাহতালার ফজলে আসছেন। অনেকে বই পুস্তক পড়ে আসছেন। তো এটি বলা খুব কঠিন যে আমাদের এক্সজ্যাক্টলি সংখ্যা কত। কিন্তু সারা বিশ্বে আমাদের সংখ্যা কোটি কোটি।
বাংলামেইল : বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সবকিছু মিলিয়ে আপনাদের প্রায়োরিটি কি?
ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ : বর্তমান অবস্থায় আমাদের অবস্থান হল এই যে সারা বিশ্বে ইসলাম প্রচার করা এবং সারা পৃথিবীতে ইসলামের জন্য জয় করা। কিন্তু এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে আমাদেরকে অনেক কাজ করতে হয়, শান্তির জন্য কাজ করতে হয় যেমন বর্তমান বিশ্বে ফিলিস্তিনিদের যে অবস্থা সেটি সম্পর্কে আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম বারবার দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তাঁর বিভিন্ন জুম্মার খুতবা বা তাঁর প্রেস ব্রিফিং আছে সেগুলোতে তিনি বারবার এটি বলছেন যে তোমরা শান্তির জন্য কাজ করো। বিশেষ করে মুসলমান হিসেবে তিনি বলেন যে ফিলিস্তিনি ভায়েদের জন্য, তাদের যে কষ্ট, তাদের যে রক্ত ঝরছে সে রক্ত ঝরা বন্ধ করার জন্য কাজ কর। যেখানে যে আহমদীয়াদের প্রভাব আছে সে যেন সে প্রভাবের বলয়ে কাজ করে। যেমন ইংল্যান্ডে আমাদের বিচারক আছে, আহমদী মিনিস্টার আছে তারপর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আছে সেখানকার হেড হলেন আমাদের একজন আহমদীয়া মুসলিম জামাতের প্রধান কবির খান সাহেব, সবাইকে তিনি ডেকে বলেছেন যে তোমরা শান্তি এবং ন্যায়ের পক্ষে কাজ করো। এটা নয় যে তোমরা একটা পদে আছো তাই তোমরা অন্য কোন দলের পক্ষে মন্তব্য প্রকাশ করবে। ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে যাও। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে আমরা কোনভাবে অন্যায় হত্যাকে সমর্থন করিনা। সেটি ইসরালের কাউকে হত্যা করা হোক বা ফিলিস্তিনিদের কাউকে ত্যা করা হোক। কারন রসুল এ করিম (রা.) বলেছেন যে, কোনো সিভিলিয়ান যে কোনোভাবে যুদ্ধের অংশ নয় তার রক্ত ঝরানো চরম অন্যায়। কোন নারীকে হত্যা করা ঠিক না কোন শিশুকে হত্যা করা ঠিক না। যে পুরোহিত তার গির্জায় বা মন্দিরে বসে আছে তাকে গিয়ে অনর্থ কেন আঘাত করবে। এটা ইসলামের পারমিশান নেই। এই পরিস্থিতির শুরু থেকে তিনি তাঁর প্রত্যেক খুতবাতে বলে যাচ্ছেন যে বিশ্বাঙ্গনে নিরীহ মুসলমানদের স্বার্থের জন্য কাজ করতে হবে।
বাংলামেইল : আমরা সব ধর্মের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি যে পরের নতুন যে জেনারেশন বিশেষ করে যারা আমাদের ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোতে রয়েছে যেমন আমেরিকা, কানাডা বা ইউকে তাদের দিনকে দিন ধর্মের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। আমরা এটা নিজেরাও দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন গবেষণা আসছে, অনেক আলোচনা হচ্ছে। কি মনে হয় আপনার কাছে যে তাদের ফেইথ কমছে কেন? তারা তো তাদের আশ্রয়ের জন্য ধর্মকে খোঁজার কথা কিন্তু তারা খুঁজছেনা এবং দ্বিতীয়ত আহমদীয়া মুসলিম জামাতের মেকানিজমটা কি? আসলে যারা পরের প্রয়োজন আছে তাদের রেসপন্স টা কি?
বাংলামেইল : এটা খুব একটা ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন। আমাদের সামনে এর উত্তর খুবই স্পষ্ট। উত্তর হল যে আজকে ধর্ম তাদেরকে কিছু দিতে পারছে না। ধর্মের যেমন উদ্দেশ্য হল আল্লাহকে পাওয়া বা আল্লাহকে দেখা। ধর্মের জন্য যেমন উদ্দেশ্যে সেটি খোদার সাথে সম্পর্ক। একমাত্র ইসলাম সেই ধর্ম যে ধর্ম সম্পর্কে আল্লাহতালা নিজে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে কোরান আমি নাযিল করেছি আমি এর সুরক্ষা করব। এটার কোন পরিবর্তন কেউ আনতে পারবে না। তো ইসলাম সুরক্ষিত অবস্থায় আছে। কিন্তু ইসলামের ভেতরেও আবার খোদা যে আজও মানুষের সাথে কথা বলেন, আল্লাহ আজও যে দোয়া শোনেন, আজও কঠিন সময়ে তার বান্দার পাশে দাঁড়ান এই বিশ্বাসটা অনেক হালকা হয়ে গেছে এখন। যার ফলে ওরা মনে করে যে ইসলাম ফলো করে লাভ কি? আমার দুঃখ তো ইসলাম দূর করতে পারে না। এখানেই পার্থক্য আমাদের এবং অন্যদের মাঝে। আপনি আমাদের জামাতের কথা বলেছেন, আমাদের কমিউনিটির মূল শিক্ষাই এটা যে ব্যক্তিগতভাবে তুমি খোদার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা কর, তোমার সেজদা যেন তওমার অশ্রু সজ্জিত হয়, খোদার সাথে বিগলিত চিত্তে যখন কথা বলবে বা খোদার কাছে চাইবে তোমার সমস্যার সমাধান তখন খোদাতালা তোমাকে দিক নির্দেশনা দেবেন। তুমি কোনো বিষয়ের জন্য দোয়া করবে খোদাতালা তোমাকে কবুল করে সেটা দেখাবে যে এই দোয়া তুমি করেছ আমি তোমার দোয়া কবুল করলাম। আর আমি যখন এই কথা বলছি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে এই বিষয়ে। যে আমি কোনো বিষয়ে দোয়া করেছি খোদাতালার কাছে, খোদাতালা আমার সেই তালা কবুল করেছেন এবং একবার নয় দশকের পর দশক ধরে সেটা কবুল হয়ে চলেছে। যদি আপনি জানতে চান কয়েকটা নির্দিষ্ট ঘটনা আমি আপনাকে বলতে পারবো।
আহমদীয়া কমিউনিটি এবং অন্যদের মধ্যে পার্থক্য হল যে এই কমিউনিটির ইয়ং, বৃদ্ধ, যুবক সবাই জানে যে খোদাতালা এখনো কথার উত্তর দেন, খোদাতালা এখনো কথা শোনেন, খোদাই আমাদেরকে মুক্তি দিতে পারেন। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে এই আশার আলো আপনি দেখবেন না কারণ এই আলো দেখানোর জন্য আল্লার পক্ষ থেকে কোন এক ব্যক্তির দরকার। আমরা বিশ্বাস করি তিনি এসেছেন, তিনি সে আলোর পথ আমাদেরকে দেখিয়েছেন। আসল ইসলামই হল খোদার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা, আসল ইসলামই হল মুহাম্মদ রসুল (সা.) প্রকৃত নৈতিক আদর্শ সেই গুলোতে সজ্জিত থাকা। এই আদর্শে আদর্শে আপনি সজ্জিত হবেন না, তাহলে ধর্মের সাথে আপনার সম্পর্ক হালকা থেকে যাবে।
বাংলামেইল : আমরা জানি যে আমাদের মুসলিম জামাতের কিছু সিস্টার কনসার্ন রয়েছে, চ্যারিটি অরগানাইজেশন রয়েছে যারা বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে কাজ করেছে। এই মুহূর্তে আপনাদের বাংলাদেশে কি চ্যারিটি প্রোগ্রাম চলছে?
ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ : রোহিঙ্গা সাপোর্ট যেটা আমাদের একটা দাতব্য প্রতিষ্ঠান আছে হিউম্যানিটি ফার্স্ট, আপনি জানেন এটা কমিউনিটি রান নয় এটা ইন্ডিপেনডেন্ট। কিন্তু এটা শুরু হয়েছে কমিউনিটির মাধ্যমেই। রোহিঙ্গাদের ভেতরে এখনো আমাদের কার্যক্রম আমার মনে হয় এখনো জারি আছে এবং ফিলিস্তিনে আমাদের হিউম্যানিটি ফার্স্ট কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের স্থাপনা ছিল যা ওয়াটার প্লান্টের। বর্তমানে সেটাকে আরো জোরদার করা হয়েছে এবং কালও আমাদের মসজিদে জুমার পর একটা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে সেখানে এখন প্রচুর সাহায্য দরকার যে যেভাবে পারেন আর্থিক অনুদান করেন, আমাদের টিম সেখানে কাজ করছে ফিলিস্তিনি মুসলমান ভাইদের জন্য। আমাদের এই সিস্টেম খেলাফতের অধিনে এবং খলিফার তত্ত্বাবধানে সারা পৃথিবীতে থেকে সাহায্য আসছে এবং সেখানে আমাদের মাধ্যমে কারণ সেখানে আমাদের বড় কমিউনিটি আছে, তারা সেখানে সাহায্য করে চলেছে।
বাংলামেইল : আপনি জানেন আপনাদের বাংলাডেস্ক রয়েছে। ওই বাংলাডেস্ক থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয় তারা বিভিন্ন আর্টিকেল করেন, কমার্শিয়ালও দেন। আপনিতও ইউকে তে আছেন, সেন্ট্রাল ডেস্কে আছেন। আসলে বাংলাডেস্ক কি কাজ করে? সাধারণত আমরা যেগুলো জানি তারা পাবলিসিটি করে বাংলা ভাষায় যারা আছে তাদেরকে নিয়ে কিন্তু বাইরেও কি কোন কাজ আছে কিনা যেটা এক্সেপশনাল?
ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ : মুলত কমিউনিটির যে এক্টিভিটিজ সেটা মূলত বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে পরিচালনা করা বা বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য যা দরকার সেটা বাংলাতে প্রডিউস করা এটাই আমাদের মূলত কাজ। আমাদের যিনি খালিফা তাঁর কথা, তাঁর ইচ্ছা, তার খুতবা, যেটা তিনি সারা বিশ্বের মানুষের জন্য গাইড করার জন্য দিয়ে চলেছেন সেটিকে বাংলায় রূপায়িত করা আমাদের কাজ। খালিফার ইচ্ছায় বাঙ্গালীদের ভিতর বাংলা ভাষাভাষীদের বোঝানোর কাজ করছে বাংলাডেস্ক।
বাংলামেইল : যেমন আমি পাকিস্তানের পরিস্থিতি তো জানি, আমার মনে আপনাদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি পাকিস্তানে। সেই জায়গায় ভারতের অবস্থাটা কি? যেটা আমার অনেকবারই জানার ইচ্ছে হয়েছে….
ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ : আসলে ভারতে পাকিস্তানের মতো না পরিস্থিতি। ভারতে আমাদের স্বাধীনতা আছে, যা আমরা বলতে চাই বা যা প্রচার করতে চাই সে স্বাধীনতা আমরা অবশ্যই উপভোগ করি। কিন্তু যেখানে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল আছে সেখানে আমাদের ঝামেলা হয় সেখানে আমাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়, এমনকি হয়েছেও। ভারতেও যারা বাংলা ভাষাভাষী আছেন তারা যখন খলিফার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাংলা ভাষায় লেখেন সেগুলো আমরা খলিফার কাছে উপস্থাপন করি।
বাংলামেইল : কানাডায় কি আপনার এটা প্রথম সফর? না এর আগেও এসেছেন?
ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ : আমি আগেও এসেছি একবার।
বাংলামেইল : এবার কতদিনের ট্যুর? এবারের সাংগঠনিক সফরে আপনি কোথায় গেলেন? কি কি করলেন?
ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ : আমি গেছি ক্যালগেরি, আমি গেছি মন্ট্রিয়ল। ক্যালগেরিতে আমাদের অনেক বড় কমিউনিটি আছে। অনেক বড় মসজিদ,আমারিকার মধ্যে সবচেয়ে বড় মসজিদ যেটি আমাদের ক্যালগেরিতেই আছে। সেখানে আমাদের প্রথমত আমি যারা আমাদের জামাতের সদস্যরা আমাদের ভাইদের সাথে বসেছিলাম। তাদের সাথে একটু বিশ্বাসগত পার্থক্য আছে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন আমরা শান্তিপ্রিয়ভাবে আমাদের মসজিদে বসিয়েই তার উত্তর দিয়েছি এবং আমাদের কমিউনিটি নিজস্ব এডুকেশনাল কিছু কাজ আমি করেছি যে মানুষ তো আসলে সব সময় ভালো কথা স্মরণ করানোর মুখাপেক্ষি। জীবনাদর্শ আবার সবার সামনে নতুনভাবে তুলে ধরেছি, পারিবারিক সম্পর্ক নিজেদের মাঝে দৃঢ় রাখতে হয়, এগুলো সুরার শিক্ষা, নিজেদের ভেতরে অনৈক্য সৃষ্টি করতে হয়না এ বিষয়গুলো আমি কমিউনিটিকে বুঝিয়েছি। তারপর ওয়াইডার আমাদের যে কমিউনিটি আছে তারা বসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে মসজিদে।
এরপর আমরা অন্যান্য জায়গায়ও গিয়েছি যেমন, আমরা সর্বধর্ম সম্মেলন করেছি। সাস্কাটুনে প্রায় ৬০ জন ভিন্নধর্মালম্বী এসেছে তাদের কেউ হিন্দুও ছিল এবং অন্যান্য ভাইয়েরাও ছিল। সেখানে অনেক প্রশ্ন তুলেছেন তারা আমি উত্তর দিয়েছে সব।
বাংলামেইল : আরেকটি প্রশ্ন যেটি আমার ব্যক্তিগতভাবে জানার ইচ্ছা যে বিশেষ করে একটা ধর্মীয় কনসেপ্ট থেকে নানান ভাবেই আমাদের চিন্তার বিকাশ ঘটে যে ইহুদী সম্প্রদায় কে দোষারোপ করে এবং বিশেষ করে ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের কারণে অনেকের মনজগতে একটা বিশাল প্রভাব পড়ছে, ঘৃণা এবং বিদ্বেষ। আহমদীয়া মুসলিম জামাত এই সময়ের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়গুলো এই প্রেক্ষাপটে কিভাবে হ্যান্ডেল করে, কিংবা আপনাদের যারা সদস্য তাদের প্রতি আপনাদের কি ধরনের ব্রিফ থাকে? ইহুদিদের প্রতি যে বিদ্বেষ রয়েছে, যে ঘৃণা রয়েছে এটাি কী জারি থাকবে? নাকি আসলে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা কাউকে ঘৃণা না করা, কারুর প্রতি বিদ্বেষ না ছড়ানো …
ফিরোজ আলম ভুইয়াঁ : ইসলাম কোনোভাবে কোন জাতি বা কোন গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে তার প্রতি ঘৃণা লালন এবং পোষনে বিশ্বাস করে না। ইসলাম এবসোলিউট জাস্টিসে বিশ্বাস করে, ইসলাম নিরঙ্কুশ ন্যায় নীতি এবং ইনসাফে বিশ্বাস করে। কোন ঐতিহাসিক অন্যায় এবং অত্যাচার যদি কোনো জাতির বিরুদ্ধে থেকে থাকে সেটিও ন্যায় সম্মতভাবে সমাধান করা উচিত। ঐতিহাসিক ভুলভ্রান্তির কারণে যদি আজকের এই চিত্র সামনে এসে থাকে তাহলে ইতিহাসে গিয়ে সেটির সমাধান করার চেষ্টা করা উচিত। এবং সেটি সমাধান করা যায় যদি পৃথিবীতে যারা নীতি নির্ধারক আছে তাদের ভেতর সততার সৃষ্টি হয় এবং এটা সমাধান করা কঠিন কিছু না। জাতিগত কারণে ইসলাম কখনো কারও প্রতি বিদ্বেষ পোষনের শিক্ষা দেয়না এবং আমাদের ইমাম পরিষ্কার ভাবে বলেছেন যে আমরা কোনভাবে অন্যায়কে সমর্থন করি না সে যেইই হোক।