শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
18.7 C
Toronto

Latest Posts

বাবা দিবস এবং

- Advertisement -
প্রতীকী ছবি

বাবাদের অনেক রেস্ট্রিকশনস থাকে।

যেমন, দাওয়াতে গেলে রসিকতা করা নিষেধ। খাসির রেজালা দুই পিসের বেশি নিলে, দ্বিতীয়বার পোলাও নিলে গিন্নি চোখ রাঙায়। কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার, প্রেশার বেড়ে যাবে বলে। শালি-ভাবিদের সাথে মশকরা করা নিষেধ। রাস্তায় গুন গুন গান ধরলেও ছেলে-মেয়ে বেঁকে বসে। এমন কি, বাইরে একটু হাঁটতে বেরোতে গেলেই হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়; কখন আসবা, কতক্ষন লাগবে, কোথায় যাচ্ছ, কেন..

- Advertisement -

বাংলাদেশ বারো ঘন্টা এগিয়ে থাকাতে সেখানে আগেই বাবা দিবস শুরু হয়ে গেছে। হাজারটা বাণী, বাবাদের সাথে ছেলে-মেয়েদের ছবি দিয়ে নিচে লেখা- আব্বু তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।

ঘরটা গুমোট হয়ে আছে।
বারান্দায় গিয়ে দরজাটা খুলে ঘরে মুক্ত বাতাস ঢুকাতে লাগলাম। নির্মল বাতাসে ভরে গেলো লিভিং রুম। দিনের বেলা এ দরজা খুলতেও যে কত রেস্ট্রিকশন বাচ্চাদের! মশা ঢুকবে, মাছি ঢুকবে, পোকা ঢুকবে; হাজারটা নিষেধাজ্ঞা।

অটোয়ার সারা আকাশ, বাতাস; সবজায়গায় পোড়া গন্ধ। পাশের শহর কুইবেকের বনাঞ্চলে তীব্র দাবানলে হাজার হাজার হেক্টর বন পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই আগুন নেভানো যাচ্ছে না। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। তবে আশার কথা শহরটা অটোয়া নদী দিয়ে কুইবেকের সাথে বিচ্ছিন্ন। তাই আগুন ওপাশ থেকে এদিকে আসার সম্ভাবনা প্রায় জিরো। কয়েকবার বুক ভরে বাতাস নিতেই আমার ঠোঁটের কোন এক চিলতে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
আরে, ঠিক যেনো বার্বিকিউ এর গন্ধ!
চোখের সামনে ভেসে উঠলো গ্রিল করা গরুর পর্শুকার বার্বিকিউ!

রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। আজ বউ-বাচ্চা-কাচ্চা আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সাড়াশব্দ নাই। এই এক সুযোগ; গিন্নি এক গামলা তন্দুরি চিকেন মাখিয়ে রেখেছে ফ্রিজে। আজকে সময় পায়নি বেক করার। আমি ফ্রিজ খুলে একটা বিরাট সাইজের থানসহ রানের টুকরা নিয়ে এলুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়িয়ে এয়ার ফ্রায়ারের ঢুকিয়ে আবার খবরের সামনে বসি। ওটা হতে প্রায় মিনিটি পনেরো লাগবে।

অতক্ষন অপেক্ষা করা কঠিন। তাই এক বাটি ঠান্ডা তরমুজ আর পেঁপে নিয়ে বসলাম। খুব হেলদি। বয়স হয়ে যাচ্ছে। নিউজে দুঃখের খবরের পাশাপাশি আজ বেশ কিছু খুশির খবরও আছে। যেমন :
-“দক্ষিণ আমেরিকার দেশ একুয়েডরের একজন বয়স্ক মহিলার মৃত্যুর পর তার জন্য যেসব আত্মীয় শোক প্রকাশ করতে এসেছিলেন তারা অবাক হয়ে দেখলেন যে কফিনের মধ্যে তিনি তখনও বেঁচে আছেন, নিঃশ্বাস নিচ্ছেন।”
– আমাজনের জঙ্গল থেকে দুর্ঘটনার শিকার একটি বিমানের আরোহী যে চার শিশুকে ৪০ দিন পর জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, তাদের মা বিমান দুর্ঘটনার পর আরও চারদিন বেঁচে ছিলেন।

খবর দেখতে দেখতে হঠাৎ আমার মাঝে কেমন জানি একটা শক্তির উদ্ভব হলো। নাহ, এভাবে চলে না। বাবা হয়েছি বলে কি বলে উড়ে আসছি? নিজের স্বাদ-আহ্লাদ নাই? আর বাবা নামটার মধ্যে কেমন একটা ভারিক্কি ভাবও আছে; শুধু মুরগি দিয়ে চলবে না। ডিপ ফ্রিজ খুলে একটা বিফ বার্গারের পেটি বের করে পয়তাল্লিশ সেকেন্ড মাইক্রোতে দিয়ে বরফ ছাড়িয়ে ছোট প্যানে সামান্য তেল দিয়ে অল্প আঁচে ভাজা শুরু করলাম। বেশি ভাজা আমার পছন্দ না, মিডিয়াম রেয়ার-ই ভালো লাগে। তাছাড়া ধোঁয়া বেশি হলে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে সারা পাড়া মাথায় তুলবে। সাথে ডিপ থেকে ফ্রেন্চ ফ্রাই বের করে ভাজতে দিলাম। বার্গারের সাথে ওটা না হলে মানায় না।
আজ যেহেতু বাবা দিবস, তাই সবকিছু খাওয়ার হক শুধু আমার!

খাবার রেডি।
আমি আবার কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম। নাহ, মনে হয় সবাই ঘুমাচ্ছে। বার্গার, ফ্রেন্চ ফ্রাইজ, চিকেন তন্দুরী, ঘিয়ে ভাজা নান রুটি, এক বাটি পায়েস আর চায়ের কাপ হাতে সোফায় আয়েশ করে বসতেই অ্যালার্ম বেজে উঠলো উপরের কোনো এক ঘরে; মোবাইলে। তারপর ধুপধাপ সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতে লাগলো আমার দুই ছেলে-মেয়ে। পেছন পেছন তাদের মা।

বাচ্চারা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে “হ্যাপি ফাদার্স ডে” বলে চুমু খাওয়া শুরু করলো। সাথে একটা বিরাট গিফট বক্স, ভেতরে বেশ কিছু চকলেট, একটা টি শার্ট, আর আমার মেয়ের হাতে বানানো একটা চমৎকার কার্ড; বাবাকে উদ্দেশ্য করে নানা কঠিন কঠিন বাণী লিখা। ওদিকে গিন্নি একটা ছোট্ট কেক নিয়ে আসলো। ওটা লুকিয়ে রেখেছিল ফ্রিজে, নিজের হাতে বানিয়েছে।
মহা সমারোহে কেক কাটা শুরু হলো।
কারো চোখে ঘুমের লেশ মাত্র নেই!

দখিনা টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলল, আব্বু আমি চিকেনটা খাই?
– খাও সোনা।
বিত্ত এসে বলল, আব্বু তুমি কি বার্গারটা ফুল খাবা?
– নাহ, তুই খা
– আর ইউ শিওর?
– অফ কোর্স!

ওদিকে গিন্নি একটা খালি কাপ এনে অনুমুতি ছাড়াই আমার কাপ থেকে আধা কাপ চা ঢেলে নিয়ে চুমুক মেরে ক’টা ফ্রেন্চ ফ্রাইজ হাতে নিয়ে মেয়োনেজে চুবাতে চুবাতে বলল- চান্দু, চা তো বেশ বানাইছো! খুব রিফ্রেশিং!

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে হাসি মুখে তাদের কর্মকান্ড দেখতে থাকি। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী আমি হলাম দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠ বাবা। আমার মতো বাবা নাকি ইতিপূর্বে জন্মায়নি, ভবিষ্যতে জন্মাবার সম্ভাবনাও নাকি জিরো।
আমি কাষ্ঠ হেসে, শুকনো কেক আর মিষ্টি চকলেট চিবিয়ে তাদের বক্তব্য মেনে নেবার সর্বাত্মক চেস্টা করতে থাকি।
বাবাদের যে কতো রেস্ট্রিকশনস..

- Advertisement -

Latest Posts

Don't Miss

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.