
এটা বললে বাড়িয়ে বলা হবে না যে, রানীর হৃদয়ে কানাডার জন্য বিশেষ একটা স্থান ছিল। একজন উৎসুক বিশ^ ভ্রমণকারী হিসেবে তিনি কানাডা সফর করেছেন অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশিবার। এবং বাড়িতে কানাডার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল।
কানাডিয়ান হেরিটেজ ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, এক রাতের জন্য সফর বা উড়োজাহাজের জ্বালানি সংগ্রহের জন্য বিরতিকে হিসাবে নিলে ১৯৫২ সালে সিংহাসনে আরোহণের পর থেকে কমপক্ষে ৩১ বার কানাডা ভ্রমণ করেছেন।
রাজ পরিবারের সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, কানাডার পর তিনি সবচেয়ে বেশিবার ভ্রমণ করেছেন অস্ট্রেলিয়া। যাত্রাবিরতি বিবেচনায় নিলে মোট ৩১বার অস্ট্রেলিয়া সফর করেছেন তিনি। মনার্কিস্ট লিগ অব কানাডার মুখপাত্র ব্যারি ম্যাকেঞ্জি বলেন, আমার মনে হয়, আমাদের জন্য তাঁর মধ্যে একটা উষ্ণ ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল। কানাডিয়ানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও এখানকার জীবন সম্পর্কে একটা রুচি গড়ে তোলার সুযোগ গ্রহণ দারুণ কাজ করেছিলেন তিনি।
রানীর স্মরণীয় কানাডা সফর: রানী সিংহাসনে আরোহনের আগেই কানাডার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ১৯৫১ সালের ৮ অক্টোবর কানাডার মন্ট্রিয়ল-ডোরভাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রিন্সেস এলিজাবেথ এবং সেখানে তিনি ১৫ হাজার মানুষের সাক্ষাৎ পান। পরবর্তী ৩৩ দিন প্রিন্সেস ও তাঁর স্বামী প্রিন্স ফিলিপ পুরো কানাডা ভ্রমণ করেন এবং ফিরে আসেন। সে সময় প্রত্যেক প্রদেশে যান তাঁরা এবং সবমিলিয়ে ৬০টি কমিউনিটি সফর করেন।
রানী প্রথম সরকারি সফরে কানাডা আসেন ১৯৫৭ সালের হেমন্তে। চার দিনের ওই সফরে তিনি প্রথম টেলিভিশনে ভাষণ দেন এবং ১৯৫৭ সালের ১৩ অক্টোবর রিডো হল থেকে তা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। পরদিন সেনেট চেম্বারের সিংহাসন থেকে বক্তৃতা পাঠের মধ্য দিয়ে তিনি কানাডিয়ান পার্লাামেন্টের নতুন অধিবেশন উদ্বোধন করেন। ওই বক্তৃতাও টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়।
রানী কানাডায় সবচেয়ে লম্বা সফরটি করেন ১৯৫৯ সালের গ্রীষ্মে। ৪৫ দিনের ওই দীর্ঘ সফর শুরু হয় ১৯৫৯ সালের ১৮ জুন পূর্ব নিউফাউন্ডল্যান্ডে।
কানাডার শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং প্রিন্স ফিলিপ ছয়দিনের সফরে অটোয়া ও মন্ট্রিয়লে আসেন ১৯৬৭ সালের গ্রীষ্মে। পার্লামেন্ট হিলের নিচে রৌদ্রজ্জ্বল পরিবেশে তিনি জন্মদিনের বিশাল কেক কাটেন এবং ৫০ হাজার মানুষ তা প্রত্যক্ষ করে।
১৯৮২ সালের বসন্তেও কানাডা সফর করেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ওই সফরে প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর সঙ্গে কনস্টিটিউশন অ্যাক্টের ঘোষণায় স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আইনটি ব্রিটিশ সংসদের অনুমোদন ছাড়াই কানাডাকে সংবিধান সংশোধনের সুযোগ দেয়।
রানী শেষবার কানাডা সফরে আসেন ২০১০ সালের গ্রীষ্মে। বিশাল এই ভূখ-ের ব্যাপারে রানী তাঁর অনুভূতির কথা ওই সফরে হ্যালিফ্যাক্সে বিপুল জনতার সামনে প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাড়িতে আসাটা দারুণ অনুভূতি। আমার মা একবার বলেছিলেন, কানাডার রানীর কাছে এই দেশটা বাড়ির বাইরে থেকেও বাি বলে মনে হয়। সেই অনুভূতিটা যে এখনও আছে, সেটা জানাতে পেরে আমি খুশি।