চার বছর আগে সঞ্জয় মালি ছিলেন একজন ব্যস্ত ট্যাটু শিল্পী। অতীতের দৃশ্যগুলো পুক্সক্ষানুপক্সক্ষভাবে স্মরণ করার পাশাপাশি ট্রেকিংয়ের প্রতি ছিল তার বিশেষ ঝোঁক। এখন ছোট-খাটো ড্রয়িং এবং ব্লকের চারপাশে একটু হাঁটতে বা একেবারেই মৌলিক কাজগুলো করতে পারলেই দিনটি ভালো গেছে বলে মনে হয় ৩৮ বছর বয়সী টরন্টোর এই নারীর।
মালি বলেন, কেন আপনার একদিন ভালো ছিল কিন্তু পরদিন একটি বাক্য শেষ করার শব্দও খুঁজে পাচ্ছেন না এটা ব্যাখ্যা করা কঠিন।
লং-কোভিড তার ভালোবাসার ক্যারিয়ারটাই শেষ করে দিয়েছে। এখন তাকে অন্টারিও সরকারের ডিজঅ্যাবিলিটি পেমেন্টের ওপর ভরসা করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। সঙ্গে খন্ডকালীন কিছু প্রশাসনিক কাজও করেন তিনি।
মালির পৃথিবীটা বদলে যায় ২০২০ সালের মার্চে, যখন তার মনে হয়েছিল যে, ছোট-খাটো ঠান্ডা লেগেছে তার। তিনি বলেন, এটা আমাকে দুর্বল করে দিতে যাচ্ছে ভাবনায়ও আসেনি। পরের দিকে সেটাই ঘটল এবং আমাকে বিপর্যস্ত করে দিল।
কোভিড-১৯ তার শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে এবং চরম অবসাদগ্রস্ত করে দেয়। এরপর দেখা দেয় আরও ভয়ঙ্কর উপসর্গ সামনে আসে। ভুলে যাওয়ার মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে, নিউরোলজি পরীক্ষার সময় এই শিল্পী একটি ঘড়ি পর্যন্ত আঁকতে পারছিলেন না। এ ছাড়াও ছিল প্রচ- ব্যথা। মনে হতো আমার ধমনীগুলো যেন জ্বলছে।
মালি বলেন, এখন এবং তখনকার মধ্যে সবচেয়ে বড় তফাৎ হচ্ছে, হেলথ-কেয়ার কমিউনিটি এখন লং-কোভিড বাস্তবতার স্বীকৃতি দিচ্ছেন। আমার যে অবস্থা তা বোঝানোর জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে লড়াইয়ে নামতে হয়নি আমাকে।
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পর ৩৫ লাখ বা ১১ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক কানাডিয়ানের ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত কমপক্ষে তিন মাস দীর্ঘমেয়াদি উপসর্গ ছিল। এসব উপসর্গের অনেকগুলোই বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা সংজ্ঞায়িত লং-ওকোভিডের সঙ্গে মিলে যায়। একে কোভিড-১৯ পরবর্তী অবস্থাও বলা হয়ে থাকে, যার ফলে প্রাথমিকভাবে আক্রান্তের তিন মাস পর থেকে নতুন নতুন উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। কোনো ধরনের ব্যাখ্যা ছাড়াই এগুলো দুই মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
কানাডার ৪২ শতাংশ মানুষ এসব উপসর্গ এক বছর বা তার বেশি সময় স্থায়ী বলে জানিয়েছে। বহু মানুষের ক্ষেত্রে এ সমস্যার সমাধান হয়নি। তবে এ নিয়ে গবেষণায় যে গতি সঞ্চারিত হয়েছে লং কোভিডে ভোগা রোগীদের সেটা জানিয়েছেন কানাডিয়ান চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা।