
গত ২৮ নভেম্বর রবিবার সন্ধ্যায় ড্যানফোর্থের গোল্ডেন এজ সিনিয়র সেন্টারে ‘সর্বজনীন একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন কমিটি’র প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। টরন্টোর সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সভায় ২০২২ এর একুশ উদযাপন ও শহীদ মিনারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ আগামী একুশ উদযাপনের করণীয়, পরিকল্পনা ও আইএমএলডি’র শহীদ মিনার হস্তান্তর অনুষ্ঠান নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষত নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনার হস্তান্তর অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এই সভার পক্ষ থেকে আইএমএলডি’র বিতর্কিত কর্মকান্ডের সমালোচনা করে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
এ বছরের শুরুতে শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষার্থে ‘লুটেরা মুক্ত শহীদ মিনার’ এর পক্ষে ব্যাপক জনমত ও আন্দোলন গড়ে ওঠে। কমিউনিটির প্রায় সবাই এর সাথে একাত্ম প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩৭ সদস্যের শহীদ নির্মাণ কমিটি থেকে ৩০ জন পরিচালক পদত্যাগ করেন এবং আন্দোলনকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। অতপর ৭ জন পরিচালক সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে শহীদ মিনার নির্মাণ ও সিটির কাছে হস্তান্তরের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়।
টরন্টোর বাঙালি কমিউনিটি তাদের প্রাণের শহীদ মিনার হস্তান্তর ও উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে উদযাপনের অপেক্ষায় ছিল I অথচ গুটিকয় ব্যক্তির উপস্থিতিতে সেটা করা হয়েছে। এমনকি তারা শহীদ মিনার হস্তান্তর ও উদ্বোধনের এই বিশেষ মুহূর্তটি যথাযথ মর্যদা ও গুরুত্বের সাথে করতে পারেননি। তারা নিজেদের যতটা গুরুত্ব দিয়েছেন, মহিমান্বিত করেছেন, শহীদ মিনারকে সেটা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
এই শহীদমিনার নির্মিত হয়েছে সম্পূর্ণ কমিউনিটির অর্থে I এসব ডোনারদের সুনির্দিষ্ট তথ্য আইএমএলডি ‘র কাছে থাকার কথা। সেটা থাকলে এই মহতি অনুষ্ঠানে তাদেরকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়নি? এই আয়োজনে কমিউনিটির গণ্যমান্য, গুরুত্বপূর্ণ ও পরিচিত ব্যক্তিদের বলা হয়নি I অনুষ্ঠানটি সবার অংশগ্রহনে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হোক সেটা আইএমএলডি চায়নি বা করতে পারেননি। আসলে সেটা করার অবস্থা ও গ্রহণযোগ্যতাও তাদের নেই, ছিল না।
টরন্টোতে যারা বছরের পর বছর বাঁশ, কাঠ ও কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরী করে কমিউনিটিতে একটি স্বপ্ন বুনেছিল যে একদিন এখানে স্থায়ী শহীদ মিনার হবে তাদের অনেককেও সেখানে বলা হয়নি। এমন একটি মহতী অনুষ্ঠানে ব্যাপক জন সমাগম হবার কথা থাকলেও আইএমএলডির দূরভিসন্ধির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন টরন্টোর একটা ঘরোয়া পিঠা উৎসবেও এর অধিক সমাগম হয়।
শহীদমিনার হস্তান্তর ও উদ্বোধনকে ঘিরে আয়োজকরা নতুন করে যে বিতর্কগুলো তৈরী করেছেন তার কয়েকটি এখানে তুলে ধরছি-
১। এ আয়োজনে কমিউনিটির সর্বস্তরের ভাইবোনদের অংশগ্রহনের ব্যবস্থা বা উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তেমন প্রচারও করা হয়নি। গুটিকয় মানুষকে এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে বা বার বার অনুরোধ করে নিয়ে যাওয়া ছিল সন্দেহের ও অমর্যদার। যারা অর্থ দিয়েছেন বা সংগঠনের মাধ্যমে অর্থ তুলে দিয়েছেন তাদের অনেকেই আমন্ত্রণ পাননি। এমনকি এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ছিল তাদের অনেককে জানানো পর্যন্ত হয়নি।
২। সবচেয়ে দুঃখজনক, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত একমাত্র অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, এমপি, সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ীকমিটির সদস্য সুবর্ণা মোস্তফাকে অসম্মান করা হয়েছে ও অসদাচরণ করা হয়েছে। এটা একই সাথে তাঁর ও দেশের জন্য ছিল অপমানজনক। যে সংবাদ বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে, যে বিষয়টি টরন্টো বাঙালি কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত লজ্জার ও অস্বস্তির ।
৩। শহীদ মিনার হস্তান্তরের পূর্বে এটা নির্মাণের আয়-ব্যয়ের হিসেব প্রকাশের কথা/দাবী ছিল সেটা করা হয়নি। শুধু তাই নয়, নির্মাণ কাজ শেষ হবার পরেও কোন অর্থের প্রয়োজন না থাকলেও তারা অর্থ সংগ্রহ করেছেন। কেন করেছেন, তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এর মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
৪। এই শহীদ মিনার হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারকারী হিসেবে অভিযুক্ত চিহ্নিত ব্যক্তিকে/দের আমন্ত্রণ ও অংশগ্রহন করিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ও শহীদ মিনারের মর্যদা-ভামূর্তিকে কলঙ্কিত করেছেন। তারা বলেছিলেন, তাদের সাথে কোন অভিযুক্ত লুটেরা নেই। কিন্তু সেটা ছিল মিথ্যাচার ও প্রতারণা তা আবার প্রমাণ করলেন।
৫। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সেই একই অনুষ্ঠানে পাশাপাশি বসেছিলেন বাংলাদেশের আলোচিত অভিযুক্ত অর্থপাচারকারী ব্যক্তি/রা ও তাদের সহযোগীদের সাথে। এই হচ্ছে তার ঘোষিত লুটেরা অর্থপাচারকারীদের কোন প্রকার সহযোগিতা না করার নমুনা! আমরা বিষ্মিত হয়েছি। সেটা খুব অস্বস্তিকর ও দৃষ্টিকটু বিষয় ছিল। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের আগে বিষয়গুলো তাদের মাথায় রাখা উচিত ছিল।
৬। এরা কতটা অসতর্ক, অমনোযোগী, অযোগ্য যে যিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি এনে দিয়েছেন সেই কৃতি পুরুষ মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি রফিকুল ইসলামের নামের বানান ফলকে ভুল লিখেছেন (রাগিবুল ইসলাম!?)। তিনি কোন অখ্যাত ব্যক্তি নয়, গুগোল করলেই যে ব্যক্তির নাম পাওয়া যায় সেখানেও ভুল!! এটাকে কিভাবে নিরীহ ভুল বলবেন, বলতে পারেন?
সভায় উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ শামসুল আলম, আহমেদ হোসেন, ফায়েজুল করিম, নওশের আলী, আহাদ খন্দকার, সাইদুন ফয়সাল, সাদ চৌধুরী, শিবু চৌধুরী, মুজাহিদুল ইসলাম, মাহবুব চৌধুরী, আ ন ম ইউসুফ , শামীম মিয়া , জাকারিয়া চৌধুরী, আবু জহীর সাকীব, চমন আরা বেগম, হাসিনা আখতার, কফিল উদ্দিন পারভেজ, লিটন মাসুদ, ইমরুল ইসলাম, মোহাম্মদ বাসার,, আমিন মিয়া, হাশমত আরা চৌধুরী (জুঁই), জামাল উদ্দিন, রায়হান চৌধুরী, মোহাম্মদ চৌধুরী, সবুজ চৌধুরী (টিটু), সেলিম রহমান, আরিফ আহমেদ, রেজা সাত্তার, তানভীর তারেক, মেহেদি হাসান আরিফ, আজিম উদ্দিন, সাব্বির হোসেন, মোঃ শরীফুল আলম, নওশাদ উদ্দিন ও মাহবুব চৌধুরী রনি।
ভার্চুয়ালে সংযুক্ত ছিলেন ডঃ মন্জুরে খোদা টরিক, ইন্জিঃ রেজাউর রহমান,,ডঃ আব্দুল আউয়াল, মাসুক মিয়া, কামাল সরকার, মুনিরা সুলতানা মিলি, জামাল বিন খলিল, নাজমা হক, সিরাজুল ইসলাম, রোকেয়া পারভীন ও লিটন কাজী । প্রেস বিজ্ঞপ্তি।