সংসদীয় বিধিবিধান ভঙ্গ করে নিজের নির্বাচনী এলাকার অফিসে বোনকে চাকরি দিয়ে তিন বছরকালীন সরকারি তহবিল থেকে বেতন দেয়ায় টরন্টো ডন ভ্যালি ইস্ট আসনের সাবেক লিবারেল এমপি ইয়াসমিন রাতানসিকে ৯ হাজার ডলারের বেশি অর্থ ফেরত দিতে হচ্ছে। অভিযোগে প্রকাশ, এতে স্বয়ং ওই এমপি’র সাবেক কর্মচারিরা অভিযোগ এনে বলেছেন, তিনি বিষয়টা ধামাচাপা দেবার অপচেষ্টা চালিয়েছেন; কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, বরং ককাস ত্যাগের পরও তাকে অর্থদন্ড দিতে হচ্ছে।
কানাডার জাতীয় সংসদ তথা হাউজ অব কমন্সের অতি গোপন অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পর্ষদ, যা জাতীয় সংসদের যাবতীয় অর্থ ব্যয় পর্যবেক্ষণ করে, সেটি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ক্যামেরা মিটিংয়ে ওই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।
ওই পর্ষদের চেয়ারম্যান ও হাউজ অব কমন্সের স্পিকার অ্যান্থনি রোটা এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন যে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিন মাসের পর্যবেক্ষণটি শেষ হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাতানসি ‘চাকরিচ্যুতির আগ পর্যন্ত বোনকে সর্বসাকুল্যে ৯,৩৯১.২৭ ডলার বেতন দেয়ায় তা অবশ্যই তাকে ফেরত দিতে হবে।’ পাশাপাশি উল্লেখ করেছে, ‘রাতানসি ওই পর্যবেক্ষণে তেমন কোনো সহযোগিতা জোগাননি।’
এক্ষেত্রে ইস্যুকৃত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পর্ষদ জানিয়েছে, রাতানসি পর্ষদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণের অংশ হিসেবে লিখিত বক্তব্য দেবারও সুযোগ পেয়েছেন। পরিপ্রেক্ষিতে পর্ষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে নিজের বোনকে চাকরি দিয়ে রাতানসি নিকট পরিজনকে চাকরি না দেবার উপবিধিটি ভঙ্গ করেছেন।
যদিও রাতানসি ২০২০ সালের নভেম্বরেই লিবারেল ককাস ত্যাগ করে টরন্টো ডন ভ্যালি ইস্ট আসনে স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, সে কারণে সিবিসি গত বছরের সূচনায় মতামত জানতে চাইলে ফেসবুক পোস্টে রাতানসি লিখেছেন, বোনকে চাকরি দেবার ‘সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল’ এবং ‘পরিস্থিতির প্রায়শ্চিত্তে’ নিজেই দলের ককাস ত্যাগ করেছেন। তবে সোমবার বিলম্বে দেয়া এক বিবৃতিতে রাতানসি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, নৈতিক কমিটিতে তার তদন্ত চলাকালীন পর্ষদ নিজেই সিদ্ধান্তটি দিয়েছে। তার কথা, ‘অতীতে [পর্ষদ] কখনো অনুরূপ হস্তক্ষেপ কিংবা হুবহু তৎপরতা চালায়নি, যেখানে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংঘাত ও নৈতিক কমিশনার নিয়োজিত।’ আরও বলেছেন, ‘আমি অনুরোধ জানিয়েছি অন্যদের বেলায় যেমন সৌজন্যতা দেখানো হয়েছে, তার বেলাতেও তেমনটি যেন দেখানো হয়। এখানে সহযোগিতা বা অসহযোগিতার কোনো কমতি ঘটেনি, বরং নিরপেক্ষতা ও শ্রদ্ধাশীল পদ্ধতির অনুসরণ প্রত্যাশিত ছিল।’
রাতানসির বেশ কিছু সাবেক কর্মচারি সিবিসি-কে জানিয়েছেন যে, তিনি তার বোনকে কমপক্ষে ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল অবধি সময়ে নিয়োগ দিয়েছেন এবং পরে আবারও ২০১৭ সালে তাকে নিয়োগ দেন, যখন সংসদীয় বিধিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যে কোনো এমপি’র জন্য ভাই-বোনকে চাকরি দেয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়।
হাউজ অব কমন্সের তথ্যানুসারে সাধারণত এমপি’র জন্য নিজস্ব বাজেট থাকে এবং সেখান থেকে বছরে সর্বোচ্চ ৮৯ হাজার ৭০০ ডলার পর্যন্ত নির্বাচনি আসনের দপ্তরে কর্মরত একজন সহকারিকে বেতন দেয়া যায়। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, রাতানসি সম্ভবত তিন বছরে নিজের বোনকে ২ লাখ ৬৯ হাজার ১০০ ডলার বেতন দিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি থেকে স্পিকার বরাবরে চিঠি দিয়ে রাতানসির বিরুদ্ধে ‘যথোপযুক্ত পদক্ষেপ’ নিতে অনুরোধের পাশাপাশি তার পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। এই ঘটনাকে কনজারভেটিভ এমপি মাইকেল বেরেট ‘লিবারেলের আরেক লাগাতার বেপরোয়া আচরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
অবশ্য গত বছর ১০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো রাতানসির আচরণকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি তার অফিস ব্যবস্থাপনায় ‘গভীরভাবে আহত’।