
টরন্টোর প্রধান বিমানবন্দর থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটি হোটেলের পার্কিং লটে বেশ কয়েকজন আফগান শরণার্র্থী একটি কারের ট্রাংকে থাকা বাক্স ও ব্যাগ হাতড়াচ্ছিলেন দান করা কাপড়ের জন্য। শিশুদের গায়ে লাগে এমন শীতের কোট ও জুতা খুঁজছিলেন তারা। সেই সঙ্গে চাইছিলেন নিজেদের জন্য জুৎসই মৌসুমি পোশাকটিও। কারণ আফগান শরণার্থীদের অনেকের কাছেই কানাডার পৌঁছানোর পর খরচ করার মতো কোনো অর্থ নেই। তাছাড়া ফেডারেল সরকারের তরফ থেকে সহায়তা বাবদ অর্থ দেওয়াও এখনও শুরু হয়নি।
শরণার্থী স্থায়ী আবাসনে না যাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে দেখা শোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি সেটেলমেন্ট সংস্থাকে। কিন্তু তাদের মৌলিক চাহিদার অনেক কিছুই পূরণ করা হচ্ছে না বলে জানান আফগান শরণার্থীরা।
চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে একটি হোটেল কক্ষে বসবাস করছেন সরদার খান শিনওয়ারি। তিনি বলছিলেন, আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে কাপড় চোপড় ও জুতা নেই। এখন আমি পুরনো যে জুতাটি পরে আছি সেটির সাইজ ১১। অথচ আমার পায়ে লাগে আট সাইজের জুতা।
বিমানবন্দরের পাশে দুটি হোটেলে যে ৭৭০ জন আফগান শরণার্থী অবস্থান করছেন শিনওয়ারি তাদের একজন। মহামারির নিয়ম অনুযায়ী তার পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টিন এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তারপরও সেটেরমেন্ট সংস্থার মুখাপেক্ষি হয়ে হোটেলেই অবস্থান করতে হচ্ছে তাদের। সেই সঙ্গে অপেক্ষা করে আছে ফেডারেল সরকার কর্তৃক তাদের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ ও পেমেন্ট রেসিডেন্সি কার্ডের জন্য।
শিনওয়ারি বলছিলেন, সরকারি কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে তাদেরকে কিছু পোশাক সরবরাহ করেছিলেন। কিন্তু সেগুলো ঠিকমতো গায়ে লাগে না। হোটেল কক্ষে আর বেশি দিন থাকার অর্থ হলো লন্ড্রি ও নিজস্ব কিচেন সুবিধা থৈকে বঞ্চিত হওয়া। তাছাড়া কাছাকাছি কোনো গ্রোসারি স্টোর কিংবা শিশুরা সহজে যেতে পারে এমন কোনো খেলার মাঠও নেই। যে খাবার সসরবরাহ করা হয় তাও আদর্শ নয়, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। তাদের এক মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা যা দরকার সেটেলমেন্ট সংস্থাটি তারও জোগান দিচ্ছে না।
আফগান শরণার্থীদের জন্য অনুদানের কাপড় নিয়ে আসা ইয়াসমিন নুরী নামে টরন্টোর এক বাসিন্দা বলেন, তাদের কিছুই নেই। লোকজনকে আমি স্লিপার পায়ে গ্রীষ্মের পোশাক পরে থাকতে দেখেছি। আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছে। কারণ, আবহাওয়া এখন বেশ ঠান্ডা।
ছয় সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে আরেকটি হোটেলে অবস্থান করছেন আসাদুল্লাহ রাহিমি। কখন সেটেলমেন্ট সংস্থা তাদেরকে হোটেল থেকে স্থানান্তর করবে এবং কোথায় নিয়ে যাবে সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না তিনি। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। তিনি বলছিলেন, আমাদের পরিস্থিতির কথা জানাবো এমন কেউ আমাদের নেই। আপনি কোথায় যেতে চান? আপনার কি প্রয়োজন? আপনার কি নেই? আপনার কি সমস্যা? এসব শোনার মতো কেউ নেই।
উল্লেখ্য, ৪০ হাজার আফগান শরণার্থীকে পুনর্বাসনের অঙ্গীকার করেছে কানাডা। এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৫০০ জনের বিষয়ে অনুমোদন হয়েছে এবং ৩ হাজার ২৬০ জন কানাডায় পৌঁছেছেন।