খেলাঘর কানাডা’র পথচলার দ্বিতীয় বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর টরন্টোর ড্যানফোর্থ এভিনিউস্থ রেডহট তন্দুরীতে স্বল্প পরিসর অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কোভিড-১৯ বিধিবদ্ধতা মেনে ২৫ জন প্রাক্তন খেলাঘরিয়ান ও খেলাঘর সুহৃদের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠানে বরেণ্য কবি ও খেলাঘর কানাডা’র প্রধান অভিভাবক ও ভাইয়া কবি আসাদ চৌধুরী, অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টের সদস্য ডলি বেগম এমপিপি, এনআরবি টিভির প্রধান নির্বাহী ও বাংলামেইল পত্রিকার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টুসহ টরন্টোর সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গণের পরিচিত ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেন।
খেলাঘর কানাডা’র প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক জামিল বিন খলিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোখলেসুর রহমান সাগর-সহ সাম্প্রতিক সময়ে প্রয়াত সকল খেলাঘর বন্ধুদের স্মরণে ও সম্মানে একমিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।
খেলাঘর কানাডা’র সদস্য-সচিব শাপলা শালুকের স্বাগত বক্তব্যের পর খেলাঘর কানাডা’র অন্যতম সংগঠক সুমন সাইয়্যেদ-এর সাথে অন্যান্য খেলাঘরিয়ানের সমবেত কন্ঠে খেলাঘর সঙ্গীত ‘আমরা তো সৈনিক, শান্তির সৈনিক’ পরিবেশন উপস্থিত সবাইকে খেলাঘরের সোনালী দিনগুলিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। খেলাঘর কানাডা’র অভিভাবক প্যানেলের সদস্য বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান মাহমুদের লেখা ও সুর করা ‘আমাদের এই খেলাঘর’ শীর্ষক খেলাঘর কানাডা’র থিম সঙ্গীতটি পরিবেশন করেন শৈশবে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় একাধিক গোল্ডমেডেল বিজয়ী টরন্টোর জনপ্রিয় শিল্পী শান্তা রিফাত। এরপর কবি আসাদ চৌধুরী’র মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেক কাটার পর সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা আলোচনা পর্ব শুরু হয়।
“পৃথিবীর অবস্থা যাই হোক না কেন, খেলাঘর সবসময় শান্তি চায়, মৈত্রীচায়, এগিয়ে যেতে চায়; একটা অসাম্প্রদায়িক, মানবিক মূলবোধ নিয়ে খেলাঘর নিরন্তর এগিয়ে যাবে”- খেলাঘর কানাডা’র ভাইয়া বরেণ্য কবিআসাদ চৌধুরী শুভেচ্ছা আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে এভাবেই তাঁর অভিব্যক্তি ও প্রত্যয় প্রকাশ করেন। কবি খেলাঘরের স্মৃতিচারণ করে কঠিন সময়েও খেলাঘরের এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প ও ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন এবং খেলাঘর কানাডাও সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় নিরন্তর সামনে হেঁটে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টের সদস্য ডলি বেগম এমপিপি শিশু-কিশোরদের জন্য বিশেষ করে করোনার অস্থির সময়ে খেলাঘর কানাডার বিভিন্ন কর্মসূচীর প্রশংসা করে তিনি নিজেও নিজেকে খেলাঘর পরিবারের অংশ হিসেবে মনে করেন বলে উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করেন। ডলি বেগম খেলাঘর কানাডা’র সকলের প্রতি অভিনন্দন ও শুভকামনা জানান এবং সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
শুভেচ্ছা আলোচনায় অংশ নিয়ে এনআরবি টিভির প্রধান নির্বাহী ও বাংলামেইল পত্রিকার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টু খেলাঘর কানাডা’র সকলের প্রতি প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অভিনন্দন জানিয়ে বলেন- খেলাঘরের প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ ও দূর্বলতা রয়েছে। খেলাঘর কানাডা’র প্রতি তার সার্বিক সমর্থন জানিয়ে ভবিষ্যতেও সম্ভাব্য সকল আয়োজনে অংশগ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অন্যান্যের মধ্যে সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ত্ব ও খেলাঘর কানাডা’র সুহৃদ অরুণা হায়দার, প্রাক্তন খেলাঘরিয়ান মান্নাফ লোকাস, খেলাঘর কানাডা’রআহ্বায়ক কমিটির সদস্য সুমন সাইয়্যেদ ও ফরিদা হক শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
এরপর শুরু হয় শুভেচ্ছা বক্তব্য ও সাথে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুভেচ্ছা আলোচনা ও আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেন টরন্টোর আবৃত্তি জগতের পরিচিত মুখ দিলারা নাহার বাবু, মেরী রাশেদীন, শফিক আহমেদ, অরুণা হায়দার, হোসনে আরা জেমী ও ফ্লোরা নাসরিন ইভা। শুভেচ্ছা বক্তব্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রাক্তন খেলাঘরিয়ান মুনমুন রায়, ফারহানা শান্তা, জাহিদা খানম সোমা ও রিফাত শান্তা।
সাংস্কৃতিক পর্বের শেষ পর্যায়ে খেলাঘর কানাডা’র আহ্বায়ক কমিটির তিনজন সদস্য ফরিদা হক, শাপলা শালুক ও হাসিনা হানিফ হাসি আবৃত্তি পরিবেশন করেন। স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান জামিল বিন খলিল।
খেলাঘর কানাডা’র পথচলার এই মাইলফলক উপলক্ষ উদযাপনের দিনে খেলাঘর প্রিয় সকলের প্রতি, শিশুর হাসিতে উজ্জ্বল পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা প্রতিটি শান্তিকামী মানুষের প্রতি শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানিয়ে, বাংলাদেশ ও কানাডাসহ পৃথিবীর সকল শিশুর আনন্দময় শৈশবের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মুনমুন রায়ের কন্ঠে ‘আগুনের পরশমনি ছোয়াওপ্রাণে’ গানটির সাথে অরুণা হায়দারের নৃত্যের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনাড়ম্বর আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
প্রসঙ্গক্রমে খেলাঘর কানাডা’র আহ্বায়ক জামিন বিন খলিল জানিয়েছেন, খেলাঘর কানাডা গঠনকল্পে প্রাথমিক যোগাযোগ পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে। পরবর্তীতে একইবছরের সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ সেন্টারে একটা সভায় দীর্ঘ আলোচনার পর প্রথম আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সে হিসেবে সেপ্টেম্বর খেলাঘর কানাডা’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাস। তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য অনেক, স্বপ্ন আকাশ সমান! কিন্তু করোনার অসুন্দর আক্রমণে সম্ভব হয়নি তেমন কিছুই। তারপরেও খেলাঘর কানাডা’র এই পথচলায় যাঁরাই কোন না কোন ভাবে খেলাঘরের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, উৎসাহ যুগিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন- যাঁরা এমনকি শুধুই নিভৃতে নিজ মনে খেলাঘরের প্রতি শুভেচ্ছা বা শুভকামনা জানিয়েছেন- সবার প্রতি আমাদের অপরিসীম কৃতজ্ঞতা।”
তিনি খেলাঘর কানাডা’র পথচলায় সবার অব্যাহত সক্রিয় সমর্থন ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের আহ্বান জানান এবং সবার সহযোগিতায় শিশুদের বিকাশে খেলাঘর কানাডা নিরন্তর গতিশীলতায় এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।