বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা গত মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীর ভীড় হয়েছে মন্দিরগুলোতে। শুধু টরন্টো নয়, সারা অন্টারিও জুড়ে বিপুল উদ্দীপনায় দুর্গাপূজা উদযাপনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। অন্টারিওর বাইরে মন্ট্রিয়ল, ক্যালগেরি শহরেও দুর্গাপূজায় ছিল প্রচুর মানুষের উপস্থিতি।
অধিকাংশ মন্দিরে মহাষষ্ঠী হয়েছে ২০ অক্টোবর। বাংলাদেশিদের পরিচালিত তিনটি মন্দিরে দুপুর থেকে শুরু করে মধ্য রাত্রী পর্যন্ত ভক্তদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ করবার মতো। ৪৩৩ বার্চমাউন্ট রোডে অবস্থিত টরন্টো দুর্গাবাড়ি এবং ১৫১০ বার্চমাউন্ট রোডে অবস্থিত হিন্দু ধর্মাশ্রমে ২১ থেকে শুরু করে ২৪ তারিখ পর্যন্ত যথাক্রমে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমী পালিত হয়। ১২০ এমেট এভিনিউতে অবস্থিত বেদান্ত সোসাইটিতে পূজা হয়েছে ২২, ২৩ এবং ২৪ তারিখে। অন্যদিকে ১৬ দোম এভিনিউতে অবস্থিত বাংলাদেশ কানাডা হিন্দু মন্দিরে দশমী হয়েছে ২৩ তারিখ সোমবার। একই দিনে ২১০৭ কডলিন ক্রিসেন্টে অবস্থিত ভারত সেবাশ্রম সংঘতেও দশমী পালন করা হয়। দশমী শেষে সিদুরখেলাও ছিল অনেক উপভোগ্য এক ধর্মীয় আচার। বঙ্গীয় পরিষদ এবং টরন্টো কালিবাড়ি আয়োজিত পূজাতে বিপুল সংখ্যক উপস্থিতি ছিল।
টরন্টো শহরের বাইরে শুধু মিসিসাগা বা এজাক্সেই নয়, নতুন নতুন পুজো শুরু হয়েছে অন্টারিও অন্যান্য শহরেও। লন্ডনে পূজা হয়েছে উৎসব বেঙ্গলি এসোসিয়েশনের উদ্যোগে। তাদের পূজা ছিল ২১ ও ২২ তারিখে। একই দিনে আমার পুজোর আয়োজনও ছিল। কিংস্টন শহরে পূজা হয় এক দিনে। এবার তাঁদের তারিখ ছিল ২১ অক্টোবর। ওই দিনে ওয়াটারলুর সনাতন বেঙ্গলি কালচারাল এসোসিয়েশন পুজার আয়োজন করে। তাঁদের পূজা হয় ইমানুয়েল ইউনাইটেড চার্চে।
সর্বজনীন এ সকল পূজার বাইরেও অন্টারিতে ইদানিং পারিবারিক পূজার প্রচলন চোখে পড়ার মতো। স্কারবোরোর ৬০১ ব্রিমলি রোডের ধর বাড়ির পূজোতে অনেক বাঙালির আসাযাওয়া ছিল। ব্রাম্পটনের চক্রবর্তী বাড়ীর পূজার বয়স ছয়-সাত হতে চললো। বেরি শহরের পাণ্ডা বাড়ির পূজাতেও যথেষ্ঠ ভীড় ছিল।
তবে প্রবাসে যেমনটি ঘটে সেটি হচ্ছে তিথীর বাইরেও ভক্তরা পূজা করতে বাধ্য হন। তিথীর আগেই বেশ কটি পূজার খবর পাওয়া গেছে। গত ১৩ ও ১৪ তারিখ ওয়াটারলুর এমানুয়েল ইউনাইটেড চার্চে পূজা হয়েছে কেডব্লিউজিসি সংগঠনের উদ্যোগে। ডারহাম দুর্গোৎসব এবং আগমণী কালচারাল এসোসিয়েশন অব ডারহামের দুর্গাপূজা হয়েছে ১৪ ও ১৫ তারিখে।
এই প্রতিবেদন যখন ছাপা হবে তখন তিথি অনুযায়ী পূজার পাট শেষ হলেও রেশ শেষ হবে না। হ্যামিলটন শহরের সাগরপাড়ে সংগঠনের পূজা হবে ২৮ ও ২৯ তারিখে। ওই দুই দিনে আরও যেই দুটি শহরে পূজা হবে সেই শহর দুটি হলো ওকভিল এবং গুয়েলফ।
টরন্টো থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে, গুয়েলফ শহরে ‘ইন্ডিয়া কানাডা কনসোর্টিয়াম’ (আইসিসি), প্রথম দুর্গাপূজারর আয়োজন করতে চলেছে এবার। যেহেতু গুয়েলফ এর অন্য নাম রয়াল সিটি তাই এই পুজোর নামকরণ করা হয় ‘রয়াল সিটি দুর্গাপূজা’। এই পূজা উপলক্ষ্যে যে সুভেনির প্রকাশিত হবে, তাতে ভারতের বেশ কিছু প্রাদেশিক ভাষার লেখার পাশাপাশি থাকবে সাঁওতালী ভাষায় লেখা গল্পও থাকছে বলে জানা গেছে। এই পূজার অন্যতম বিশেষ উদ্যোগ উত্তর আমেরিকায় বিশেষত কানাডায় প্রথম নারী পুরোহিত দ্বারা দুর্গাপূজা। ২৯ তারিখ দুপুর আড়াইটায় গুয়েলফ শহরের মেয়র এবং তাঁর স্ত্রী’র উপস্থিতি তে ১০৮ জন (ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের) নারী একত্রে মা দুর্গার আরতি করবেন বলে জানা গেছে।