অন্টারিওর প্রায় ৭০ শতাংশ নার্স সময়ের অভাবে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারেন না বলে জানিয়েছেন। আর পেশা ছাড়ার কথা ভাবছেন প্রতি দুইজনের মধ্যে একজন নার্স। রেজিস্টার্ড নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব অন্টারিও পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডায়ানে মার্টিন এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা বিশ্বাস এই ফলাফল লোকজনকে বিস্মিত করবে। কারণ, জনবল অপর্যাপ্ত হওয়ায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে সাতজন নার্সই রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে দেখছেন। ভয়ের কথা হলো, এটাই এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
সারাদেশের ৫৫ হাজার নার্সের প্রতিনিধিত্ব করছে রেজিস্টার্ড নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব অন্টারিও। তাদের মধ্যে ৭৬৩ জন অনলাইন সমীক্ষায় অংশ নেন। ১ থেকে ৯ মে সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৯৩ শতাংশ নার্সই বলেছেন গত দুই থেকে তিন বছরে তাদের কাজের চাপ বেড়ে গেছে। রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়ার মতো সময় ও সম্পদ তাদের নেই বলে জানিয়েছেন ৬৮ শতাংশ নার্স।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬৬ শতাংশ নার্স বলেছেন, জনবল সংকটের কারণে একজন নার্সকে এক সঙ্গে একাধিক রোগীকে দেখভাল করতে হয়। বাড়তি ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয় বলে জানিয়েছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৭ শতাংশ নার্স।
নাম প্রকাশ না করে একজন নার্স সমীক্ষায় লেখেন, আরপিএন হিসেবে আমাকে একাধিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। আরপিএন দায়িত্বের বাইরেও আমাকে পিএসডব্লিউ কাজ, ডাইনিং রুম, রিসিপশনের কাজও সামলাতে হয়। আমার শিফটে আমাকে ৪৫ জন রোগীকে ওষুধ খাওয়াতে হয়। সংখ্যাটা অনেক বেশি। এছাড়াও চিকিৎসা এবং জরুরি রোগীদের সামলাতে হয়। একজন নার্সের পক্ষে এগুলো যথেষ্ট কাজ।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজন নার্স তাদের পেশায় মানসিক চাপ অনুভব করার কথা জানিয়েছেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় এ হার ১০ শতাংশ বেশি। জনবল সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ৮৮ শতাংশ আরপিএন। এর মধ্যে অনেকেই চাপ অনুভব করছেন এবং বিচ্ছিন্নভাবে চলে যাচ্ছেন।
জনবল সংকটের কারণে প্রতি দশজনের মধ্যে সাতজন নার্সকে নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এর মধ্যে ৩৯ শতাংশকে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক ছাড়াই ওভারটাইম করতে হয়। জনবল ঘাটতির কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কথা জানিয়েছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রতি ১০ জনের মধ্যে সাতজন।
এ অবস্থায় ৪৭ শতাংশ আরপিএন নার্সিং পেশা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পরিচালিত সমীক্ষায় হারটি ছিল ৩৪ শতাংশ। তাদের মধ্যে প্রতি দশজনের ছয়জনই স্বাস্থ্যসেবা খাতই ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন।
পেশা ছেড়ে দেওয়ার প্রধান কারণ অপ্রতুল মজুরি, অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং অন্যায্য বেতন।
এমন এক সময় সমীক্ষার এ ফলাফল সামনে এলো যখন প্রদেশের ইআর এবং আইসিইউ ভয়াবহ নার্স সংকটের ভুগছে। টরন্টো জেনারেল হসপিটালে গত দুই সপ্তাহের জন্য ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেড অ্যালার্টের অধীনে রয়েছে।
জনবল সংকট দূরীকরণে সাম্প্র্রতিক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কোনো সমাধান দিতে পারেন নি প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড। এর পরিবর্তে ফেডারেল সরকারের প্রতি আরও অর্থায়নের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।