ব্যবহার না করলেও কোভ্যাক্স থেকে কানাডা ভ্যাকসিন গ্রহণ করায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ভ্যাকসিন অন্টারিওর ওয়্যারহাউজের ফ্রিজারে রেখে দিয়েছে কানাডা। তাই এই ভ্যাকসিন কোভ্যাক্সের কাছে ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কানাডিয়ান প্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভ্যাক্স উদ্যোগের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৬ লাখ ৫৫ হাজার ডোজের বেশি ভ্যাকসিন কানাডায় পৌঁছেছে। যদিও সরবরাহ ইস্যু ও রক্ত জমাট বাধার সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে অধিকাংশ প্রদেশই ভ্যাকসিনটির প্রয়োগ আপাতত বন্ধ রেখেছে।
এই প্রথম কানাডায় ভ্যাকসিন পৌঁছলেও তাৎক্ষণিকভাবে তা বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়নি। কারণ, অটোয়া এখন পর্যন্ত জানেই না যে, কারা এগুলো চাইছে।
বৃহস্পতিবার ভ্যাকসিন বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল ড্যানি ফর্টিন বলেন, প্রদেশগুলো কিভাবে ও কখন এগুলো চায় সে অনুযায়ী তারা এর পুরোটাই নিতে পারে এবং আমরা সে অনুযায়ী সরবরাহ করব। সেজন্য কয়েক সপ্তাহ আমরা এগুলো নিজেদের কাছে রেখে দিচ্ছি।
৮ মে পর্যন্ত ২১ লাখ ৬০ হাজার কানাডিয়ানকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এখনও যারা প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন নেননি তাদের জন্য ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার পর্যাপ্ত ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা থাকায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনগুলো কেবলমাত্রা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তবে তা নিয়েও সংশয় আছে। কারণ, ভ্যাকসিশন মিশ্রণ নিয়ে যুক্তরাজ্যে গবেষণা চলছে এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ফাইজার বা মডার্নার ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে বলেও ইঙ্গিত মিলছে। গবেষণার প্রাথমিক উপাত্তে এটা নিরাপদ বলে প্রমাণ পাওয়া গেলেও কতটা কার্যকর সেটা এখনও জানা যায়নি। সেজন্য জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
মজুদ করলেও কোভ্যাক্স থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন গ্রহণের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্যাটি হাইডু। কারণ, দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে প্রদেশগুলো যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ব্যবহার করবে না সে-সম্পর্কিত সুস্পষ্ট কোনো বার্তা এখনও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, নিবিড়ভাবে আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি এবং আমার মত হচ্ছে, যে ভ্যাকসিনই হোক কোনোটাই অপচয় হবে না।
তবে প্রদেশগুলো এখনই চাইছে না এমন ভ্যাকসিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মন্ত্রিসভার জন্য একটি পরামর্শ তিনি প্রস্তুত করছেন বলে জানান ফর্টিন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
কানাডার এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন টরন্টোর ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ইরফান ঢালা। তিনি বলেন, ভারত ও বিশে^র অন্যান্য দেশে যখন হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন এবং ভ্যাকসিনের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন তখন অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ফ্রিজারে আবদ্ধ রাখাটা কোনোমতেই উচিত নয়।
জি-৭ভুক্ত একমাত্র দেশ হিসেবে কোভ্যাক্স থেকে ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণেও সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে কানাডাকে। কারণ, নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো যাতে ভ্যাকসিন পায় সে লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ। এ অবস্থায় কোভ্যাক্স থেকে নেওয়া ভ্যাকসিন ফিরিয়ে দিতে কানাডার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এনডিপির হেলথ ক্রিটিক ডন ডেভিস।
একই অভিমত দিয়েছেন বৈশি^ক গবেষণা সংস্থা সিআইএফএআর-এর প্রেসিডেন্ট কানাডার ন্যাশনাল ভ্যাকসিন টাস্কফোর্সের সদস্য ডা. অ্যালান বার্নস্টেইনও। তিনি বলেছেন, ভ্যাকসিন মিশ্রণের উপাত্ত আসার আগেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে পর্যন্ত আমরা যদি অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ব্যবহার না করি তাহলে দ্রুত সেগুলো কোভ্যাক্সের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।