
জয়নাবের (প্রকৃত নাম নয়) বয়স ১৩ বছর পড়তে যাওয়াও পাঁচ বোনের মতো তার মধ্যেও একই শঙ্কা দানা বাঁধছিল। এই বোধহয় বিয়ের পিড়িতে বসতে হচ্ছে। কিন্তু তানর অবস্থানে শক্তভাবে দাঁড়াতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন কর্মসূচি। এখন সে নার্স হওয়ার স্বপ্ন বুনছে।
রিচিং অ্যান্ড এমপাওয়ারিং অ্যাডোলেসেন্টস টু মেক ইনফর্মড চয়েসেস ফর দেয়ার হেলথের (রিচ) পরিচালক রাহিনাতু আদামু হুসাইনি বলছিলেন, জয়নাবের বাবা একজন কৃষক। তার বক্তব্য ছিল, মেয়ের স্বপ্ন পূরণে যদি হালের গরুও বিক্রি করতে হয় তাহলে তিনি তাই করবেন।
পরিবারের বহুদিনের চর্চার বাইরে গিয়ে জয়নাবের অবস্থানে সেদিন বিস্মিত হয়েছিলেন তার বাবা। সেই সঙ্গে বাবা তার মেয়ের স্বপ্নটা সম্পর্কে ধারণা পেতে ও কিভাবে সে আস্থাটা পেলো সেটা বুঝতে চাইছিলেন।
নাইজেরিয়ায় বাল্য বিবাহ সাধারণ ঘটনা এবং কৈশোরে সন্তান জন্মদানের ফলে সৃষ্ট জটিলতা ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। কারণ, এই বয়সে শরীর সন্তান জন্মদানের উপযোগী হয় না। এটাতেই বদল আনতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন হুসাইনি।
লিঙ্গ সমতা আনা এবং বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ের অবসানে বৈশি^কভাবেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছে কানাডা। রিচ হচ্ছে সেভ দ্য চিলড্রেন কানাডার সে রকমই একটি কর্মসূচি। এতে তহবিলের জোগান দিচ্ছে গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা ও অন্য অংশীজনেরা।
কিন্তু এটা পরিবর্তনের শুরুমাত্র। বয়োসিন্ধকালে মেয়েদের বিয়ে দেওয়াটা উত্তর নাইজেরিয়ার রীতি। রিচ কর্মসূচির শুরুর দিকে বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের ৫৪ শতাংশেরই বিয়ে হয় তাদের ১৫তম জন্মদিনের আগেই। কর্মসূচির শেষ দিকে এসে এ হার নেমে এসেছে ৪১ শতাংশে। একই সময়ে ১৮ বছরের আগে বিয়ে না করতে চাওয়া মেয়েদের হার ৬৯ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ শতাংশে। বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ের ঝুঁকি সম্পর্কে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে সচেতনতাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে নিরাপদ গর্ভধারণের গুরুত্বও।
এটাই শেষ নয়। প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাল্যবধুদেরও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার আছে বলে যেসব স্বামী মনে করেন তাদের সংখ্যাও ৪৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৪ শতাংশে।
এছাড়া প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ৩১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৪ শতাংশে পৌঁছেছে। একইভাবে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শুন্য থেকে ৭৭ শতাংশে পৌঁছেছে।