বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
7.2 C
Toronto

Latest Posts

থ্রিএমটিতে প্রথম হলেন আতিয়া

- Advertisement -
আতিয়া বিনতে আমিন

আতিয়া বিনতে আমিন প্রথম বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, যিনি থ্রি মিনিট থিসিস (থ্রিএমটি) প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক মুকুট জিতলেন ।

১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ‘নর্থ আমেরিকান ফাইনাল’ নামে এই প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক পর্যায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় কানাডার প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক মুকুট জিতলেন আতিয়া। তিনি প্রথম বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, যিনি এই পুরস্কার জয় করলেন।

- Advertisement -

আতিয়া কানাডার মনট্রিয়লে অবস্থিত ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবদেহের জিনতত্ত্বের ওপর পিএইচডি করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব প্রকাশনার অনলাইন সংস্করণে আতিয়ার এই পুরস্কার জয়ের খবর দেওয়া হয়েছে। এতে লেখা হয়েছে, আতিয়া প্রথম ম্যাকগিলিয়ান হিসেবে থ্রিএমটি প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক পর্বে বিজয়ী হয়েছেন।

থ্রিএমটি প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীকে তিন মিনিটে স্নাতক গবেষণার বিষয়বস্তু বর্ণনা করতে হয়। এই বর্ণনা হতে হয় এমন, যাতে সাধারণ মানুষ তা সহজে বুঝতে পারে। আতিয়া কালাজ্বর নিয়ে বলেছিলেন।
একই বিষয়ের ওপর আতিয়া কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক প্রতিযোগিতা, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্বে জয়ী হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।

জাতীয় পর্বে বিজয়ী হওয়ার পর আতিয়াকে নিয়ে প্রথম আলোর ‘স্বপ্ন নিয়ে’ পাতায় গত ২৮ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল: বাংলাদেশের আতিয়া এখন ‘কানাডার মুখ’।
বিজয়ী হিসেবে আতিয়া পেয়েছেন দুই হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা দুই লাখ টাকার বেশি।

পুরস্কার জয় নিয়ে গত রোববার হোয়াটসঅ্যাপে আতিয়ার সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের প্রতিযোগিতাটি খুবই কঠিন ছিল। স্নায়ুর ওপর প্রচণ্ড চাপ ফেলেছিল। প্রতিযোগিতায় দর্শকদের কাছ থেকে আমি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছি।’

সমসাময়িক সময়ে আতিয়ার সাফল্যে আরেকটি পালক যুক্ত হয়েছে। ২৮ নভেম্বর তিনি কানাডা সরকারের মর্যাদাপূর্ণ ‘ভ্যানিয়ের স্কলারশিপ’ পেয়েছেন। কীটপতঙ্গবাহিত রোগের ওপর গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁকে দেড় লাখ ডলারের বৃত্তি দেওয়া হয়েছে।
আতিয়া বলেন, তিনি এই বৃত্তির অর্থ দিয়ে কালাজ্বর (বেলে মাছির মাধ্যমে একজন থেকে অপর জনের মধ্যে ছড়ায়), ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণা করবেন।

ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা হয়ে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা
আতিয়ার বাবা মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি এখন অবসরে। মা ফাতেমা আক্তার। তিনি একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনিও অবসরে গেছেন। তিন বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে আতিয়া বড়।

আতিয়া ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাইস্কুল থেকে এসএসসি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগে। পরে মাস্টার্স করতে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি।

২০১৯ সালে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শুরু করেন আতিয়া। তাঁর স্বামী হক মুহাম্মদ ইশফাক। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি করছেন। তাঁরা ২০১৬ সালে বিয়ে করেন।

আতিয়া আমিন বলেন, ময়মনসিংহ থেকে কানাডা—এই পুরো যাত্রায় শিক্ষা, গবেষণা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, নেতৃত্ব ইত্যাদি বিষয়ের খুঁটিনাটি দিক বিশ্লেষণ করে তাঁকে ভ্যানিয়ের বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এ বছর তিনিসহ ৫০ জন এই বৃত্তি পেয়েছেন। এই বৃত্তি পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি মেয়ে তিনি। আগে একজন বাংলাদেশি ছেলে এই বৃত্তি পেয়েছিলেন।
মাস্টার্স ও পিএইচডির শিক্ষার্থীদের মধ্যে থ্রিএমটি প্রতিযোগিতাটি খুব জনপ্রিয়। বিশ্বের প্রায় ৮৫টি দেশে প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

চলতি বছর কানাডায় ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী থ্রিএমটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। গত এপ্রিলে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক ধাপ শেষে প্রতিযোগিতায় প্রথম হন আতিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী একজন অংশ নেন আঞ্চলিক পর্বে। এই পর্বে কানাডার পূর্বাঞ্চলের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হওয়া প্রতিযোগীরা অংশ নেন। জুনে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক পর্বে প্রথম হন আতিয়া। পাশাপাশি দর্শকদের ভোটে তিনি পান ‘পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড’। কানাডার পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল ও অন্টারিও থেকে ৯ জন অংশ নেন জাতীয় পর্বে।

২ নভেম্বর জাতীয় পর্বে কালাজ্বরের কার্যকর ওষুধ তৈরির প্রত্যাশার কথা তিন মিনিটে শুনিয়ে প্রথম স্থান পান আতিয়া। কালাজ্বরের জন্য কীভাবে কার্যকর ওষুধ তৈরি করা যায়, তা নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে একত্রে গবেষণা করছেন আতিয়া। তিনি বলেন, কালাজ্বরের যেসব ওষুধ আছে, তার অর্ধেকের বেশি ক্ষেত্রে পরজীবীটি প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। কানাডার মানুষের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত এই রোগ সম্পর্কে মাত্র তিন মিনিটের উপস্থাপন, একই সঙ্গে গবেষণার ফলাফল ও গুরুত্ব তুলে ধরা তাঁর জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল।

আতিয়ার তত্ত্বাবধায়ক (সুপারভাইজার) ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের সহকারী অধ্যাপক ডেভিড ল্যাংলাইস। জাতীয় পর্বে আতিয়ার জয়ের পর ২১ নভেম্বর তিনি প্রথম আলোকে ই-মেইলে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, থ্রিএমটি প্রতিযোগিতায় আতিয়ার জয়ে তিনি গর্বিত। আতিয়াসহ তাঁর শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর প্রত্যাশা হলো, তাঁরা নতুন ধরনের গবেষণা প্রকল্প নিয়ে কাজ করবেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাবেন। আতিয়ার অর্জন বলে দিচ্ছে, তিনি লক্ষ্যের দিকে খুব ভালোভাবে এগোচ্ছেন।
১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো শহরের ম্যারিয়ট হোটেলে থ্রিএমটি প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক কাউন্সিল অব গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি সংগঠন।

আতিয়ার অনুপ্রেরণা বাংলাদেশ
আতিয়া কানাডার নাগরিক নন। তিনি সেখানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ছেন। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই তিনি এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আসরে বাংলাদেশের কথা বলেছেন। গবেষণার মাধ্যমে কালাজ্বরের কার্যকর ওষুধ তৈরির প্রত্যাশার কথা জানিয়ে উন্নত দেশগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন।

আতিয়া বলেন, ‘আমি প্রতিযোগিতায় বলেছি, বাংলাদেশে বড় হয়েছি। বাংলাদেশে পড়েছি। প্রতিযোগিতার পর অনেকেই আমাকে বলেছেন, থিসিস নিয়ে আমার বর্ণনায় দেশের কথা বলাটা তাঁরা পছন্দ করেছেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, এই গবেষণার পেছনে বাংলাদেশ আমার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করছে। কালাজ্বরের সমস্যাটি আমাদেরও। তাই এই সমস্যার সমাধানে কাজ করা, পৃষ্ঠপোষকতা চাওয়া তাঁদের কাছে স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত মনে হয়েছে।’

আতিয়া আরও বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, নেপালে কালাজ্বরের প্রকোপ বেশি। আন্তর্জাতিক মহলে রোগটি খুব অবহেলিত। উন্নত দেশে রোগটি হয় না। তাই তারা রোগটি নির্মূলে সহজে কোনো তহবিল দেয় না। তবে রোগটি পৃথিবী থেকে নির্মূলে উন্নত দেশের দায়িত্ব রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন।

- Advertisement -

Latest Posts

Don't Miss

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.