বিতর্কিত এবং পদত্যাগী প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান কানাডায় ঢুকতে পারেননি
বিতর্কিত এবং পদত্যাগী প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান কানাডায় ঢুকতে পারেননি। কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি সিবিএসএ তাকে কানাডায় ঢুকতে অনুমতি দেয়নি। ডা. হাসান মুরাদ গত ১০ ডিসেম্বর ১.৩৫ মিনিটে টরন্টো পিয়ারসন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে টরন্টো অবতরণ করেন। কিন্তু কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি তাকে কানাডায় ঢুকতে দেয়নি। কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি সিবিএসএ তাকে টানা সাড়ে তিন ঘন্টা বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাস করে। জিজ্ঞাসাবাদে তাকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। বিপুল সংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলেও তাকে জানানো হয়। পরে বাংলাদেশে নারীদের হয়রানি, অপমান, এবং নির্যাতনের কারণে তাকে সিবিএসএ জিজ্ঞাসা করে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ভিডিও, ছবি ও সংবাদ এর বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি কি কারনে কানাডায় এসেছেন জানতে চাওয়ায়, কোন যুক্তি-যুক্ত কারণ দেখাতে ব্যর্থ হয়। এমনকি ভ্রমণসংক্রান্ত কোভিড টেস্টের কাগজপত্রও তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি লাল পাসপোর্টে ট্রাভেল করছিলেন। তার সরকারী ও ব্যক্তিগত পাসপোর্ট জটিলতার বিষয়েও কানাডা ইমিগ্রেশন জানতে চাইলে তিনি কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। পরবর্তীতে কানাডা পিয়ারসন এয়ারপোর্ট হতে ফেরত পাঠানো হয়।
এর আগে দু’বার ডা. মুরাদ হাসান সরকারী সফরে কানাডার – টরণ্টো, মন্ট্রিয়ল, অটোয়া, কেলগেরি, ভেঙ্কুভার সহ বিভিন্ন স্থান সফর করেন, এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের ও আওয়ামীলীগ এর বিভিন্ন সভায় অংশ নেন। তিনি সে সময় বাংলাদেশ সরকার এর তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
খোদ বাংলাদেশে প্রশ্ন উঠেছে, ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট ও কোভিড প্রোটোকল না মেনে মুরাদ কীভাবে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কানাডায় গেলেন? এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসানকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। বিমানবন্দর দিয়ে যে যাত্রীই বাইরের দেশে যান, সেসব বহির্গমন যাত্রীদের স্বাস্থ্য সনদ চেক করা, ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট চেক করার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের না। আমরা ইমিগ্রেশন করি, যাত্রীদের সেবা দেই। ইমিগ্রেশন শাখা ইমিগ্রেশন করবে, স্বাস্থ্যের কাজ স্বাস্থ্য করবে। মুরাদের সংক্রান্ত তথ্য জানতে হলে আপনাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করলে তারা ভালো উত্তর দিতে পারবেন।
উল্লেখ্য, বিএনপির এক শীর্ষ নেতার মেয়েকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ার মধ্যেই মুরাদ হাসানের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ঢাকাই সিনেমার নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে ফোনালাপের ওই অডিওতে মুরাদ হাসানকে অশ্লীল কথাবার্তা ও নায়িকাকে ধর্ষণের হুমকি দিতে শোনা যায়। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার।
এরপর ৬ ডিসেম্বর মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে মুরাদ পদত্যাগপত্র জমা দিলে ওই দিন বিকেলেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কর্র্তৃক গৃহীত হয়েছে।
মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী উপজেলা) আসনের সাংসদ। তার বাবা প্রয়াত মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।