২০২২ সালের এপ্রিলে হল্যান্ড আমেরিকার ভোলেন্ডামে চেপে বসা শত শত ইউক্রেনীয়র উদ্বিগ্ন মুখগুলো ভুলতে পারেননি ক্রুজ জাহাজটির কর্মী ক্যাপ্টেন রাকেশ প্রসাদ। রাশিয়ার অভিযান যুদ্ধে রূপ নেওয়ার পর দুই মাস আগে দেশ থেকে পালানো দেড় হাজার শরনার্থী তাদের সামান্য কিছু জিনিসপত্র প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে জাহাজে উঠে বসেন। পোর্ট অব রটারডামে জাহাজে উঠে পড়ার পর পরবর্তী ছয় মাস সেটাই ছিল পরবর্তী ছয় মাসের জন্য তাদের ঘর-বাড়ি।
৪ এপ্রিল পোর্ট অব মন্ট্রিয়লে জাহাজটি নোঙর করার পর ভোলেন্ডামের ইন্ডোর পুলের পাশে দাঁড়িয়ে প্রসাদ বলছিলেন, আপনি শিশুগুলোকে দেখে থাকবেন। তারা যে কতটা ভয়ার্ত ছিল সেটা আপনি বুঝে থাকতে পারেন। সেখানে আনন্দের কোনো বিষয় ছিল না।
ভোলেন্ডাম এখন ছুটি কাটাতে যাওয়া ভ্রমণকারীদের বহনের কাজে ফিরে এসেছে। ২০২৪ মৌসুমের প্রথম ক্রুজ শিপ হিসেবে নগরীতে এসেছে জাহাজটি। এটি উদযাপনে বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ইউক্রেন ও নেদারল্যান্ডসের কূটনীতিকরা।
পুল এরিয়া থেকে কয়েক মিটার দূরে ডাইনিং হলে ঢোকার পথে ভোলেন্ডামের কয়েকজন ক্রু সদস্য ২০২২ সালে জাহাজটিতে থাকা ইউক্রেনীয় শরনার্থী শিশুদের আঁকা বৃহৎ আকৃতির একটি ড্রয়িং টানিয়েছেন। শিল্পকর্মটি এখন জাহাজে স্থায়ী প্রদর্শনী হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
মন্ট্রিয়লে ইউক্রেনের কনসাল ইউজিন জোলিজ ছবির ফ্রেমটির দিকে নির্দেশ করে বলেন, শরনার্থীরা নিশ্চিতভাবেই খুবই বন্ধুভাবাপন্ন পরিবেশ পেয়েছিলেন। সহায়তার যখন জাহাজ থে জন্য ডাচ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ভোলেন্ডামের শরনার্থীরা জাহাজটিকে একখ- ইউক্রেনীয় গ্রামে পরিণত করেছিলেন। প্রসাদ বলেন, পরিবারগুলোকে বিনামূল্যে চুল কাটার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। বয়স্করা শিশুরা দেখাশোনা করেছিল। এটা একটি কমিউনিটি হয়ে উঠেছিল। অবশেষে যখন জাহাজ থেকে নামার সময় এল তখন বেশিরভাগই থেকে যেতে চেয়েছিলেন।
ভোলেন্ডামের ক্যাপ্টেন রেন্স ভ্যান আরটেনে বলেন, শরনার্থীদের সহিংসতা থেকে পালাতে সহায়তা করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে নেদারল্যান্ডসের। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময়ও দেশটি নাৎসিদের হাত থেকে লোকজনকে পালাতে সহায়তা করেছিল। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের কিছুদিন পরই ডাচ সরকার জাহাজটি ভাড়া করার জন্য ভোলেন্ডামের মালিক হল্যান্ড আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ করে।