গত ২০ মে শনিবার জাকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলো কানাডার বাংলাদেশি কমিউনিটির সর্ববৃহৎ ইনডোর ইভেন্ট ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল। বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে হাজারেরও বেশি দর্শকের উপচে পড়া ভিড় ছিলো বরাবরের মতোই। অনুষ্ঠানের চারদিন আগেই টিকেট ফুরিয়ে যায়। পুরো শহর জুড়ে চলে একধরনের আনন্দময় উত্তেজনা। অবশেষে ২০ মে সন্ধ্যা ৬টায় মিলনায়তন ভরা দর্শকের উপস্থিতিতে শুরু হয় ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল-এর আয়োজন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই এনআরবি টিভির দুই জনপ্রিয় মুখ অজন্তা চৌধুরী এবং শ্রীজিৎ চৌধুরী আন্তরিকতার সাথে উপস্থিত দর্শকদের সাদর আমন্ত্রণ জানান। বিপুল করতালির মাধ্যমে শুরু হয় আয়োজন। শুরুতেই মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয় “ল্যান্ড একনোলেজমেন্ট ” এর জন্য পরবর্তী প্রজন্মের একজন নির্জলা প্রিয়দর্শিনীকে। এর পরে পিনপতন নীরবতায় কানাডা ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বেজে উঠে এবং এ সময় উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। অজন্তা চৌধুরী এবং শ্রীজিৎ চৌধুরীর সঞ্চালনায় ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কানাডাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের মান্যবর হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান, কাউন্সিলর ব্রাড ব্রাডফোর্ড, টরন্টো পুলিশের সাউথ এশিয়ান লিয়াজো অফিসার হারুন সিদ্দিকী, এসি প্রপার্টিজ এন্ড হোম মেইনট্যানেন্স এর সিইও আনিকা চৌধুরী, বিশিষ্ট রিয়েলটর মোহাম্মদ সুরুজ্জামান, বিশিষ্ট রিয়েলটর আব্দুল আউয়াল, ওকপার্ক মর্টগেজ গ্রুপের ফাহিম খান, বিশিষ্ট রিয়েলটর রনি হায়দার, বিশিষ্ট ফাইন্যান্সিয়াল এ্যাডভাইজার জিসান আলী, ব্যারিস্টার ওমর হাসান আল জাহিদ, বিশিষ্ট রিয়েলটর ফারাহ খান, কানাডা ন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন ইনকের সিইও মোহাম্মদ হাসান, মর্টগেজ এজেন্ট আনিসুর রহমান, ইমিগ্রেশন কনস্যালট্যান্ট তানভীর নাওয়াজ, ব্যারিস্টার আরিফ হোসেন, এনআরবি টিভির পরিচালক ইউসুফ শেখ, বাংলামেইলের নির্বাহী সম্পাদক ও এনআরবি টিভির পরিচালক কাজী আলম বাবু এবং এনআরবি টিভির সিইও ও বাংলামেইল সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টু।
পরবর্তী পর্বে দুইজন বীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা জানানো হয়, মঞ্চ আলোকিত করতে আসেন মুক্তিযোদ্ধা কাজী সারওয়ার এবং মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম। সংবর্ধনা প্রদান করেন হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান। ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল উৎসর্গ করা হয় প্লেব্যাক সম্রাট হিসেবে খ্যাত প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর ও প্রয়াত গুণী রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী নিলুফার বানু লিলিকে। উল্লেখ্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ফেস্টিভালের মঞ্চই ছিল এন্ড্রু কিশোর-এর জীবনের শেষ মঞ্চ পরিবেশনা এবং ২০১৫ সালে নিলুফার বানু লিলি তাঁর দরাজ কণ্ঠে মুগ্ধ করেন শ্রোতা ভক্তদের।
এর পরে শুরু হয় টরন্টোর গুণী শিল্পীদের পরিবেশনা। নৃত্যের তালে নৃত্যকলা কেন্দ্রের দুইটি পরিবেশনা প্রশংসা লাভ করে। নৃত্যগুরু বিপ্লব কর-এর কোরিওগ্রাফিতে অংশ নেন দ্বীপশিখা কর, ইন্দ্রা বিদুষী বিদ্যাকর, পারিজাত পাল, অনুশা রয়, ধিষণা শ্রেষ্ঠা বাঁশরী কর, সানিয়া, ফারজিন, সৃজা সাহা, রুবাইনা ফারিন, শ্রেয়ানা প্রশৃতা কর, আরাধ্যা দেব, কৃষিব বিনায়ক শ্রেয়ান কর, হেমা দে, আনিসা রহমান ও অর্পিতা পুরকায়স্থ। উদীচী শিল্পগোষ্ঠী অব কানাডার ভিন্নধারার পরিবেশনায় মুগ্ধ হয় দর্শক। উদীচী শিল্পগোষ্ঠী শিল্পীরা হলেন -আলম শামসুল মিয়া, অমিত সাহা, আজামু শহীদুল্লাহ প্রত্যয়, গৌরী দাস, হারুনুর রাশিদ শ্যামল, ইভা নাগ, ইত্তেলা আলী, জয়া দত্ত সেনাপতি, মিঠুন রেজা, মনীষা দাস, অলিভিয়া বাড়ৈ, পাপিয়া জাকির, পিওনা বিশ্বাস, পৌলোমী পাল, রাশিদা এলাহী, শাহ আরিফুজ্জামান, সারিনা নুজহাত, সোহানা আমিন, সোফিয়া হাবিব, সুমন সায়ীদ, তানজীন ফাতেমা ও ঝুম্পা চক্রবর্তী। কবিতার ছন্দে বাচনিক এক অন্যরকম আবহ তৈরী করে। আবৃত্তি পরিবেশনায় ছিলেন কাজী হেলাল, ফ্লোরা নাসরিনা ইভা, ফারহানা আহমদ, নাজমা কাজী ও মেরী রাশেদিন। সংগীত পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন তিন গুণী শিল্পী, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ড: মমতাজ মমতা, গানের পাখি খ্যাত দীপ্তি জাহান ও গানপ্রেমী গায়ক রুবেন ইউসুফ।
বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে ধারাভাষ্যকার মাসুদ করিমের ভিন্ন ধারার পরিবেশনা ছিল দারুন উপভোগ্য। এর পরেই শুরু হয় ঢাকা থেকে আগত শিল্পীদের পরিবেশনা। রাত জাগা ফুল চলচিত্রের গানের সাথে নৃত্যকলা কেন্দ্রের নৃত্য পরিবেশনার সাথে প্রথমেই মঞ্চে আসেন জনপ্রিয় অভিনেতা, পরিচালক ও উপস্থাপক মীর সাব্বির, অভিনেতা ও পরিচালক মাজনুন মিজান, অভিনেতা আরফান আহমেদ, অভিনেতা কামাল হোসেন বাবর ও নাট্যপরিচালক আল হাজেন। এনআরবি অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয় চলচ্চিত্র “রাত জাগা ফুল ” এ অভিনয়ের জন্য অভিনেতা মীর সাব্বিরকে, উল্লেখ্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশে রাত জাগা ফুল মুক্তি পায় এবং ২০২১ সালে এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন মীর সাব্বির।
এছাড়াও নাট্যপরিচালক আল হাজেনকে ও অভিনয়ে বিশেষ অবদান রাখবার জন্য মাজনুন মিজান ও আরফান আহমেদকে এনআরবি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ প্রদান করা হয়। মঞ্চে বাঁশির সুরে মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে দেন মীর সাব্বির। বরিশালের ভাষায় তার আবৃত্তিও আনন্দের খোরাক যোগায়। মাজনুন মিজান তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং আরফান আহমেদ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার নিজস্ব ভাষায় কথা বলে দর্শকদের আনন্দ দেন। আয়োজনের শেষে মঞ্চ আলোকিত করতে সুরের মূর্ছনায় দর্শক শ্রোতাদের বুঁদ করে রাখেন মেলোডি কুইন, তিন বারের জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী কনক চাঁপা। তুমি মোর জীবনের সাধনা, তুমি আমার এমনি একজন, সাগরিকা সহ জনপ্রিয় সব গানের সাথে ভক্ত শ্রোতাদের বিমুগ্ধ করেন প্রিয় এই শিল্পী। অনুষ্ঠান শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিল্পী কনকচাঁপা বলেন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ মঞ্চ ছিল ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল এর মঞ্চ, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হল ভর্তি মুগ্ধ শ্রোতাদের মাঝে গান পরিবেশন করে। এনআরবি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ এ ভূষিত করা হয় গুণী কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপাকে। শিল্পীর সাথে যারা যন্ত্রশিল্পী ছিলেন তারা হলেন বেজ গিটার : সোহেল ইমতিয়াজ, লিড গিটার : জয় সরকার, ড্রামস এবং অক্টোপ্যাড : সৌরভ ধ্রুব, তবলা এবং পারকিউশান : ঝলক দেব চৌধুরী, কীবোর্ড : মেহেদী ফারুক। শব্দ নিয়ন্ত্রণে দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন ডানফোর্থ সাউন্ড এর নেপথ্যে শমী সাত্তার ও রিংকো। সাংস্কৃতিক আয়োজনের সমন্বয়কারি হিসাবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন স্বপ্না দাস। সর্বশেষ মুন্নু সিরামিকস কানাডার সৌজন্যে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
টরোন্টোতে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল এখন বাংলা ভাষাভাষীদের এক সর্ববৃহৎ মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বাংলামেইল সম্পাদক ও এনআরবি টিভির সিইও, বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ইসলাম মিন্টু জানান, বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের সাফল্যের পেছনে শুধুই রয়েছে দর্শক-শ্রোতাদের ভালোবাসা এবং আস্থা। তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন উপস্থিত দর্শক শ্রোতা এবং সাথে আত্মনিবেদিত স্বেচ্ছাসেবী সদস্যদের প্রতি, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের এবারের আয়োজন সফল হয়েছে। শহরে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল।
টরোন্টোবাসীদের অপেক্ষা এখন আগামী বছর ৭ম বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল-এর জন্য। আরো জাকজমকপূর্ণভাবে আসছে ৭ম বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল ।