শনিবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২৩
6.1 C
Toronto

Latest Posts

সুরের বন্ধন : একটি মোহনীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান

- Advertisement -
৩০ সেপ্টেম্বর টরন্টোর স্থানীয় দুর্গাবাড়ি হিন্দু মন্দির মিলয়াতনে ‘সুরের বন্ধন’ শিরোনামের সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুিষ্ঠত হয়েছে

যেকোন শিল্প মাধ্যমের সবচেয়ে বড় দাবী, শতাংশের হিসেবে একে পরিপূর্ণ করে তোলা। শতাংশের থেকে যে কোন অনুষঙ্গের কোনখানে যৎসামান্য কম হলেই এর পরিপূর্ণ প্রকাশে ব্যত্যয় ঘটে। বোদ্ধা রসিক সেই শিল্পের রস আস্বাদনে তৃপ্ত হোন না৷ একটি অদৃশ্য ও অপ্রকাশিত অতৃপ্তির ভার তার মনকে অস্থির করে রাখে। বিচলিত করে। বাহ্য চোখে তা দেখা যায় না। কোলাহলময় জীবনে শিল্পতৃপ্তির সেই উত্তুঙ্গ তৃষ্ণার অনুভব অনেক সময় আমরা ঠাহর করতেই পারি না। কিন্তু যখনই শতাংশের পূর্ণ প্রকাশিত শিল্পের রস আস্বাদনের সুযোগ আমাদের ঘটে, অনেক সময় আমরা মুগ্ধতায় বিহ্বলিত হয়ে যাই। সেই ঘুমিয়ে থাকা অতৃপ্তির যন্ত্রণা লাগবের আনন্দে আমরা আপ্লুত হই।

গতকাল ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালের শনিবার টরন্টোর স্থানীয় দুর্গাবাড়ি হিন্দু মন্দির মিলয়াতনে পিতা এনামুল কবির ও কন্যা নাহিদ কবির কাকলির পরিবেশনা ‘সুরের বন্ধন’ শিরোনামের সঙ্গীতানুষ্ঠানে উপস্থিত প্রতিটি শ্রোতা-দর্শকের চোখে মুখে আমি সেই শতাংশ পরিপূর্ণ শিল্পের রস আস্বাদনের তৃপ্তি দেখেছি। এখানে উল্লেখ্য যে, এনামুল কবির বাংলাদেশে হাওয়াইয়ান গিটারের প্রখ্যাত শিল্পী ও ওস্তাদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হাওয়াইয়ান গিটার বাদনের পাশাপাশি অসংখ্য ছাত্রছাত্রীদের হাওয়াইয়ান গিটারে শিক্ষাদানও করছেন। বাংলাদেশের সরকারী বেসরকারি কিংবা উড়োজাহাজ বা ট্রেনে গিটারের অধিকাংশ সুর বাদনই শিল্পী এনামুল কবিরের রেকর্ডকৃত কোন এলবাম থেকে বাজানো। শ্রেষ্ঠ বাংলা গানের স্বরলিপি করে অসংখ্য বই লিখেছেন তিনি। এনামুল কবিরের বয়স ৮২ বছর। কিন্তু এখনো তাঁর উদ্দীপিত তারুণ্যে সবাই চমৎকৃত। শিল্পী এনামুল কবির-এর হাওয়াইয়ান গিটার বাদনের আরেকটি মনোমুগ্ধকর বিষয় হলো স্পষ্টতা। অর্থাৎ, গিটারের সঙ্গে সঙ্গতকারী যন্ত্রের ঐকতান সৃষ্টিতে এনামুল কবিরের সমান্তরাল সুরের লয়টি ঠিকমতো হলে এক স্বর্গীয় মূর্ছনা সৃষ্টি হবেই৷ যেমনটি হয়েছিল গতকাল রাতে৷ রূপতনু শর্মা, আবনা সাফিন, রনি পালমার একেকজন যেন তাদের সর্বোত্তমটি বাজানোর জন্য হৃদয় থেকে উৎসারিত আর্জির তাগিদের কাছে বন্দী ছিলেন।

- Advertisement -

গতকালকের ‘সুরের বন্ধন’ অনুষ্ঠানের শুরুতে দেলওয়ার এলাহী উপস্থিত দর্শকশ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য দেন। দেলওয়ার এলাহী সুরের বন্ধন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করার জন্য জনপ্রিয় আবৃত্তিশিল্পী মেরী রাশেদীনকে আহবান জানান। মেরী রাশেদীন দর্শকশ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে, অসুস্থ কবি আসাদ চৌধুরীর একটি কবিতা পাঠ করে কবির জন্য সবার দোয়া ও শুভকামনার অনুরোধ জানান। এর পর একে একে শিল্পীদের মঞ্চে ডেকে নেন। বিপুল করতালির মাধ্যমে শ্রোতাদর্শক শিল্পীদের বরণ করে নেন। তারপর সুরের বন্ধন অনুষ্ঠানটি সফল করতে প্রধান স্পন্সর শান দে, ব্যারিস্টার ওমর হাসান আল জাহিদ, ব্যারিস্টার শামীম আরার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ও তাদের অনুভূতি জানতে মঞ্চে আসতে অনুরোধ করেন। তারা মঞ্চে এসে আয়োজনে তাদের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেন ও সবাইকে অনুষ্ঠান উপভোগ করার আহবান জানান। নতুন প্রজন্মের তিন প্রজাপতি দর্শকশ্রোতাদের সামনে দীপ্ত ভঙ্গিমায় নেচে নেচে আগুনের পরশমণি প্রাণে ছোঁয়ানোর আহবানে উৎফুল্লতার মোহময় সুরধ্বনিতে ভরিয়ে তুলেন৷ তিন নৃত্যরত প্রজাপতির নাম : শ্রেয়ানা বিপ্লব প্রসৃতা কর, ধীষণা শ্রেষ্ঠা বাঁশুরি কর, ইন্দ্রা বিদূষী বিদ্যা কর।

এরপর শিল্পী এনামুল কবিরকে সম্মাননা জানানো হয়। শিল্পীকে সম্মান জানাতে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অন্টারিও প্রাদেশিক সংসদের মাননীয় সাংসদ ডলি বেগম। প্রথমে মানপত্রটি পাঠ করেন মেরী রাশেদীন। তারপর ডলি বেগম শিল্পী এনামুল কবিরের হাতে মানপত্রটি তুলে দেন। অতঃপর শিল্পীর কাঁধে চাদর জড়িয়ে দেন দেলওয়ার এলাহী। ডলি বেগম তাঁর বক্তব্যে এনামুল কবিরকে শ্রদ্ধা জানান। এই ধরনের আয়োজনে তাকে সম্পৃক্ত করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

শিল্পী এনামুল কবিরের সুযোগ্যা কন্যা শিল্পী নাহিদ কবির কাকলি। প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। এনামুল কবির দেশে থাকলেও তাঁর কন্যা নাহিদ কবির কাকলি দীর্ঘ বছর থেকে টরন্টো শহরেই বসবাস করেন। কাকলি গান শিখেছেন মিতা হক, নীলোৎপল সাধ্য, অনুপ ভট্টাচার্য, পার্থ সারথি সিকদার এবং এক ও অদ্বিতীয় ওয়াহিদুল হকের কাছে। কানাডা আসার পরপরই কাকলির এখানকার বন্ধু মহলেও তার অনেক অনেক ভক্ত৷ শুদ্ধতার প্রতি নিষ্ঠাবান কাকলি এ পর্যন্ত চারটি এলবাম রেকর্ড করেছেন।
সুরের বন্ধন শিরোনামের অনুষ্ঠানটি ছিল মূলত কন্যা-পিতার গান ও গিটারের পরিবেশনার এক আয়োজন। এরকম একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে যেমন অনেক রকম সাহায্যের প্রয়োজন হয়, সুরের বন্ধন অনুষ্ঠানেও সেরকম অনেক হৃদয়বান মানুষের সাহায্য অনুষ্ঠানটিকে সফল করেছে। কোন সাহায্য বা কষ্ট বা বাড়ানো হাতেই কাজ হতো না, যদি শিল্পীরা তাঁদের সর্বোত্তমটির প্রকাশ ঘটাতে না পারেন। এনামুল কবির ও নাহিদ কবির কাকলি তাদের পরিবেশনায় সর্বোত্তমটিই দেননি শুধু, মানুষের হৃদয়ের ভালোবাসার গহন দরজার কপাটও খুলে খুলে দিয়েছেন। কীবোর্ডে রূপতনু শর্মা, অক্টোপ্যাডে ইবনে এষা সাফিন, তবলায় রনি পালমার কী যে অসাধারণ সঙ্গত করেছেন, চোখ বন্ধ করে শুনলে মনে হবে কোন রেকর্ড শুনছি। চমৎকার উপস্থাপনায় মেরী রাশেদীনও শিল্পীদের মাত্রার সঙ্গে নিজেকে সমন্বিত করে তুলেছিছেন। সাউণ্ড সিষ্টেমেও রিংকুর ক্যারিশমায় সবাই মুগ্ধ।

শান দে, কামরান করিম, ফারহানা শান্তা, মনির বাবু সুরের বন্ধনকে সফল করতে সার্বক্ষণিকভাবে, নানা মাত্রায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে হিমাদ্রী রয়। শিল্প নির্দেশনা, প্রকাশনা, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং ভিডিওগ্রাফি- রাশেদ শাওন। মঞ্চ সজ্জ্বা ও পোশাক পরিকল্পনা- ফাতমা খান বিদুর।
যত পরিশ্রমই হোক, সবকিছুই সার্থক মনে হয়, যখন কোন অনুষ্ঠানের সব শেষে দেশের বন্দনা করে, সবাই দাঁড়িয়ে একই সুরে গগনবিহারী কণ্ঠে গাইতে পারি-
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি!

- Advertisement -

Latest Posts

Don't Miss

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.