বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
3.6 C
Toronto

Latest Posts

‘আনকভার দ্য ট্রুথ’

- Advertisement -
জাস্টিন ট্রুডো ও নরেন্দ্র মোদী

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি ও কানাডার রাজধানী অটোয়ায় নিয়োজিত দুই প্রতিভাধর সাংবাদিক জুলিয়ান বার্নেস ও ইয়ান অস্টেন এই ঘোমর উন্মোচন করেছেন। ওই সংবাদটি যথারীতি স্থান পেয়েছে বহুল প্রচারিত নিউইয়র্ক টাইমসে ২৩ সেপ্টেম্বর। এতে তাদের পরিবেশিত সংবাদের শিরোনাম ও উপ-শিরোনামই বিষয়টিকে যথেষ্ট খোলাসা করেছে। সেখানে বলা হয়েছে- ‘ইউএস প্রোভাইডেড কানাডা উইদ ইন্টেলিজেন্স অন কিলিং অব শিখ লিডার। আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স গেভ অ্যাসিসটেন্স, বাট কমিউনিকেশনস ইন্টারসেপ্টেড বাই কানাডা ওয়্যার মোর ডেভিনেটিভ ইন লিংকিং ইন্ডিয়া টু দ্য কিলিং অব হারদীপ সিং নিজ্জার।’ অর্থাৎ শিখ নেতা হত্যায় যুক্তরাষ্ট্র কানাডাকে বুদ্ধিবৃত্তি জুগিয়েছে। আমেরিকার গোয়েন্দারা সহযোগিতা করেছে, কিন্তু হারদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় কানাডা কর্তৃক পারস্পরিক যোগাযোগ অর্ন্তভেদে নিশ্চিত হওয়া গেছে ভারতের যোগসাজশ।

একইভাবে ওই সংবাদ প্রকাশের আগের দিন কানাডার সিটিভি-কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে কানাডায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডেভিড কোহেন বলেছেন, ভারত সরকার কর্তৃক কানাডিয়ান নাগরিক হত্যায় সম্ভাব্য সম্পৃক্তি পাওয়া ও জনসমক্ষে তা তুলে ধরায় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে তথ্য জুগিয়েছে ‘ফাইভ আইজ পার্টনার্স’। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সমন্বয়ে গঠিত গোয়েন্দাবৃত্ত ‘ফাইভ আইজ’।
এই ‘সম্ভাব্য সম্পৃক্তি’র ক্ষেত্রে আরও যে তথ্য উন্মোচিত হয়েছে, তাতে পশ্চিমা জোটসূত্রকে উদ্ধৃত করে বর্ণিত যে, ভ্যাঙ্কুভারের সারে এলাকার গুরুদুয়ারার পার্কিং লটে গত ১৮ জুন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হত্যার পর আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা অটোয়াকে তাৎক্ষণিক ‘ডিউটি টু ওয়ার্ন’ দায়বদ্ধতায় তথ্য প্রদান করেছে, কিন্তু কানাডা সম্ভাব্য বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্ভাবণ ঘটিয়েছে যাতে ভারত কর্তৃক তা সংঘটিত হওয়ার আলামত পাওয়া গেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কানাডিয়ান প্রতিপক্ষকে হত্যার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছে, যা ভারতের সম্পৃক্তি বিষয়ে কানাডাকে সিদ্ধান্তে উপণীত হতে সাহায্য করেছে। তবুও হত্যাকান্ডের পরিকল্পনায় ভারতের কূটনীতিকদের সংযোগ অর্ন্তভেদমূলক সেই উপযোগ ‘ধোয়াশা’ থেকে গেছে।

- Advertisement -

একই সময়ে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদে কানাডার দৈনিক ন্যাশনাল পোস্ট জানিয়েছে, জনসমক্ষে জাস্টিন ট্রুডো ওই অভিযোগ উত্থাপনের বহু আগেই কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ ভারত সরকারকে প্রমাণস্বরূপ অর্ন্তভেদী সংযোগের বিষয়বস্তু ও ফোন নম্বর প্রদান করেছে, যা ওই শিখ নেতা হত্যায় ভারতীয় প্রতিনিধিদের যোগসাজশকে উন্মোচন করেছে। অথচ ভারত তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানিয়েছে; এমনকী ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেই অভিযোগকে পাত্তাই দেয়নি। বরং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কানাডার মাটিতে ভারতীয় সহিংতার অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এতে প্রমাণবিহীন অভিযোগে খালিস্তানী সন্ত্রাসীদের প্রতি দৃষ্টি এড়ানোর কৌশল, যেখানে কানাডা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে ভারতীয় অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। পাশাপাশি এই দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগ তথৈবচ থেকে গেছে। উপরন্তু কানাডার রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ট্রুডোর ওই অভিযোগ উত্থাপনের অনেক আগেই তদন্তের স্বার্থে ভারত সরকারের সহযোগিতা কামনা করে ভারত সফরও করেছেন।

তথাপি ভারতের বিরুদ্ধে কানাডা কর্তৃক উদ্ভাবিত ওই ‘ক্রেডিবল’ বা বিশ্বাসযোগ্য বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়াবলীর ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য’ প্রকাশে জাস্টিন ট্রুডো ও কানাডিয়ান কর্তা ব্যক্তিরা বিশদ জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) কর্তৃক হত্যা বিষয়ক তদন্তের বিস্তারিত জানানোটা হবে আপোসকামীতার শামিল। তবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকালীন জাস্টিন ট্রুডো সাংবাদিকদের বলেছেন, কানাডা ভারতের সঙ্গে কোনো উত্তেজনা কিংবা সমস্যা তৈরিতে ইচ্ছুক নয়, বরং ‘আনকভার দ্য ট্রুথ’ বা হত্যা সংক্রান্ত সত্য উদঘাটনে আগ্রহী। পাশাপাশি উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, এটা কোনো ভূরাজনৈতিক বিষয় নয়। এটা কানাডা ও কানাডার নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং আইনের শাসন সংক্রান্ত বিষয়।

তবে কানাডার জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিবিসি ও যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকা জানিয়েছে, এই হত্যা সংক্রান্ত প্রমাণ কানাডার কাছে রয়েছে, যেখানে ভারতীয় কূটনীতিক সম্পৃক্ত, যা সংগ্রহে কয়েক মাস সময় লেগেছে। তাতে একাধিক গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে, কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেগুলোর সত্যতা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন তোলেননি।

এই পারস্পরিক প্রেক্ষাপটে জনসমক্ষে অর্থাৎ কানাডার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগ উত্থাপণের পর পরই যা ঘটেছে, তা হলো- প্রথমে কানাডা তার দেশটিতে নিয়োজিত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কূটনীতিককে বহিস্কার করেছে এবং পাল্টা জবাবে ভারতও তার দেশে নিয়োজিত কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কূটনীতিককে বহিস্কার করেছে। পাশাপাশি বাড়তি হিসেবে ভারত কানাডাসহ বর্হিবিশ্বে কানাডিয়ান নাগরিকদের ভ্রমণের জন্য ভারতীয় ভিসা প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ তার আগেই ভারতে সদ্য সমাপ্ত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকালীন কানাডা-ভারত বাণিজ্য বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৮ লাখ ৮০ হাজারের মাঝে ৩ লাখ ৮০ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী বর্তমানে কানাডায় শিক্ষা অর্জনসহ স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাসের প্রত্যাশায় উন্মুখ হয়ে আছে। অন্যদিকে কানাডার জনসংখ্যার ২ শতাংশের বেশি অর্থাৎ ৭ লাখ ৭০ হাজার শিখদের স্থায়ী বসবাস কানাডায়, যাদের অধিকাংশকেই ভারত খালিস্তানী বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে থাকে।

এসব সত্ত্বেও যা সর্বাধিক বিবেচ্য তা হলো- যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন কোনো প্রকার কূটনীতিক ব্যত্যয় ছাড়াই কানাডাকে এ তদন্ত কাজে সহযোগিতার জন্য ভারতকে তাগিদ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ওই ‘ফাইভ আইজ’ভুক্ত দেশগুলোও তাদের গভীর উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছে। তবে তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের কানাডাকে এই হত্যা সংক্রান্ত বুদ্ধিবৃত্তি প্রদান অলিখিতভাবে এক অর্থে চলমান বা বিদ্যমান কানাডা-ভারত সম্পর্কে অনেকটাই ওয়াশিংটনকে কূটনীতিক ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে নানাভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিহত করতে ভারতকে কাছে পেতে চাইছিল।

- Advertisement -

Latest Posts

Don't Miss

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.