টরন্টোর মেয়র অলিভিয়া চাউয়ের জন্য ব্যস্ততম কয়েকটি মাস ছিল। ১০০ জনের বেশি প্রতিযোগীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে গত জুলাইয়ে মেয়র হিসেবে শপথ নেন চাউ।
চাউ দায়িত্ব নিয়েছিলেন ভিন্নভাবে কাজগুলো করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। সেই সঙ্গে জনগণকেই রাখতে চেয়েছিলেন সামনে ও কেন্দ্রে। তার ভাষায়, টরন্টোবাসীর প্রয়োজন আরও বেশি সাশ্রয়ী আবাসন, উন্নত ট্রানজিট ও আরও বেশি রোজগার। দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিনে এসে সমালোচকদের ধারণার চেয়েও বেশি কিছু করতে পেরেছেন চাউ।
অলিভিয়া চাউ বলেন, দারুণ লাগছে। এটা সত্যিই বিরাট সম্মানের। সমগ্র নগরীর জনগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ আমাকে অনুপ্রাণীত করেছে। জনগণ কীভাবে তাদের শহরকে ভালোবাসে এবং সর্বোত্তম সেবা সরবরাহ করাটা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বুঝতে সাহায্য করেছে এই সাক্ষাৎ।
কিন্তু কেবল করমর্দনই করেননি। দায়িত্ব নেওয়ার পর শরনার্থীদের সহায়তায় নগরীর জন্য ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে ৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছেন তিনি। যদিও তিনি বলেছেন, ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে তাদের যা প্রয়োজন এটা তার অর্ধেক মাত্র।
টিটিসি নিখুঁত অবস্থায় পৌঁছাতে এখনো অনেক বাকি। তবে অলিভিয়া চাউ সেবা কর্তন ঠেকাতে পেরেছেন। সেবা কর্তন করা হলে তার প্রভাব পড়ত নাজুক ব্যবহারকারী ও কম সুবিধাভোগী গ্রুপের ওপর। এ ছাড়া ব্যবস্থাটি নিরাপদ করতে টিটিসি আরও বেশি ফ্রন্ট-ফেসিং কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে।
আবাসনের ব্যাপারে কাউন্সিল বাড়ির মালিকরা যেনো বাড়ি ফেলে না রাখেন সেজন্য ভ্যাকেন্ট হোম ট্যাক্স বর্ধিত করেছে। চাউ বলেন, এটা করতে পারাটা সত্যিই দারুণ। আরও বেশি সাশ্রয়ংী বাড়ির খবরও শিগগিরই আসবে বলে জানান তিনি।
ক্যাফেটুগো প্রোগ্রামের সাম্প্রতিক পরিবর্তনের ব্যাপারে চাউ বলেন, এতে আবেদন করা অনেক দ্রুত হবে। সেই সঙ্গে হতাশাও কমবে।
চাউ অন্যদের তুলনায় দ্রুত হাঁটছেন বলে যদি মনে হয়ে থাকে তাহলে এর কারণও আছে। সেটা হলে টরন্টো নজিরিবিহীন চ্যালেঞ্জের সামনে রয়েছে। মহামারির দৃশ্যমান সাইন এখন না থাকলেও নগরী এখনো এ থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে এবং বিপুল অংকের বাজেট ঘাটতিতে পড়েছে।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর অলিভিয়া চাউয়ের প্রথম পদক্ষেপ ছিল আসলে গত আগস্টে নগরীর সমস্যাপূর্ণ আর্থিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্বাহী কমিটি নিয়ে বৈঠক। অন্টারিও সরকার মিউনিসিপাল সেলস ট্যাক্সের মতো কিছু বিষয় বন্ধ করে দিলেও সিটি কাউন্সিল ৩০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের বাড়ির ক্ষেত্রে জমি হস্তান্তর ট্যাক্স বৃদ্ধি ও স্ট্রিট পার্কিংয়ের ফির ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়ার মতো কিছু পদক্ষেপ পাস করেছে। পাশাপাশি প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ডের সঙ্গে সম্পর্কও রক্ষা করে চলেছেন চাউ। যদিও নির্বাচনের সময় ফোর্ড বলেছিলেন, চাউয়ের নির্বাচন সিটির জন্য বিপর্যয়কর হবে। সম্প্রতি কুইন’স পার্কে সাক্ষাতে উভয় নেতা পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন এবং নগরীর জন্য একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রদেশ সিটির নতুন চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে রাজি হয়েছে। চুক্তিটি নিয়ে মিউনিসিপাল ও প্রাদেশিক কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে দুইবার বৈঠক করছেন। নভেম্বরে চুক্তির ব্যাপারে হালনাগাদ তথ্য জানা যাবে।
অলিভিয়া চাউ শুরুটা ভালোভাবে করলে কিছু ধাক্কাও খেতে হয়েছে। ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু অপরিপক্ক পোস্ট তিনি করেছে। এগুলো নিয়ে উভয় পক্ষ থেকেই সমালোচনা উঠেছে। ওইদিনই অবশ্য পোস্ট মুছে দেওয়া হয় এবং অলিভিয়া চাউ ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি থ্যাংকসগিভিংয়ে ইসরায়েলপন্থী সমাবেশেও অংশ নেন তিনি।