চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি অন্যতম বিদ্যাপীঠ। এই সুদূর প্রবাসে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের স্মারক বহন করে চলেছে একঝাঁক তরুণ। এই তারুণ্যের কাছে হার মেনে নেয় বৈরী আবহাওয়া সহ সমস্ত প্রতিকূলতা। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪, শনিবারের সোনালী সন্ধ্যায় টরন্টো শহরের ‘স্কারবরো চাইনিজ কালচারাল সেন্টার’ মিলনায়তনে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অফ কানাডা ইনক্’ এর উপদেষ্টামন্ডলী, আঞ্চলিক প্রতিনিধি এবং কার্যকরি পরিষদের (২০২৩-২০২৫) অভিষেক এবং সদস্য সম্মাননা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও দুর-দূরান্ত শহর থেকে শিক্ষকমন্ডলী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি শুধু আবেগ আর অনুভূতি প্রকাশ এবং প্রিয় সংগঠনের প্রতি যে মমতা সেটা বারে বারে স্বাক্ষর রেখে যায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে। সবার শুরুতে প্রাক্তন সহ-সভাপতি সুধান রায় উপস্থিত সুধীমন্ডলীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ইজিএম আহবানের কারণ ও সিদ্ধান্ত সমুহ উল্লেখ করেন এবং সিদ্ধান্ত সমুহ ঘোষণা করার জন্য অধ্যাপক ডঃ শাহাদাত হোসেন কে অনুরোধ করেন। এই পর্বে এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ খান প্রাঞ্জলভাবে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন এবং সভায় সভাপতিত্ব করেন এসোসিয়েশনের সভাপতি শফিউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ ও কানাডার জাতীয় সংগীত এবং এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য্য “ল্যান্ড একনোলেজমেন্ট” পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তারপর নবগঠিত কার্যকরি পরিষদের সদস্যদের শপথ পাঠ করান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক ডঃ শাহাদাত হোসেন। তারপর তিনি উপদেষ্টা মন্ডলি এবং আঞ্চলিক কমিটির সকলকে মঞ্চে এনে পরিচয় করিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ডঃ সাইফুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল জাব্বার, অধ্যাপক ডঃ শাহাদাত হোসেন ও অধ্যাপক ডঃ সুজিত দত্ত কে সংগঠনের উত্তরীয় উপহারে ভূষিত করে সম্মাননা দেওয়া হয় এবং সাথে ছিল ফুলেল শ্রদ্ধা। এরপর ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অফ কানাডা ইনক্’ এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত সকল প্রাক্তন সভাপতি যথাক্রমে মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া, সমর পাল, বাহাউদ্দিন বাহার, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে সব্যসাচী চক্রবর্তী, বিনয় মজুমদার, কাজী জহির, তাপস ভট্টাচার্য্য, প্রাক্তন অর্থ সম্পাদক নাসির আহমেদ, সরওয়ার জামান, বিশ্বজিৎ পাল কে সম্মাননা দেওয়া হয় এবং উপস্থিত সুধিবৃন্দ তখন মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানান সকলকে। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে ডঃ সাইফুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল জাব্বার, আমিন মিয়া এডভাইজার, মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া ফাউন্ডার্স সভাপতি, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন ভিসি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইসি সিনিয়র সদস্য নাজমুল মুন্সী পূর্ববর্তী ইলেকশনের ঘটনার সংক্ষিপ বর্ণনা প্রদান করেন এবং অধ্যাপক ডঃ সুজিত দত্ত তাঁর মূল্যবান সমাপনী বক্তব্য রাখেন।
অর্থ সম্পাদক রাজীব ঘোষ ফিনান্সিয়াল অবস্থা এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সবাইকে অবগত করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক হামিদা বানু, শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক সৌরেন বিশ্বাস এবং এলামনাই ফরিদ আহমেদ সহ অন্যান্য যাঁদের হারিয়েছি আমরা তাঁদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল এলামনাই এসোসিয়েশনের সবুজ লগো সম্বলিত নেভি ব্লু টি-শার্ট।
চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আফরা গ্রুপের এমডি ও আমাদের এলামনাই সৈয়দ মারুফ হোসেন ৩৫০ টি টি-শার্ট প্রদানের মাধ্যমে এলামনাইদের অভিষিক্ত করেন এবং এই টি-শার্টের নেপথ্য কারিগর ছিল কার্যকরী কমিটির সদস্য সাইফউদ্দিন খালেদ সেলিম ও তাপস ভট্টাচার্য্য। পাশাপাশি এলামনাই সদস্যদের সাহায্যের মাধ্যমে পুরাতন কাপড় সংগ্রহ করা হয় ডোনেশনের জন্য। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন মুন্নার চমৎকার ডিজাইনের ব্যানার এবং সাথে ফুলের মঞ্চ যেন অনিন্দ্য সৌন্দর্য্য নিয়ে এসেছিলো সেই সন্ধ্যায়। অনুষ্ঠানকে সফল করার জন্য রায়টেক্ট ফেব্রিক্সে চট্টগ্রাম এর এম.ডি. তাপস রায় সহ সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সকল সদস্য, আজীবন সদস্য, উপদেষ্টা এবং সকল স্পন্সরদের অনুদানের জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয় মঞ্চে ও ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে এবং যার তত্ত্বাবধানে ছিল বিশ্বজিৎ পাল।
অবশেষে সাংস্কৃতিক সম্পাদক কাজী আবদুল বাসিত ও সহকারী সম্পাদক কানিজ ফাতেমার সাবলীল সঞ্চালনায় শুরু হয়েছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অনুপ সেন গুপ্ত, কানিজ ফাতিমা, কাজী আব্দুল বাসিত এর সমন্বয় সাধনে অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিলো এই পর্বে। অনুষ্ঠানের বিশেষ শিল্পীরা ছিলেন নৃত্যে অরুণা হায়দার ও তাঁর দল, সংগীতে মূর্ছনা নিয়ে আসেন অমিত শুভ্র রায়, রিফাত শান্তা, যন্ত্র সহযোগিতায় মোহনীয় সুর সৃষ্টি করেছিলেন রূপতনু শর্মা, রনি পালমার, সৌরভ ধ্রুব এবং আবির দাস খোকন। আর অনুষ্ঠানের মাঝে ছিল মজাদার নৈশ ভোজের সংযোগ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষকমন্ডলী, ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ এবং তাদের পরিবারবর্গ সহ প্রায় ৬৫০ জনের উপস্থিতিতে পুরো মিলনায়তনটি একেবারে কানায় কানায় ভরপুর, যেটা ছিল অভূতপূর্ব এবং দৃষ্টি নন্দন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।