
কানাডায় প্রবেশের জন্য গত মাসে চারটি বিমানবন্দর নির্দিষ্ট করে দিয়েছে অটোয়া। সেই সঙ্গে নিজ খরচে হোটেলে কোয়ারেন্টিনও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কানাডায় এসে পড়াশোনার পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন অথবা বাদ দিয়েছেন।
কলেজেজ অ্যান্ড ইনস্টিটিউটস কানাডার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিস অ্যামিওট বলেন, ২ হাজার ডলারের হোটেল বিল অনেক শিক্ষার্থীর সেমিস্টার খরচের অর্ধেক। অনেকেরই এতো অর্থ ব্যয়ের সামর্থ নেই। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যদি নিউ ব্রান্সউইকে যেতে চান তাহলে তাকে টরন্টোতে আসতে হবে। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের অংশ হিসেবে এরপর তাদেরকে তিনদিন হোটেলে কাটাতে হবে। এরপর তাদেরকে যেহেতু নতুন স্থানে যেতে হবে তাই নিউ ব্রান্সউইকে পৌঁছানোর পর আবারও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন করতে হবে। এর কোনো মানে হয় না। এর অর্থ হলো স্প্রিং ও সামারে আমরা বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী হারাবো।
অ্যামিওট বলেন, কানাডিয়ান কলেজগুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তুলনায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অঞ্চলভেদে এ হারে পার্থক্য আছে। তবে ছোট শহর এবং গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হ্রাস পাওয়ার হার তুলনামূলক বেশি।
এ অবস্থায় তিনদিনের হোটেল কোয়ারেন্টিন থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অব্যাহতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
কানাডায় প্রবেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের আগে থেকেই অবশ্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা পড়তির দিকে ছিল। স্ট্যাটিস্টিক্স কানাডার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে কানাডায় সাকল্যে ৬ লাখ ৩৯ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এলেও ২০২০ সালে তা ১৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার জনে।
কানাডার বিশ^বিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি গত বছরের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে জানান ইউনিভার্সিটিজ কানাডার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পল ডেভিডসন। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে কানাডার বিশ^বিদ্যালয়গুলোয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি ১০ শতাংশের বেশি হারে বাড়ছিল। এতে হঠাৎ পতন আমাদের জন্য একটা ধাক্কা। কানাডায় আমাদের ৯৬টি বিশ^বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫১টিতেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। ২৬টি বিশ^বিদ্যালয়ে আবার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কমেছে ১০ শতাংশেল বেশি হারে।
এর প্রভাব কী হতে পারে সে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন অ্যামিওট। তিনি বলেন, পোস্ট-সেকেন্ডারি স্কুলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ার অর্থ হলো ইনস্টিটিউশনগুলোর রাজস্ব আয় হ্রাস পাওয়া। শেষ পর্যন্ত এটা স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ তখন কম প্রোগ্রাম রাখা হয়। এটা শুধু ডলারের বিষয় নয়। ইঞ্জিনিয়ারিং ও মাইনিংয়ের মতো কিছু প্রোগ্রাম আছে যেগুলো স্থানীয় শিক্ষার্থীদের কাছে অতোটা না হঔের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে খুব জনপ্রিয়। পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষার্থী না থাকায় ইনস্টিটিউশনগুলো হয়তো এসব প্রোগ্রাম বন্ধ রাখবে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাসের ফলে কানাডার শ্রমবাজারেও একটা ঘাটতি তৈরি হবে বলে মনে করেন অ্যামিওট।
কানাডার অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কী ধরনের অবদান রাখেন সে ব্যাখ্যা দেন ডেভিডসন। তিনি বলেন, কিন্ডারকার্টেন থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কানাডার অর্থনীতিতে প্রতি বছর প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার জোগান দেয়। এ হিসাবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার একটা অর্থনৈতিক ক্ষতিও আছে।