
১৯ জুন, রবিবার। টরন্টোর পশ্চিমাকাশে অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভা তখনও দৃশ্যমান। ৯ নং ডজ রোডের কানাডিয়ান লিজিওন হলে উপচে পড়া ভিড়। চট্টগ্রাম সমিতি কানাডার জমকালো অভিষেক ও ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠান। টরন্টো ছাড়াও মিল্টন, হ্যামিলটন, ওকভিল, কিচেনার, পিটারবোরো এমনকি মন্ট্রিয়ল থেকেও অনেকেই এসেছেন চট্টগ্রামের এই মহামিলন মেলায়। মূহর্তের মধ্যে লিজিয়ন হল পরিণত হয় টরন্টোর বুকে একখন্ড চট্টগ্রামে।
অনুষ্ঠানে টরন্টোর অনেক গণ্য-মান্য জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি ছিলেন কনস্যুলার জেনারেল লুৎফর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন ডলি বেগম এমপিপি। অনুষ্ঠানে সভাপত্বিত করেন বিশিষ্ট সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধ্যা মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। সম্প্রতি সীতাকুন্ডে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এবং অতি সাম্প্রতিক বন্যায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি চট্টগ্রাম সমিতি কানাডা সমবেদনা জ্ঞাপন এবং তাদের বিদেহী রুহের সদগতি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপরপরই দুই দেশের জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। এই পর্বে বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে – প্রফেসর ড: শাহাদাত হোসেন খান, প্রফেসর ড: কাজী সদরুল হক, সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ হাসান, অভিষেক ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের কনভেনর মাহবুবুল ইসলাম চৌধুরী সাইফুল, আজিজুর রহমান প্রিন্স সহ আরো অনেকেই। বক্তারা সবাই অনুষ্ঠানের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং চট্টগ্রাম সমিতি কানাডার যাত্রাকে স্বাগত জানান। এই সংগঠন আগামীতে অত্র কমিউনিটিতে একটা সফল এবং অনুকরণীয় সংগঠন হবে বলে সবাই আশা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব ছিল সংগঠনের সদস্যের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে গান পরিবেশন করেন শিল্পী শমিত বড়ুয়া , শিল্পী সিরাজী খান। আবৃত্তি করেন নাজমা বেগম। তিনজনের ত্রয়ী পরিবেশনায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী আবৃত্তি করেন তানভী হক , মাহফুজ আরা সোবহান ও নাহিদ বেলী। এই পর্বের সঞ্চালনায় ছিল তানভী হক -যিনি একাধারে একজন কবি, নাট্যকার , নাট্যাভিনেতা , নির্দেশক ও গায়ক।
পরের পর্বটি ছিল নাহিদ বেলির সঞ্চালনায় “বাবা দিবস ” উপলক্ষ্যে একটি বিশেষ আয়োজন। এই পর্বে কমিউনিটির বিশিষ্ট ৬ জনকে শ্রেষ্ঠ বাবার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়। উনারা হলেন : প্রফেসর ড: শাহাদাত হোসেন খান, প্রফেসর ড: কাজী সদরুল হক, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ দুলাল, বীরমুক্তিযোদ্ধা ডঃ জয়নাল আবেদীন, একাউন্ট্যান্ট আবু তৈয়ব এবং বিশিষ্ট সংগঠক এমদাদ হোসেন চৌধুরী। ক্রেস্ট প্রদান করেন মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।
চতুর্থ পর্বটি ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব। এই পর্বে ঘোষণা করা হয় ২০২২-২০২৪ সালের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির নাম। মহান ৭১ এর স্মরণে এই ৭১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন বীর বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর চৌধুরী, ট্রেজারার মাহবুবুল ইসলাম সাইফুল, যগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জসিম উদ্দিন। পরে আরো ৪ জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানানো হয়। সবাই করতালির মাধ্যমে নতুন কমিটিকে বরণ করে নেন। নবনির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর চৌধুরী সবাইকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান তাঁদের উপর এই গুরু দায়িত্ব দেয়ার জন্যে এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
শেষ পর্বে ছিল বিশিষ্ট কন্ঠশিল্পী তপন চৌধুরীর পরিবেশনায় সংগীতানুষ্ঠান। মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশনায় সবাই মুগ্ধ হন।
পরিশেষে, অনুষ্ঠানের সভাপতি উপস্থিত সবাইকে কষ্ট করে অনুষ্ঠানে আসার জন্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সেই সাথে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এমন সফল ও প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান তাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি আগামী ১৪ আগস্ট “এডামস পার্কে” সংগঠনের বার্ষিক বনভোজনে সবাইকে আমন্ত্রণ জানান। সেই সাথে সেপ্টেম্বরে ঐতিহ্যবাহী চাটগাঁইয়া মেজবান করার ঘোষণা দিয়ে এবং সবাইকে সুস্বাদু নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। চট্টগ্রাম সমিতি কানাডা একটি অত্যন্ত প্রাঞ্জল , সফল এবং পরিচ্ছন্ন অনুষ্ঠান উপহার দিল। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।