গত একুশে অক্টোবর শনিবার শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমীর শুভসন্ধ্যায় অসংখ্য দর্শকের উপস্থিতিতে টরন্টোর হিন্দু ধর্মাশ্রম সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকার সম্পাদক এবং এনআরবি টেলিভিশনের সিইও শহিদুল ইসলাম মিন্টুকে তাঁর নিষ্ঠা ও অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গবেষক সুজিত কুসুম পালের পরিচালনায় এই সম্মাননা পর্বে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুব্রত কুমার দাস।
উল্লেখ করা যেতে পারে, বর্তমান বছর কানাডায় দুর্গাপূজার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই উপলক্ষে কানাডার সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা সাপ্তাহিক বাংলামেইল এক অসাধারণ উদ্যোগ নিয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রকাশ করেছে একটি বিশেষ শারদ সংখ্যা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসবের সুবর্ণ জয়ন্তীতে জনপ্রিয় এই পত্রিকার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টুর এই প্রয়াস একটি ঐতিহাসিক এবং প্রশংসনীয় উদ্যোগ। উল্লেখ করা যেতে পারে শারদ সংখ্যার অতিথি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন সুব্রত কুমার দাস। বলে রাখা যেতে পারে যে, কানাডার প্রথম চব্বিশ ঘণ্টার চ্যানেল এনআরবি পূজার আগে তিনদিন ধরে সুব্রত কুমার দাসের উদ্যোগ ও পরিচালনায় শারদ আনন্দ অনুষ্ঠান প্রচার করেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৭ সাল থেকে কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলের শারদীয় উৎসবের অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে আসছে এনআরবি। গতবছরও টেলিভিশন চ্যানেলটি টরন্টো ও আশপাশের শহরগুলোর নন্দিত শিল্পীদের নিয়ে শারদ আনন্দ অনুষ্ঠান প্রচার করেছিল। এরপর এনআরবি কর্তৃপক্ষ টরন্টোর একটি উপাসনালয়ে শারদীয় উৎসব উদযাপনে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে বিজয়া পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে বাংলামেইল পত্রিকার শারদ সংখ্যার অতিথি সম্পাদক লেখক গবেষক ও টিভি উপস্থাপক সুব্রত কুমার দাস তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যাঁরা ভালো কাজ করেন তাঁদের প্রশংসা করলে, সমাজের অন্যরাও ভালো কাজে এগিয়ে আসবেন এবং যারা মন্দ কাজ করেন তারা আর মন্দ কাজ করার সাহস পাবেন না। সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টুর অসাম্প্রদায়িক সাংবাদিকতার স্বীকৃতি প্রদানে এগিয়ে আসায় তিনি হিন্দু ধর্মাশ্রম কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেন।
সম্মাননা পর্বে মঞ্চে উপস্থিত থাকার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিশেষ শারদ সংখ্যার সকল লেখককে। টরন্টো ও নিকটবর্তী শহরগুলোর যে লেখকেরা উপস্থিত হতে পেরেছিলেন তাঁর হলেন ড. দিলীপ চক্রবর্তী, সুজিত কুসুম পাল, শেখর ই গোমেজ, অসীম ভৌমিক, ঋতুশ্রী ঘোষ, রেশমা মজুমদার শম্পা, রোমেনা হক রুমা, দেবাঞ্জনা মুখার্জি ভৌমিক, নাসিমা আকতার মিতা, আশীষ রায়।
শহিদুল ইসলাম মিন্টুর হাতে সম্মাননার ক্রেস্টটি তুলে দেন হিন্দু ধর্মাশ্রমের সভাপতি কাজল পাল এবং এরপর তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক চিত্ত ভৌমিক। সম্মাননার জবাবে শহিদুল ইসলাম মিন্টু জোর দিয়ে উল্লেখ করেন এনআরবি টেলিভিশিন এবং সাপ্তাহিক বাংলামেইল একশতভাগ অসাপ্রদায়িক প্রতিষ্ঠান। তিনি দুর্গাপূজা উপলক্ষে এই দুই মিডিয়ার উদ্যোগের ব্যাপারে সুব্রত কুমার দাসের ভূমিকার কথা দার্ঢ্যকণ্ঠে স্বীকার করেন। সম্মাননা প্রদানের জন্য তিনি হিন্দু ধর্মাশ্রম কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ করা যেতে একই মঞ্চে সেদিন হিন্দু ধর্মাশ্রম থেকে প্রকাশিত বার্ষিক সাহিত্য পত্রিকা নীলকমল-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পত্রিকাটির বর্তমান সংখ্যার উপস্থিত লেখকদের সাথে নিয়ে মোড়ক উন্মোচন করেন কমিউনিটির প্রিয় মুখ পণ্ডিতজন ড. দিলীপ চক্রবর্তী। তিনি পত্রিকার মানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সুজিত কুসুম পাল, ড. অরুণ ভৌমিক ও আশীষ রায়ের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
নীলকমল পত্রিকার সম্পাদক সুজিত কুসুম পাল উপস্থিত দর্শকদের মাঝে নীলকমল পত্রিকার মর্যাদা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন এবং ধর্মীয় সংগঠন থেকে প্রকাশিত হয়েও নীলকমল যে একটি পূর্ণাঙ্গ সাহিত্য পত্রিকা সেই বক্তব্য স্পষ্ট করে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পত্রিকার সম্পাদকীয় কলামে দুর্গাদেবীর বন্দনা না থাকার কারণে অনেক ভক্ত অসন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রকৃতপক্ষে, স্মরণিকায় দেবী-বন্দনার অবকাশ থাকলেও, সাহিত্য পত্রিকায় ভক্তিযোগের পরিবর্তে জ্ঞানযোগের চর্চা করা হয়। এখানে লিটার্যারি লাইন ও মাইথোলজিক্যাল লাইন দিয়ে ইন্টারসেকশন তৈরি করা হয়। তারপর, ‘ইমাজিনেশন’ নামের বাহনে চড়ে সেই ইন্টারসেকশনে পৌছার আগে ব্লাইন্ড স্পটে যেই দর্শনটি পাওয়া যায় তাঁকে কেন্দ্র করেই সম্পাদকীয় কলাম নির্মাণ করা হয়।‘ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পত্রিকাটির বর্তমান সংখ্যার সম্পাদকীয় কলামে রয়েছে শেক্সপীয়রের ‘ম্যাকবেথ’, মাইকেলের ‘মেঘনাদবধ’, মিলটনের ‘প্যারাডাইস লস্ট’ এবং ভারতীয় পুরাণের রেফারেন্স।‘ অনুষ্ঠানে লেখকদের পক্ষ থেকে কথা বলেন, বিশিষ্ট বাচনিক শিল্পী শেখর গোমেজ। তিনি উপস্থিত দর্শকদের এই সাহিত্য পত্রিকাটি পাঠ করার আহবান জানান।