বাঙালির নতুন বছর ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে বরণ করতে গত ১৫ এপ্রিল শনিবার বিপুলসংখ্যক বাঙালি সমবেত হয়েছিলেন টরন্টোর বাংলা টাউন এলাকায়। ডেন্টোনিয়া পার্কে অবস্থিত শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বিপুল সংখ্যক বাঙালি রঙিন পোশাকে সজ্জিত হয়ে বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন প্রতীক হাতে নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজাতে বাজাতে মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর জন্য মঙ্গল কামনা করেছেন।
পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ নববর্ষের দিন আবহাওয়া উষ্ণ থাকায় বৃহত্তর টরন্টো ছাড়াও আশপাশের শহর থেকে বাঙালিরা সমবেত হতে শুরু করেন বাংলা টাউন এলাকায়। প্রথমে শহীদ মিনার চত্বরে পহেলা বৈশাখের গান তারা সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করতে থাকেন। সাথে কাউকে কাউকে নৃত্যেও অংশ নিতে দেখা যায়। ডেন্টোনিয়া পার্ক থেকে শোভাযাত্রা ক্রমে ক্রমে এগিয়ে যায় শপার্স ড্রাগমার্ট পার্কিং লটের দিকে। সেখানে সমবেত বাকিদেরকে সাথে নিয়ে শোভাযাত্রা এগিয়ে যায় বাংলা পাড়ার ভেতর দিয়ে ডজ রোডের দিকে। পাঁচ শতাধিক বাঙালির বর্ণিল এই শোভাযাত্রা শেষ হয় বাঙালির প্রাণের শহীদ মিনারে। সেখানে সমবেত উপস্থিতি বিপুল উদ্দীপনা এবং সংগীতের মাধ্যমে তাঁদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিশেষভাবে চোখে পড়েছে বিচেস-ইস্ট ইয়র্ক এবং স্কারবরো সাউথ ওয়েস্টের দুই কাউন্সিলর ব্র্যাড ব্রাডফোর্ড এবং গ্যারি ক্রোফোর্ডের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি। অবাঙালি এই দুই রাজনীতিক পুরো সময় জুড়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় সাথে থাকেন এবং সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
টরন্টোতে মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরু হয় প্রায় এক দশ আগে। এ প্রসঙ্গে বর্তমান প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ মানুষ শিবু চৌধুরী বলেন যে, বাংলাদেশ কানাডা হিন্দু মন্দিরের পক্ষ থেকে ২০১২ সালে প্রথমবার জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যদিও পরের তিন চার বছর ধরে মঙ্গল শোভাযাত্রার আহবানে করতে দেখা গিয়েছিল কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনকেও। ২০১৫ সালে কমিউনিটির কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মী বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন যাতে একটি সম্মিলিত মঙ্গল শোভাযাত্রায় সবাই সম্পৃক্ত হতে পারেন। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৬ সাল থেকে শুধু একটি মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে।
কমিউনিটির বিশিষ্ট জনেরা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই বাঙালিরা ডাউট টাউনে নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করতে পারবেন। সেখানে বাঙালি সংস্কৃতিকে মূলধারার মানুষদের সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম হবেন তারা।
কমিউনিটির প্রাধান টেলিভিশন চ্যানেল এনআরবি টিভি মঙ্গল শোভাযাত্রার পুরো আয়োজনটিকে ধারণ করে প্রচার করেছে। কমিউনিটির পরিচিত মুখ বিশিষ্ট একাউন্টেন্ট মোর্শেদ নিজাম সিপিএ এই প্রচারের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে বঙ্গাব্দ ১৪০০ বছরের বেশি পুরনো হলেও মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ১৯৮৯ সালে। ঢাকা শহরে শুরু হতেই এই মঙ্গল শোভাযাত্রা এতই জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় যে তা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের জেলা শহরগুলো থেকে উপজেলা শহরেও। মঙ্গল শোভাযাত্রার নান্দনিকতা এবং মঙ্গল চেতনা এত বেশি করে বিশ্ববাসীর নজরে এসেছিল যে ২০১৬ সালে ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। অত্যন্ত আনন্দের এই যে ২০১৭ সাল থেকে পশ্চিমবাংলার শহর কলকাতা এবং অন্যান্য শহরেও মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন হতে দেখা যায়।