‘ও সেই চোখের দেখা প্রাণের কথা সে কি ভোলা যায়’- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ বাণী যেন আবারও উদ্ভাসিত হলো ১৫ মে, রবিবার সন্ধ্যায়, টরন্টোর নন্দিত আবৃত্তি সংগঠন বাচনিক’র রবীন্দ্র- নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত “ চেতনার দুই কূল রবীন্দ্র- নজরুল “ অনুষ্ঠানে। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর বাচনিকের এ আয়োজনে সংগঠনের সদস্য এবং আমন্ত্রিত সম্মানিত শিল্পীদের আন্তরিক পরিবেশনায় দর্শকশ্রোতারা ছিলেন বিমোহিত! বহুদিন পর অনেকেই কাছের বন্ধু, পরিচিত মুখেদের দেখে আবেগে ভেসেছেন; মুখে ছিল হাসি, কারও চোখের কোণ বা কন্ঠ হয়েছে আর্দ্র!
করোনার ঘরবন্দী জীবনে মনবন্দী থাকেনি বাচনিক। একের পর এক অন্তর্জাল আয়োজন নিয়ে কানাডা বাংলাদেসসহ বিশ্বের সমস্ত প্রান্তের আবৃত্তিপ্রেমী মানুষের কাছে ছিল আন্তরিক উচ্চারণ আর ভালোবাসায়। তারই ধারাবাহিকতায় মঞ্চে ফিরলো করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হতেই। বেঁধে বেঁধে রাখার যে প্রত্যয় নিয়ে বাচনিক পথ চলছে, এবারের আয়োজনে সে সত্য বিশ্বাস আরও একবার আলোকিত হলো মানুষের ভালোবাসায়।
আয়োজনের প্রথম পর্ব ছিল বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ও গান নিয়ে। সঞ্চালনায় ছিলেন বাচনিক’র প্রাণ ও কর্ণধার আবৃ্ত্তিশিল্পী মেরী রাশেদীন।
অন্তর মম বিকশিত করো, অন্তরতর হে- বাচনিক সদস্যদের সম্মিলিত উচ্চারণে কবিগুরুর অমর এ শুদ্ধ প্রার্থনা দিয়ে শুভারম্ভ হয়। এরপর শুভেচ্ছা কথামালা নিয়ে আসেন বাচনিক উপদেষ্টা ও গুণী আবৃ্ত্তিশিল্পী রাশীদা মুনীর এবং এই আয়োজনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক তরুণ, সুদক্ষ মর্টগেজ সেবাদানকারী আশরাফুল খান ( এস. খান )। শুভেচ্ছা কথামালার পর বৃ্ন্দ পরিবেশনা ছিল উদ্বোধন কবিতাটির। কবিগুরুর দুটি গান নিয়ে মঞ্চ আলোকিত করেন আমন্ত্রিত অতিথি বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত ও বাচনিক সুহৃদ শিল্পী ডঃ ইখতিয়ার ওমর। তাঁর আন্তরিক অনন্য নিবেদনের পরই মঞ্চে বিষয়ভিত্তিক কিছু কথা বলেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মেরী রাশেদীন। তাঁর কথার শেষে একে একে একক পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন আরিয়ান হক ( ঐকতান ), শাপলা শালুক ( প্রতিজ্ঞা ), ফ্লোরা নাসরীন ইভা ( বোঝাপড়া )।এরপর কবি কাজী হেলাল পরিবেশন করেন কৃষ্ণকলি কবিতাটি, কবিতার সাথে নাচে ছিলেন সুকন্যা নৃত্তাঙ্গনের তাসনীম আহমেদ অর্নী এবং গানে কণ্ঠ দেন মেরী রাশেদীন । এই পর্যায়ে আবৃত্তি পরিবেশন করেন সম্পূর্ণা সাহা ( সোনার তরী ), ফারহানা আহমেদ ( বাঁশি ), তন্ময় রহমান ( নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ )।
কবিগুরুরুকে নিয়ে পর্বটির শেষ তিনটি একক পরবিশনায় ছিলেন সুমি রহমান ( স্ত্রীর পত্র ), কবি হোসনে আরা জেমী ( সোজাসুজি ) এবং কামরান করিম ( হঠাৎ দেখা ) ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ভাগটি সাজানো হয়েছিল আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান কবিতা নিয়ে। বাচনিক কর্ণধার মেরী রাশেদীনের সুন্দর সাবলীল সঞ্চালনায় মুগ্ধ দর্শকশ্রোতাদের চোখ মঞ্চে! কান্ডারী হুঁশিয়ার কবিতাটির বৃন্দ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় নজরুল পর্বটি। সুরসুন্দরে পরপর দুটি নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন আমন্ত্রিত সম্মানিত অতিথি ও বাচনিক সুহৃদ ডঃ মমতাজ মমতা। তাঁর মনোমুগ্ধকর পরিবেশনার পরই রুমঝুম, প্রিয়ন্তি, ইন্দ্রিমা ও তৃষা সুকন্যা নৃত্তাঙ্গনের এই ৪ কন্যা মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন কারার ই লৌহ কপাট গানটির সাথে নৃত্যে-ছন্দে! অনন্য এ নাচটির পর মঞ্চে আবৃত্তি পরিবেশন করেন লিনা ডি কস্তা ( সকাল বেলার পাখি ), তন্ময় রহমান ( চোর ডাকাত ), শিখা আখতারী আহমাদ ( গানের আড়াল ) এর সাথে গানে কণ্ঠ দেন আরিয়ান হক । এরপর মঞ্চে নজরুল পর্বের শেষ তিনটি পরিবশনায় ছিলেন ফ্লোরা নাসরীন ইভা ( কুলি-মজুর ), ফারহানা আহমেদ ( বাসন্তী ) এবং আরিয়ান হক ( ঈশ্বর )।
সবশেষে আজ সৃষ্টি- সুখের উল্লাসে কবিতাটির বৃন্দ পরিবশনার সাথে নাচের ছন্দে মঞ্চ আলোকিত করেন সুকন্যা নৃত্তাঙ্গনের গুরু ও গুণী নৃত্যশিল্পী অরুণা হায়দার ও গীতাঞ্জলী মিউজিক একাডেমীর গুরু সীমা বড়ুয়া। রবীন্দ্র ও নজরুল পর্বে বৃন্দ পরিবেশনায় ছিলেন ফ্লোরা নাসরীন ইভা, ফারহানা আহমেদ, শিখা আখতারী আহমাদ, লিনা ডি কস্তা, আরিয়ান হক এবং মেরী রাশেদীন।
মেরী রাশেদীনের সমাপনী কথার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় প্রতীক্ষিত অনন্য আয়োজনটি।
ফেসবুকে এ অনন্য আয়োজনটি বিশ্বের সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন কবি জামিল বিল খলিল। মুঠোফোন আর ক্যামেরার সমন্বয়ে একই সাথে মঞ্চ আর দর্শকশ্রোতাদের দুটি পর্দায় একটি মঞ্চ অনুষ্ঠানের পরিবেশন নিঃসন্দেহে অভিনব সংযোজন! অনুষ্ঠানে যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন মেহেদী ফারুক ( কীবোর্ড ), রনি পালমার ( তবলা ); শব্দ প্রকৌশল ও মঞ্চ সহায়তায় মামুন।
অনুষ্ঠানটি গ্রন্থণা করেছেন কবি দেলোয়ার এলাহী। এ অনন্য আয়োজনটির নামকরণ নামকরণ, অনলাইন প্রচারণা,ব্যানার- পোস্টার করেছেন কবি জামিল বিন খলিল।
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীর এ আয়োজন সফল করতে যারা আন্তরিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন সেই দুই তরুণকে! তারা হলেন উদীয়মান মর্টগেজ সেবাদানকারী আশরাফুল খান এবং ব্যারিস্টার, সলিসিটর ও নোটারী পাবলিক আরিফ ইমতিয়াজ। বাচনিক আপনাদের তুমুল সাফল্য কামনা করে এবং নিরন্তর শুভকামনা জানায়।
সকল সম্মানিত শ্রোতা দর্শক অতিথিদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। দেখা হবে আবার, কথা হবে কবিতায়।