কানাডার ক্যালগেরী শহরে অনুষ্ঠিত আইপিএনএ ১২জন চিকৎসক নিয়ে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান শিশু কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মোহাম্মদ হানিফ। গত ৭-১১ সেপ্টেম্বর টানা পাচঁদিন এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সোসাইটি অব পিডিয়াট্রিক নেফ্রলজী কতৃক তৃ-বার্ষিক শিশু কিডনী বিশ্ব কংগ্রেস ও কর্মশলাটি প্রতি তিনবছর পর আয়োজন করা হয়। এবছর হোস্ট কান্ট্রি ছিলো কানাডা।
এই পাঁচদিনের কংগ্রেস, কর্মশালা ও সেমিনারে বিশ্বের অনেক সব দেশ থেকে আসা প্রায় ২ হাজার বিশ্বমানের শিশু কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগদান করেন। এবার বিশ্বের নানা দেশ থেকে আগত বিশষজ্ঞরা ৮০০শত বিষয়ভিত্তিক গবেষণাপত্র পাঠ করেন। এসব গবেষণাপত্রে কিডনীর জটিল সব রোগ চিকিৎসার নানা বিজ্ঞানভিত্তিক নতুন নির্দেশনা পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আগত ১২ জনের মধ্যে ১০জন নিজেদের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। সবার কাছে তা প্রশংসিত হয়। এই ব্যাপারে টিমের নেতৃত্ব দেয়া প্রফেসর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, এত দূরে এসে উন্নত বিশ্বের একটি দেশ কানাডায় আমাদের গবেষণা প্রশংসিত হওয়ায় আমরা আনন্দিত। এটা আমাদের সকলের কষ্টসাধ্য পরিশ্রমের ফল। তিনি আরো বলেন, এই আইপিএনএ ২০২২ আয়োজনে যোগদানের ফলে নানা গবেষণার নতুন সব মতামত জেনে আমাদের যা অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে বাংলদেশের শিশু কিডনী জটিল সব রোগের চিকিৎসায় প্রভাব পড়বে এবং গুণগত মান বাড়বে।
প্রফেসর হানিফ চট্টগ্রাম লামা বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারী মুসলিম হাই স্কুল এবং চট্টগ্রাম কলেজের পাঠ শেষ করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ লাভ করেন। খুবই ভালো রেজাল্ট করায় তার অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষার সুযোগ হয়। উচ্চ ডিগ্রী শেষে সেখানে স্থায়ী হবার লোভনীয় অনেক অফার গ্রাহ্য না করে দেশের শিশুদের সেবা দিতে ফিরে আসেন। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। পরে সেখানেই তিনি শিশু কিডনী বিভাগীয় প্রধান হিসেবে ৩৫ বছর কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের শিশু কিডনী রোগ বিভাগীয় প্রধান হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
একসময় শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপে প্রোফাইলিন গ্লাইকলের পরিবর্তে মারাত্মক ক্ষতিকারক ডাই ইথাইলিন গ্লাইকল নামক দ্রাবক মিশানো হতো। ফলে প্রতিবছর শতশত শিশু অকাতরে প্রাণ হারাতো। শত-শত শিশুর প্রাণ রক্ষার্থে প্রফেসর হানিফ গবেষণা এই সত্যটি প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে কিছু ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানীর সাথে যুগব্যাপী যুদ্ধের শিকার হোন তিনি। তবে দেশের মানুষ, চিকৎসক এবং মিডিয়া তার সৎ কাজের পক্ষে থাকায় এবং আদালতের রায়ে এই যুদ্ধে তিনি জয়ী হয়ে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে জাতীয় হিরোতে পরিণত হয়ে হন।
টরন্টোতে তিনি ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবেন। অবস্থান করছেন দীর্ঘকালের বন্ধু শিল্পী ও লেখক সৈয়দ ইকবালে সঙ্গে।