
নতুন কোভিড-১৯ ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে তরুণদের সতর্ক করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, নতুন এ ভ্যারিয়েন্ট কানাডাকে আবৃত করে ফেলতে যাচ্ছে। এটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং আক্রান্ত তরুলদের আইসিইউর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সংক্রমণের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবারও নতুন করে ৮ হাজার কানাডিয়ান ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে কানাডায় সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার।
প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, বর্তমানে অধিক সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট প্রাধান্য বিস্তার করছে। আপনি যদি তরুণও হন তাহলেও আপনি দ্রুত অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। অথবা আপনার মাধ্যমে এটি আপনার প্রিয়জনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং দ্রুত তারা অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। আমি জানি, এরই মধ্যে আপনারা অনেক কিছু করেছেন এবং অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু আমরা চাই, আরও কিছুদিন সেটা ধরে রাখুন।
কানাডার প্রধান জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তেরেসা ট্যাম শুক্রবার বলেন, যুক্তরাজ্যে সনাক্ত হওয়া বি.১.১.৭ ভ্যারিয়েন্টটি এই মুহূর্তে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। গত সপ্তাহে নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত কানাডাজুড়ে ২৫ হাজার মানুষ নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন। এর ৯০ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছেন বি.১.১.৭ ভ্যারিয়েয়েন্টে। বর্তমান যে প্রবণতা তাতে ভ্যাকসিনেশন এ সংকট অবসানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হলেও ভাইরাসটিকে এক ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে দেওয়ার অবস্থাতেও আমরা নেই।
ডা. তেরেসা ট্যাম বলেন, গত সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ৭ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে আইসিইউতে রোগী ভর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৩ শতাংশ।
কানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ডা. অ্যান কলিন্স বলেন, সারাদেশের আইসিইউতে কর্মকরত বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আমরা ৩০ ও ৪০ বছর বয়সীদের সম্পর্কে হৃদয়বিদারক কাহিনী শুনতে পাচ্ছি।
সক্রিয় মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে এবং নতুন ভ্যারিয়েন্টের কাছে তাদের শেষ পর্যন্ত হার মানতে হচ্ছে। নতুন এ ভ্যারিয়েন্ট পুরো পরিস্থিতিটাই বদলে দিয়েছে। অনেকের জন্যই এটা জীবন-মরণ অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোভিড-১৯ আইসিইউ ওয়ার্ডের করুণ পরিস্থির কথা টুইটারে শেয়ার করেছেন ডা. মাইকেল ওয়ার্নার। সংক্রমণের আগে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবান ৩০ বছর বয়সী এক রোগীর কথা বলেছেন তিনি। ডা. ওয়ার্নার টুইটারে লেখেন, তিনি অত্যাবশ্যকীয় কর্মী ছিলেন না। একটি আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন তিনি। আিফসে বসেই কাজ করতে হতো তাকে। অন্য এক সহকর্মীর সঙ্গে একই কক্ষে বসে কাজ করতে হতো তাকে। কিন্তু ওই সহকর্মী ছিলেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে উদাসীন। মাস্কও সব সময় পরতেন এবং তার মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হন ৩০ বছর বয়সী ওই কর্মীও। এক পর্যায়ে তার রক্তও জমাট বেঁধে যায়। তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন মার্চের প্রথম দিকে।
এ ধরনের হৃদয়বিদারক গল্প আসতেই থাকবে, এমন মন্তব্য করে ডা. তেরেসা ট্যাম বলেন, নতুন করে কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ আরোপের সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি। সংক্রমণের গ্রাফটি নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং ভ্যাকসিন নিন। তাৎক্ষণিকভাবে ভ্যাকসিন সংক্রমণের গ্রাফটি নি¤œমুখী করতে পারবে না হয়তো, তবে আমরা উন্নতি করছি। কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যক কানাডিয়ান এখনও ভ্যাকসিন নেননি এবং বেশিরভাগই নিয়েছেন এক ডোজ করে।