বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
7.6 C
Toronto

Latest Posts

মুগ্ধ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক

- Advertisement -
আর্ট অব এ ইয়ং নেশান:বাংলাদেশ

সম্প্রতি কানাডা এসে প্রদর্শনী দেখে ফিরে গেলেন বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আর্ট গ্যালারী অব মিসিসাগা আয়োজিত যৌথ প্রদর্শনী ‘লাইটিং দ্য ফায়ার অব ফ্রিডম: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ ও বাংলাদেশের ৩৮জন প্রধান শিল্পীদের অরিজিনাল ছবি নিয়ে করা ‘আর্ট অব এ ইয়ং নেশান:বাংলাদেশ’ আমন্ত্রিত হয়ে দেশ থেকে এসে ছিলেন তিনি।

ব্যস্ততায় ভরপুর একজন মন্ত্রীর সময় বের করে দেশ থেকে এত দূরে এই কানাডায় আসাটা প্রমাণ করে তার তারুণ্যভরা মনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও দেশে শিল্পীদের শিল্পকর্মের প্রতি কতটা সম্মান কতটা টান রয়েছে।

- Advertisement -

কানাডার এক প্রধান আর্ট গ্যালারী বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের কর্মকার্ন্ডের দুর্লভ ছবির প্রিন্ট ও ডিজিটাল গ্রাফিক বিখ্যাত বক্তৃতা ভিডিও সমন্বয়ে প্রদর্শনী হচ্ছে ‘লাইটিং দ্য ফায়ার অব ফ্রিডম’ এবং দেশের ৩৮জন শিল্পীর যেমন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এস,এম,সুলতান, মুর্তজা বশীর, রশীদ চৌধুরী, দেবদাস চক্রবর্তী, মোহাম্মদ কিবরীয়া মত শিল্পীদের ছবির সমন্বয়ে ‘আর্ট অব এ ইয়ং নেশান:বাংলাদেশ’ দেখে তিনি মুগ্ধ। তার সম্মানে স্বাগতম অনুষ্ঠানে আবেগের সঙ্গে অন্তরের অন্তরস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ জানান আর্ট গ্যালারী অব মিসিসাগার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এ্যানা গুলবিনস্কী ও প্রদর্শনীর কিউরেটর আলি আদিল খান ও রুক্সিনি চৌধুরীকে।

অনুষ্ঠানে গ্য্যালারী ট্রাস্টি, কর্মকর্তা ছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশী টরন্টোতে বসবাসী শিল্পী সৈয়দ ইকবাল, তাজউদ্দিন আহমেদ, কামাল কবির, পাকিস্তানী কানাডিয়ান শিল্পী আসমা আরশাদ মাহমুদ, মন্ত্রীর সফরসঙ্গী ঢাকা আর্ট সামিটের সর্বেসর্বা রাজীব সামদানী আর টরন্টো মিসিসাগা শহরে বসবাস করা শিল্পপ্রিয় দর্শক।

প্রতিমন্ত্রী আবেগঘন কন্ঠে বলেন – দেশ থেকে এত দূরে এই কানাডায় জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কাজ নিয়ে এত বড় আর তৎপর্যপূর্ণ প্রদর্শনী এবং সঙ্গে বাংলাদেশের ৩৮ জন প্রধান শিল্পীর কাজ নিয়ে প্রদর্শনীতে স্বশরীরে উপস্থিত হতে পেরে তিনি নিজে গর্ববোধ করছেন।

বক্তৃতা শেষে বঙ্গবন্ধুর নানা বয়সের নানা কর্মকান্ডের দুর্লভ ছবির ঘটনা বর্ণনা দিতে অনলাইনে বাংলাদেশের দর্শকদের সঙ্গে যুক্ত হন প্রতিমন্ত্রী । তাতে লাভ হয় তাঁর পেছনে থাকা শিল্পী ও অন্য সব দর্শকদের। তারাও প্রতি ছবির ঘটনা ইতিহাস জানার সুযোগ পান প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের স্বকন্ঠে। এক সময় তিনি হেসে বলেন, আসলে আমার সঙ্গে থাকা আমার স্ত্রী ও তিন পুত্রকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ছবি যে এক একটি ইতিহাস সেটা বোঝানোর জন্যেই এত কথা বল্লাম।

রাজীব সামদানী গর্বের সঙ্গে জানালেন ২০২০ মুজিববর্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলায় সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশানই প্রথম আয়োজন করে ‘লাইটিং দ্য ফায়ার অব ফ্রিডম: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। সেটি উদ্বোধন করে ছিলেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন সঙ্গে বোন শেখ রেহানা ও কন্যা পুতুলকে নিয়ে।

এখানে আরেকটি ব্যাপার উল্লখযোগ্য কানাডায় প্রদর্শনী দুইটি আর্ট গ্যালারী অব মিসিসাগার পক্ষে আয়োজক, মাসের পর মাস পরিশ্রম এবং কিউরেট করেছেন একজন পাকিস্তানী কানাডিয়ান, সাগা ফাউন্ডেশানে মূলব্যক্তি আলি আদিল খান। আর্ট গ্যালারী অব মিসিসাগা তাকে একটি বড় প্রদর্শনী কিউরেট করার প্রস্তাব দিতে তিনি বাংলাদেশে ৫০ বছর স্বাধীনতা উপলক্ষ্যে প্রদর্শনী দুইটি করার প্রস্তাব দেন। তার ক্ষোভ পাকিস্তান সরকার আর কত বিলম্ব করবে, কালক্ষেপন করবে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ১৯৭১ এর হত্যাযজ্ঞ ধর্ষণ লুটের জন্যে লিখিত ক্ষমা চাইতে!

আলি আদিল ১১ বছর বয়সে প্রথম বাবার সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে যান। চট্টগ্রাম পোর্টের বড় কর্মকর্তা ছিলেন তার খালু। তখনি ঢাকা চট্টগ্রাম কক্সবাজার কাছে থেকে দেখা হয় তার। সহজ সরল বাঙালি মানুষের আন্তরিকতা তখনি তার মনে ছাপ ফেলে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তাকে আমন্ত্রণ জানায় আন্তর্জাতিক দ্বি-বার্ষিক চিত্র প্রদশর্নীতে কানাডার সাউথ এশিয়ান আর্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে সেমিনারে তার গবেষণা পেপার পড়তে। তিনি সেবার সঙ্গে নিয়ে যান ১০জন টরন্টোর সাউথ এশিয়ান শিল্পী ও তাদের কাজ। টরন্টোর ভারতীয় পাকিস্তানী বাংলাদেশী শিল্পী তাদের উপস্থিতিতে গুলশানের টিভলি গ্যালারীতে কিউরেট করেন যৌথ প্রদর্শনী। সেই প্রদর্শনীতে সবার ২টি করে ছবিতো ছিলোই, তবু প্রাণের তাগিদে পাকিস্তানী কানাডিয়ান শিল্পী আসমা আরশাদ মাহমুদ হোটেল ওয়েস্টিন মুখি গ্যালারীর বিশাল কাঁচের দেয়ালে রক্তঝরা লাল রঙে উর্দুতে বড় করে লেখেন ‘পাকিস্তান, বাংলাদেশে মানুষের কাছে ক্ষমা চাও! যত শীঘ্রই পারো। দেরী করলে ভার বাড়বে!’ মাত্র ৩দিনের মধ্যে ঢাকার পাকিস্তান দূতাবাস বাংলাদেশ সরকারের কাছে অভিযোগ করে এই ব্যাপারে। ৫দিনের মাথায় পুলিশ এসে বাধ্য করে লেখাটি মুছে ফেলতে।

সেই ২০১০ সালে টরন্টোর সৈয়দ ইকবাল ও তাজউদ্দিনের মাধ্যমে প্রায় সব মেজর আর্টিস্টদের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। আলি আদিল এমন একজন মজার মানুষ অনেকটা ইংরেজী টিভি সিরিয়াল ‘এভরিবডি লাভ রেমন্ড’ এর মত! পরিচয় হলেই সবার ভালো লাগে আলি আদিল খানকে! সেটা না হলে তার ডাকে বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পীরা, যাদের ছবির দাম বর্তমান বাজার মূল্য লাখ-লাখ তারা কিংবা তাদের আত্মীয় স্বজন তাকে বিশ্বাস করে নিজের অরিজিনাল ছবি ডিএইচএলের পার্সেলে চোখ বন্ধ করে কেনো পাঠিয়ে দেবে! অবাক হবারই কথা। আর্ট অব এ ইয়ং নেশান:বাংলাদেশ প্রদর্শনীতে যেসব শিল্পীদের ছবি ঝুলছে তাদের নাম শুনলে আপনারাও অবাক হবেন-শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, এস,এম সুলতান, মুর্তাজা বশীর, রশিদ চৌধুরী, দেবদাস চক্রবর্তী, মোহাম্মদ কিবরীয়া, কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম, মাহমুদুল হক, কালীদাস কর্মকার, হামিদুজ্জামমান খান, আবদুস শাকুর, বীরেন সোম, শহীদ কবির, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, ফরিদা জামান, আলমগীর হক, কামাল কবির, সৈয়দ ইকবাল, মোহাম্মদ ইউনুস, তাজউদ্দিন আহমেদ, খকু প্লামানডন, রোকেয়া সুলতানা, ইফতেখারউদ্দিন আহমেদ, দিলারা বেগম জলি, ভিনিতা করিম, কনকচাঁপা চাকমা, মোহাম্মদ ইকবাল, মাহমুদুর রহমান, তায়েবা বেগম লিপি, মাকসুদা ইকবাল নিপা, বিপাশা হায়াত, আনিসুজ্জামান আনিস, নাজিয়া আন্দালিব প্রীমা, এমডি টোকোন, মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান, বিশ্বজিৎ গোস্বামী। জন্ম হিসেবে নামের তালিকা প্রদর্শনীর ক্যাটালগে দেয়া আছে।

টরন্টোর বাংলাদেশী শিল্পীদের দুইটি করে ছবি আছে। তাজউদ্দিন আহমেদের ছয় বাই পাঁচ ফুট ‘আনটাইটেল’ ও ছোট একটি ছবি রয়েছে। আলমগীর হকের ও কামাল কবিরের একটি মাছের জগত গহীন জলে সিরিজের ছবি রয়েছে। তবে সৈয়দ ইকবালের ১৮x৫ ফুট বিশাল সাইজের ছবি ‘টিয়ার্স অব নেচার’ রঙের উজ্জ্বলতা ও বিচিত্র ফর্মের জন্যে চোখে পড়ে। ক্লাইমেট চেঞ্জ বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাংলাদেশকে নিচের দিকে সাগরের জল দ্রুত গিলে খাচ্ছে, মাটি আর উজার হচ্ছে নদী ও ফসলের জমি, সব কেবলই ধূ ধূ মরুভূমি। এই দুইয়ের চাপে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার হাজর বছরের রঙিন ঐতিহ্য, ইতিহাস আর মনুষ্য জীবন প্রবাহ। তবে ‘লাইটিং দ্য ফায়ার অব ফ্রিডম: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ প্রদর্শনী কক্ষে আই লেভেলের অনেক উপরে প্রায় উঁচিয়ে দেখতে হয় সৈয়দ ইকবালের ৫x১২ ফুটের ছবি ‘ফাদার গিভ আস এ নিউ নেশান’ । অড জায়গায় থাকলেও বেশ আলোচিত ছবিটি। মুক্তিযুদ্ধ সময়কাল নির্ভর সহজ সরল ছবি। সাত আটের শিশু থেকে ষাট সত্তরের বয়স্ক যে কনো দর্শক দেখা মাত্র বিষয়বস্তু ধারণা করে নিতে পারেন। ছবির একেবারে নিচে দিকে ২৫ মার্চের মধ্যরাতে ইয়াহিয়ার তৎকালীন পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনী গোটা ঢাকা শহরে সাধারণ মানুষদের হত্যযজ্ঞের পর দুমড়ে মুচড়ে পড়ে থাকা রক্তাক্ত লাশ ধর্ষিত উলঙ্গ নারী দৃশ্যমান। তাদের উপর চড়াও হওয়া দাঁতাল বন্য শূয়োর মুখো পাকিস্তানী পতাকায় ছাপ দেয়া আর্মী হেলমেট পরিহিত খুনে মত্ত কাতারে কাতার সৈন্য। তার উপরে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পর বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত উত্তাল মুক্তিযোদ্ধার দল, পেছনে ভারতীয় সৈন্য বাহিনী ট্যাঙ্ক সহ আসছে,এগিয়ে আসছে। ছবির ঠিক মধ্যখানে বিশাল যীশুর ক্রুশে হাত আঁটকানো ঝুলন্ত অবস্থায় বাংলর বাঘের মত হুংকাররত বঙ্গবন্ধু। ক্রুশের দুই হাতায় তিন-তিনটি করে ছয়টি পায়রা, তাঁর ছয় দফার প্রতীক। তাঁর নিচেই স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এক হাতে সদ্য পাওয়া দেশের জাতীয় পতাকা ধরে অন্য হাত উঁচিয়ে কমান্ড করছেন। তাঁর দুই পাশে ভারতীয় সৈন্য বাহিনী ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানিকশ ও মুক্তিবাহিনীর সর্বেসর্বা জেনারেল ওসমানী। পেছনে লাল আগুনবর্ণ বিশাল আকাশে বামে উড়ন্ত ভয়াবহ ড্রাগনরূপী চক্রান্তকারী জুলফিকার আলি ভুট্টো, শকুনসঙ্গী নিয়ে উড়ন্ত। ডানের আকাশে সাদা পায়রা রূপী উড়ন্ত ইন্দিরা গান্ধী, সঙ্গে তাঁর সাদা পায়রা। অনেকের প্রশ্ন বঙ্গবন্ধু কেন যীশুখৃষ্টের ক্রুশে আঁটকে আছেন! আমারও একই প্রশ্ন তবে শিল্পীকে না পাওয়ায় তার উত্তর জানা হলোনা।

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আগে গত ডিসেম্বরে এই প্রদর্শনী দেখতে দেশ থেকে এসেছিলেন সংসদ সদস্য ও সংসদীয় সাংস্কৃতিক কমিটির দূত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা ।

‘আর্ট অব এ ইয়ং নেশান: বাংলাদেশ’ প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে ১০০ পৃষ্ঠার চমৎকার আর্ট ক্যাটালগ ছেপে বের করেছে আর্ট গ্যালারী অব মিসিসাগা’ চার রঙা ক্যাটালগে প্রদর্শনীর প্রতিটি শিল্পী কাজের চিত্ররূপ রয়েছে, তেমনি কিউরেটর আলি আদিল খান প্রতিটি ছবি নিয়ে এবং শিল্পীদের নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। রম রয়েল অন্টারিও মিউজিয়ামের সিনিয়র কিউরেটর ও সাউথ এশিয়ান উইং প্রধাণ ডক্টর দীপালি দেওয়ান শিল্পী সৈয়দ ইকবালের আঁকার ধরণ ও ছবির বিষয়বস্তু আর ভারতীয় পৌরাণিক প্রভাব নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা মূলক গুরত্বপূর্ণ লেখাও সুদৃশ্য মানসম্পন্ন এই আর্ট ক্যাটালগে রয়েছে।

গত বছর ১৮ নভেম্বর শুরু হওয়া প্রদর্শনী দুইটি শেষ হতে যাচ্ছে ১২ জানুয়ারী। মিসিসাগা অথবা গ্রেটার টরন্টোর বাসিন্দা বাংলাদেশী হলে নিজে ও নতুন প্রজন্মকে নিয়ে দেখতে যেতে মিস করবেন না। দেশের বাইরে বাংলাদের স্বনামধন্য শিল্পীদের ছবি এক সঙ্গে এক ছাদের নিচে দেখার সুযোগ গত ৫০ বছরে কখনো আসেনি! আবার কবে আসে কে জানে!

- Advertisement -

Latest Posts

Don't Miss

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.