কুইবেকের গৃহহীনতা সমস্যা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। এই অবস্থায় কুইবেক সিটি মেয়র ব্রুনো মারচান্ডসহ কিছু রাজনীতিক ফিনল্যান্ডের মডেলে এর সমাধান দেখছেন। ফিনিশ মডেলে সবাইকে বাড়ি দেওয়ার লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে।
ফিনল্যান্ড তাদের ‘হাউজিং ফার্স্ট’ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। যদিও কুইবেকের একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, এটা এখানে প্রয়োগ করা যাবে কিনা তিনি নিশ্চিত নন। যদিও প্রাদেশিক সরকারের এ ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে।
তার দেশের পদক্ষেপের ব্যাপারে হেলসিঙ্কির মেয়র জুহানা ভারটাইনেন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গৃহহীনতা সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এটাই সঠিক পথ। ফিনিশ মডেল খুবই সাদামাটা। সেটা হলো অ্যালকোহল এবং মাদক ব্যবহার বা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এমনকি চাকরি পেতে সহায়তা করার মতো সমস্যাগুলো সমাধানের আগে লোকজনকে মানসম্পন্ন, স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করুন। এটাই আমাদের নীতির মৌলিক ধারণা। আমরা যদি লোকজনকে বাড়ি দিতে পারি তাহলে এর পাশর্^প্রতিক্রিয়া হবে খুবই ইতিবাচক।
তিনি বলেন, লোকজনকে বাড়ি দিতে পারলে স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে, মাদক ও অ্যালকোহলের ব্যবহার কমে আসবে। সেই সঙ্গে লোকজনের চাকরি খুঁজে পাওয়ার সুযোগ বাড়বে।
১৯৮৭ সালে ফিনল্যান্ড যখন সমস্যাটি সমাধানের কাজ শুরু করে তখন দেশটিতে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার। ২০২২ সালের শেষে এসে সংখ্যাটি নেমে এসেছে ৩ হাজার ৬৮৬ জনে। যদিও দেশটির ৫৫ লাখ মানুষের মধ্যে বাড়ির বাইরে রাত কাটাতে হয় মাত্র ৪৯২ জনকে।
কুইবেকে ২০২২ সালের অক্টোবরে গৃহহীন মানুষ ছিল ১০ হাজার। প্রাদেশিক সরকার ওই সময় সর্বশেষ গৃহহীন মানুষের সংখ্যা গণনা করে। ২০১৮ সাল থেকে প্রদেশটিতে গৃহহীন মানুষ বেড়েছে ৪৪ শতাংশ।
ইউনিভার্সিটি লাভালের অধ্যাপক অ্যানি ফন্টেইন বলেন, কুইবেক ফিনিশ মডেল থেকে শিক্ষা নিতে পারে। কিন্তু আমরা বর্তমানে যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তার নিরিখে এটা অনেকটা অবাস্তব মডেল। বহু ধরনের কাঠামোগত, সাংস্কৃতিক এবং সাংগঠনিক দিক রয়েছে যেগুলো এই কর্মসূচির অংশ, যা আমাদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক আবহে এর সরল ও একরৈখিক বাস্তবায়নকে কঠিন করে তুলবে।
ফিনিশ মডেলের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে ফন্টেইন বলেন, কাউকে বাড়ি দিলেই বাকি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এই ধারণা পোষণ করা ভুল। প্রত্যেকের গৃহহীনতার অভিজ্ঞতা আলাদা আলাদা এবং এর সমাধান অতোটা সররৈখিক নয়। এমন অনেক গৃহীহন মানুষ আছে যারা অ্যাপার্টমেন্টে একা বাস করার জন্য প্রস্তুত নয়। এটা তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। তাই সবচেয়ে উত্তম পদক্ষেপ হচ্ছে বহুমুখী সুযোগ দেওয়া, যেখানে থাকবে ভিন্ন ভিন্ন পথ। সহায়তার ধরনও হবে ভিন্ন ভিন্ন।
২০২১ সালের নির্বাচনী প্রচারণকালে ২০২৫ সালের মধ্যে কুইবেক সিটিকে গৃহহীনমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মারচান্ড। ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে তিনি বলেন, প্রতিশ্রুতিটি অনেকটা ইউটোপিয়ান ছিল।