গতবছর আমরা পয়তাল্লিশ জন নারী মিলে বৈশাখ পালন করেছিলাম। এবছরও গত ১৬ এপ্রিল অনেক হৈচৈ আর আনন্দ করে আমরা মেয়েরা একসাথে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করলাম। প্রায় চল্লিশজন অংশগ্রহণ করেছিলাম এই আয়োজনে।
গতবছর আমরা কোন নাম বা ব্যানার করিনি। এবার আমরা আমাদের গ্রুপের একটা নাম নির্ধারণ করে অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সবাই মিলে ঠিক করলাম আমাদের গ্রুপের নাম রাখা হবে অনেকবর্ণা। এই নামকরণের ব্যাখ্যাটা হলো – এখানে সব ধর্মের এবং বর্ণের বাঙালি নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। সবাই একসাথে হয়ে নিজেদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখার প্রত্যাশাতেই আমাদের এই অনুষ্ঠান।
সকাল এগারোটায় আমরা কয়েকজন গিয়ে গোছগাছ শুরু করি ফাইভ মেসি পার্টি হলে। এক এক করে সবার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে বৈশাখি আমেজ সবার মাঝে ছড়িয়ে পরতে শুরু করে। প্রথমে শিপ্রাদি, সাইদাবারী আপু, ববিতাদি, বিন্ধুদি, ভ্যালেন্টিনাসহ সবাই সাজাতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। সবাই হাতে হাত মিলিয়ে সাজানো সম্পন্ন করলেন। এরই মাঝে অপুর আনা সিঙ্গারা পেয়ে আনন্দে সবার মন নেচে উঠলো। অনেক কষ্ট করে করবী মৈত্র বয়ে নিয়ে এসেছিলেন সফট ড্রিংস।
তারপর মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে আমরা অনুষ্ঠান শুরু করলাম। এরপরে পরিচিত পর্ব হলো। সবাই সবার পরিচয় জানালেন। ফটোসেশান হলো। সবাই সবার ইচ্ছেমতো প্রাণখুলে ফটোসেশান করলেন। বাঙালি খাবার দিয়ে থালা সাজানো হয়েছিল। সাথে পান সুপাড়িও ছিল। দুপুরের খাবার ছিল ষোলআনা বাঙালি খাবার।
সাথে প্রতিমাদির বানানো দই আর অনেক গুণে গুণান্বিতা ববিতাদির বানানো মিষ্টি – রসগোল্লা যার নাম। সাথে মনিষাদির বানানো পাটিসাপটা। আরও ছিল চিড়ামুরি, নাড়ু মোওয়া এবং অনেক অনেক পিঠাপুলি।
দুপুরের খাওয়ার পর ছিল খেলা প্রতিযোগিতা। দিদিরা খেলায় অংশগ্রহণ করে অনেকেই পুরস্কার জিতে নিলেন। এরপর গান গেয়ে শোনালেন দিদিরা। পারমিতার নাচ দেখে সবাই খুব খুব আনন্দ করলাম। পারমিতার নাচ দেখে মুগ্ধ হয়ে সাইদা আপু ওকে পুরস্কৃতও করলেন।
এবার আমাদের সাথে অনেক নতুন মুখ আসায় আমরা খুব খুশি। নাচে গানে হাসি আড্ডায় আমাদের বৈশাখী অনুষ্ঠান জমে উঠেছিল। আমাদের এই অনুষ্ঠানের প্রধান প্রাপ্তি ছিল দীপিকাদির বাণী। ১৬ এপ্রিল সকালে তিনি যখন অনুষ্ঠানের উদ্দেশে আসছিলেন তখন নাকি মনে হচ্ছিল তিনি বাপের বাড়ি আসছেন। বাপের বাড়িতে এলে মেয়েদের যে বন্ধনমুক্তির মতো একটা ব্যাপার থাকে দীপিকার নাকি তেমনটিই মনে হচ্ছিল। দীপিকাদির এই কথাই আমাদের অনুষ্ঠানের জন্যে ছিল বিশাল এক প্রাপ্তি।
আমরা যারা এই অনুষ্ঠান করলাম তারা হলেন পূর্ণিমা মজুমদার, অপু সাহা, শিপ্রা চৌধুরী, করবী মৈত্র, সুমি বর্মন, সুবর্না দে, লিমন রায়, নিঝুম মুখার্জি, মল্লিকা চৌধুরী, ববিতা সেন, শাশ্বতী দত্তবোস, সঙ্গীতা দত্ত ভট্টাচার্য, ভ্যালেন্টিনা ভৌমিক, অর্চনা দত্ত, পারমিতা তিন্নি, অশ্রু চৌধুরী, রিংকু বিশ্বাস, মীনাক্ষী দত্ত চক্রবর্তী, মনিষা দাস, তাসলিমা জামাল শিমু, ফারজানা চৌধুরী বিন্দু, শেখ নাহার ইতি, আজমেরি সুলতানা, সোমা চক্রবর্তী, অনিমা রায়, ঝুম্পা চক্রবর্তী, শম্পা পারিয়াল, মৌসুমি পারিয়াল, সঙ্গীতা মুখার্জি, সাইদা বারী, দীপিকা ঘোষ, স্বপ্না দাস, রূপালী দে, প্রতিমা সরকার এবং আমি নীলিমা দত্ত। ঈশানী চক্রবর্তী চাঁদা দিয়েছিলেন আসবেন বলে। কিন্তু অন্যবিধ অসুবিধার কারণে পারলেন না। ওকে মিস করেছি সবাই।
আমাদের অনুষ্ঠানকে সফল করতে যে সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পাশে ছিলেন তারা হলেন বারো মাস ক্লদিং, তরুনী কালেকশন, সোমা’স কালেকশন, মৃন্ময়ী এবং সঙ্গীতা উর্মী।
প্রতিমাদির অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় আমরা এই অনুষ্ঠান করতে পেরেছি। তাঁকে অনেক অনেক ভালোবাসা। সেই সাথে সকল দিদিকে অনেকবর্ণায় অংশগ্রহণের জন্য জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ।