স্কারবোরোর এক শিশুর নাস্তার খাবারে বিষ মেশানোর কথা স্বীকার করেছেন টরন্টোর এক ব্যক্তি। বিবাহিত এক নারীর বিরুদ্ধে চক্রান্তের অংশ হিসেবে ২০২১ সালে ওই অপকর্ম করেছিলেন তিনি।
টরন্টোতে অন্টারিও সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিসে বৃহস্পতিবার তিন বছর বয়সী বার্নিস নাতান্দা ওয়ামালার মৃত্যুর জন্য নিজের দোষ স্বীকার করেন ৪৭ বছর বয়সী ফ্রান্সিস এনগুগি। তিন বছর বয়সী আরেক শিশু সামারাহ সামিরকে হত্যার অভিযোগেরও মুখে রয়েছেন ওই ব্যক্তি।
২০২১ সালের ২১ মার্চ রাতে সামিরার বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকার সময় সোডিয়াম নাইট্রাইট খাওয়ার পর মৃত্যু হয় বার্নিসের। বিবৃতি অনুযায়ী, ওই শিশুটিকে হত্যা করা এনগুগির উদ্দেশ্য ছিল না। বরং সামারাহর মা জহরা ইসাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই খাবারে বিষ মিশিয়েছিলেন তিনি। এই ঘটনার কয়েক মাস আগে থেকেই ওই নারীর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন এনগুগি।
১৯ সেপ্টেম্বর আদালতের সামনে হাতে লেখা একটি বিবৃতি পাঠ করেন এনগুগি। সেখানে তিনি বলেন, আমি যা করেছি তা নিয়ে আমার কাছে বলার মতো কোনো ভাষা নেই। আমি একটি পরী, বার্নিসের জীবন কেড়ে নিয়েছি। এজন্য আমি সত্যিই খুব দুঃখিত।
২০১৯ সালে একটি বয়স্ক শিক্ষার স্কুলে ইসার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এনগুগির। এর কিছুদিন পরই তারা শরনার্থ হিসেবে কানাডায় চলে আসেন। ইসা তানজানিয়া এবং এনগুগি কেনিয়ার নাগরিক। ২০২০ সালে ইসা ও এনগুগির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সম্পর্কটি আর বেশি দূর এগিয়ে নিতে স্বীকৃত ছিলেন না ইসা। এজন্য তারন স্বামী ও বড় মেয়ের কানাডায় আসার কথা বলেন। এনগুগি এরপর ইসার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন।
২০২০ সালে আদালত জানতে পারে যে, এনগুগি একটি গোপন অডিও রেকর্ডার কিনে ইসার শয়নকক্ষে লুকিয়ে রাখেন। এর ফলে ইসার গোপন যোগাযোগ ও কথোপকথনগুলো তার অজান্তেই রেকর্ড হতে থাকে। এর ছয় মাস পর ফেব্রুয়ারির শেষ এবং মার্চের শুরুর দিকের কোনো এক সময়ে এনগুগি ইসার টরন্টোর বাড়িতে যান এবং খাবারের বক্সে সোডিয়াম নাইট্রাইট রেখে আসেন। স্কারবোরোর খাদ্য প্রস্তুতকারক প্ল্যান্ট গ্রিফিথস ফুডস থেকে এনগুগি রাসায়নিকটি চুরি করেন। সেখানেই তিনি তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতেন।
আদালতে দাখিল করা নথি অনুযায়ী, এনগুগিকে তার তত্ত্বাবধায়ক আগে এই বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, এক চা চামচের কম পরিমাণ সোডিয়াম নাইট্রাইটও এক ঘণ্টার মধ্যেই যে কারো মৃত্যুর কারণ হতে পারে। কিন্তু আদালতে তিনি বলেন, ওই খাদ্য শিশুগুলো খাক এটা তার উদ্দেশ্য ছিল না।
২০২১ সালের ৭ মার্চ ভোর ৫টার দিকে ইসা সোডিয়াম নাইট্রাইট মেশানো ওই খাবার সামারাহ এবং বার্নিসকে খাওয়ান। এর পরপরই বার্নিস গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তার প্রাণ বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুই দফা হার্ট অ্যটাাকের পর বেলা ২টা ১৬ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বার্নিসের মায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়।
বার্নিসের পর সামারাহর মধ্যেও একই লক্ষণ দেখা দেয়। তাকেও হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং চারদিনের চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে ওঠে সে। শিশুদের এই অসুস্থ্যতার পরপরই ইসা এনগুগিকে ডেকে পাঠান। দ্রুত তিনি কর্মক্ষেত্রে বাড়িতে আসেন এবং ইসার সঙ্গে হাসপাতালে থাকেন। পুরো সময়টাতে তিনি ইসা বা হাসপাতালকর্মীদের খাবারে সোডিয়াম নাইট্রাইট রেখে আসার বিষয়টি জানাননি।