
আগামী বছর বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় শীতকালীন অলিম্পিক কূটনৈতিকভাবে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টির হাতে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে এই ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
আয়োজক দেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র অলিম্পিকে সরকারি কর্মকর্তা না পাঠানোর ঘোষণা দেওয়ার দুই দিনের মাথায় একই ঘোষণা দিল কানাডা। বিশেষ করে চীনের বিরুদ্ধে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুরে মুসলিম গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। একই ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যও।
ট্রুডো বলেন, চীন সরকারের বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কানাডা খুবই উদ্বিগ্ন। আমার মনে হয় না যে, কানাডার বা অন্যান্য দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধি বেইজিং অলিম্পিক বা প্যারালিম্পিকে না পাঠানোর ঘোষণা বেইজিংকে অবাক করেছে। অনেক বছর ধরেই আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে আমাদের গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসছি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশের ধারাবাহিকতা এই ঘোষণা।
দ্য কানাডিয়ান প্রেস জানায়, কূটনৈতিক বর্জনের অর্থ হলো কানাডার অ্যাথলেটরা অংশগ্রহণ করবেন। কিন্তু নতুন ক্রিড়ামন্ত্রী পাসকেল সেন্ট-অংসহ কোনো সরকারি কর্মকর্তা তাতে অংশ নেবেন না। সাম্প্রতিক সময়ে যদিও কানাডার প্রধানমন্ত্রীর অলিম্পিকে অংশগ্রহণের নজির নেই, তারপরও কানাডা মন্ত্রী, গভর্নর জেনারেলসহ একাধিক সরকারি কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে থাকেন। টোকিও অলিম্পিকে কর্মসংস্থান মন্ত্রী কার্লা কুয়ালট্রো কানাডা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ২০১৮ সালে পিয়ংচ্যাঙে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল জুলি পায়েতকে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। সাবেক ক্রিড়ামন্ত্রী ক্রিস্টি ডানকান বেশ কয়েকজন সদস্য নিয়ে অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিকে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালে রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ও ২০১২ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে উপস্থিত হয়েছিলেন তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টন।
২০০৮ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকও বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিল বেশ কয়েকটি দেশ। অন্তত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। সেবারও কারণ ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘন। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ পুরো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড এমারসনকে পাঠিয়েছিলেন।
এদিকে কানাডা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন কানাডিয়ান অলিম্পিক কমিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড শুমেকার এবং কানাডিয়ান প্যারালিম্পিক কমিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কারেন ও’নিল। এক লিখিত বিবৃতিতে তারা বলেন, চীনের বিষয়টিতে কানাডিয়ান অলিম্পিক কমিটি ও কানাডিয়ান প্যারালিম্পিক কমিটি উদ্বিগ্ন। তবে এটাও ঠিক যে, এ ব্যাপারে তাদের মনোযোগ আকর্ষণের গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফরম হলো ক্রিড়া। ইতিহাস বলছে, অ্যাথলেটদের বর্জন কেবল তাদের আহতই করেছে, অর্থবহ কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।