বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
9.4 C
Toronto

Latest Posts

বাড়ি ক্লোজ না করার পরিণাম

- Advertisement -
ছবি/হেরম্যান জেলি ভ্যান মোরিক

বাড়ি ক্লোজ বলতে কী বোঝায়? – আপনি একজন বায়ার। বাড়ি কিনতে চলেছেন। বাড়িতে অফার দিয়েছেন। সেলার সেই অফার একসেপ্ট করেছে। একটি ক্লোজিং ডেট রয়েছে। এই ডেটের মধ্যে আপনাকে মর্টগেজ পেতে হবে। অথবা বলা যায়, ফান্ড এরেঞ্জ করতে হবে। এরপর সেলারকে বাড়ির দামের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আইনজীবীর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে বায়ার বাড়ির মালিকানা বুঝে নিবেন। অল্প কথায় এই হল বাড়ির ক্লোজিং।

ধরা যাক, আপনি এক মিলিয়ন ডলারের একটি বাড়ি কিনেছেন। ২০% ডাউনপেমেন্ট দিবেন অর্থাৎ ২ লাখ ডলার। বাকি ৮ লাখ ডলার মর্টগেজ নিচ্ছেন। এই ৮ লাখ ডলারের মর্টগেজের ব্যবস্থা করতে হবে ক্লোজিং ডেটের মধ্যে। বাড়ির অফারে যে ডেট উল্লেখ থাকবে সেই ডেটের মধ্যে এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

- Advertisement -

এখন এই নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে কী ঘটতে পারে?
আমরা দেখেছি টরন্টো, বৃহত্তর টরন্টো এমনকি পুরো কানাডা জুড়েই বাড়ির দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছিল গত বছরের শেষ দিকে। সরকার নানাভাবে চিন্তা করছিল কীভাবে এই দামবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা যায়। এ বছরের মার্চের পর থেকে ব্যাংক অফ কানাডা ইন্টারেস্ট রেট বাড়ায়। ফলে অশান্ত রিয়েল এস্টেট মার্কেট ধীরে ধীরে শান্ত হতে শুরু করে! এই মুহূর্তে ব্যাংক অফ কানাডার প্রাইম রেট ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

এ বছর ২ মার্চ ০.২৫ % ইন্টারেস্ট রেট বাড়ে। এরপর দুই দফায় ১৩ এপ্রিল এবং ১ জুন ইন্টারেস্ট বাড়ে ০.৫০% করে। জুলায় মাসের ১৩ তারিখে সবাইকে অবাক করে দিকে ব্যাংক অফ কানাডা ইন্টারেস্ট রেট বাড়ায় ১%! ধারণা করা হচ্ছে এবছর আরও একবার ইন্টারেস্ট রেট বাড়তে পারে। এর মাধ্যমে বাড়ির দামের লাগামহীন ঘোড়ার রাশ টেনে ধরলো সরকার। ৪.৭% প্রাইম রেট হলেও বিভিন্ন ব্যাংক সামান্য কিছু ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। তবুও তা মোটামুটি ৪% ওপরে।

ইন্টারেস্ট রেট বাড়ার কারণে অনেক বায়ারকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশেষ করে যারা গত মার্চ মাসে বাড়ি কিনেছেন অথবা ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়ি কিনেছেন, যাদের ক্লোজিং ডেট ছিল এপ্রিল, মে, জুন, বা জুলাই মাসে। সেসব বায়ারদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কেন? কারণ যখনই ইন্টারেস্ট রেট সরকার বাড়ালো, তখন বাড়ির দামটা কমতে শুরু করলো। যেটি শুরুতে লিখেছিলাম, ১ মিলিয়ন ডলার দিয়ে বাড়ি কিনছেন। আপনার ডাউন পেমেন্ট আছে ২ লাখ ডলার। মর্টগেজ লাগবে ৮ লাখ ডলার।

এখন ব্যাংক কীসের ভিত্তিতে আপনাকে এই মর্টগেজ বা লোন দিবে? ব্যাংক দেখবে মর্টগেজ দেওয়ার সময় এই বাড়ির মার্কেট ভ্যালু ১ মিলিয়ন ডলার আছে কিনা। এর উপর ভিত্তি করেই ব্যাংক আপনাকে অর্থটা দিবে।

ব্যাংক তখন এই ৮ লাখ ডলারের লোন দিতে চায় না, কারণ ব্যাংক দেখে বাড়ির দাম কমে যাচ্ছে। ব্যাংক এপ্রাইজাল করে দেখবে বাড়ির তখনকার মূল্য কত। দেখা গেছে মার্কেটে এসব বাড়ি প্রায় ২ লাখ ডলার পর্যন্ত কমে গেছে। অর্থাৎ দাম নেমে এসেছে ৮ লাখ ডলারে। এখন ব্যাংক এই ৮ লাখ ডলারের ওপর নির্ভর করে মর্টগেজ দিবে। যদি লোন টু ভ্যালুর ৮০% ব্যাংক দেয় তাহলে মর্টগেজ এমাউন্ট দাঁড়ায় ৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার। তো আপনাকে এখন সর্বমোট ৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার জোগাড় করতে হবে। আপনার কাছে আছে ২ লাখ ডলার। তারমানে ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার কম রয়েছে। যাকে আমরা রিয়েল এস্টেটের ভাষায় বলি শর্টফল! এই শর্টফলের অর্থ এখন আপনাকে জোগাড় করতে হবে। যা জোগাড় করতে গিয়ে অনেকেই হিমশিম খান।

গত মার্চের পর থেকে এপ্রিল, মে, জুন, জুলাইতে রিয়েল এস্টেট মার্কেটে একরকম প্রাইস কারেকশন চলছে। মার্কেট শিফটিং হচ্ছে। এক সময় যেমন হাই সেলার মার্কেট ছিল, সেলারদের খুবই রমরমা অবস্থা ছিল। একটি বাড়ি মার্কেটে আসা মাত্র ৩০/৪০/৫০ টা অফার পড়েছে। কে কত বেশি প্রাইস, ডিপোজিট দিয়ে বিডিং করে সেই বাড়িটি জিততে পারে তার প্রতিযোগিতা চলেছিল বায়ারদের মধ্যে।
সেলারদের সেই হানিমুন পিরিয়ড এখন আর নেই। মার্কেট ধীরে ধীরে কারেকশনের দিকে গেল। শুরুতে ব্যালেন্স মার্কেট হয়েছিল। কয়েকদিনের মধ্যে বায়ার মার্কেট হচ্ছে, ইতোমধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুরুও হয়ে গেছে। বায়ার মার্কেটে বাড়ি থাকলেও বায়াররা সব চুপচাপ থাকেন। ইন্টারেস্ট রেট অনেক বেশি হওয়াতে মার্কেটে ঢুকতে ভয় পান।

যেটি বলছিলাম, যে ক্লোজিং ডেটে ক্লোজ করতে না পারলে তখন কী হবে। উদাহরণস্বরূপ ১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের শর্টফল হলে সেটি প্রাইভেট লেন্ডার থেকে নিতে হতে পারে। মার্কেটে যখন এমন কারেকশন, আপনারা যারা এর মধ্যদিয়ে গিয়েছেন তারাও জানেন যে এই যে বাড়তি শর্টফলের অর্থ লেন্ডাররা দিতে চান না। কারণ মার্কেটটা পরে যাচ্ছে। প্রাইভেট লেন্ডাররাও জানেন না যে মার্কেটটা ভবিষ্যতে কোন দিকে যাচ্ছে। তাই অনেক লেন্ডার লেন্ডিং করলেও ইন্টারেস্ট অনেক বেশি নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে বায়ারের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

অনেক সময় বায়ার যখন এই শর্টফলের অর্থ জোগাড় করতে ব্যর্থ হন, তখন সেলারের সঙ্গে বায়ারের একটা দেন দরবার চলে। সেলারকে প্রাইস কমানোর জন্য অনুরোধ করা হয় বায়ারের পক্ষ থেকে। শর্টফল যেটুকু আসছে সেটুকু কমানো, অথবা মূল দাম থেকে কতটা কমাতে পারে, অথবা আসলেই কমাবে কিনা এই নিয়ে কথার খেলা চলতে থাকে।

ক্লোজিং ডেটে এই ১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের জোগাড় না হলে, কিংবা বলা যায় মর্টগেজসহ পুরো ১ মিলিয়ন ডলারের জোগাড় করতে না পারলে যা ঘটতে পারে-

১। অফারের সময় বায়ার যে ডিপোজিট দিয়েছিল সেটা সেলার ফরফিট বা বাজেয়াপ্ত করতে পারেন। ডিপোজিটের অর্থ সেলারের ব্রোকারেজের ট্রাস্ট একাউন্টে জমা থাকে। অনেক সময় সেলারের আইনজীবীর কাছেও থাকতে পারে। ১ মিলিয়ন ডলারের জন্য বায়ার হয়ত ৫০ হাজার ডলার (মূল দামের ৫%) ডিপোজিট দিয়েছিলেন। এখন সেলার চাইলে এই অর্থ আর ফেরত দিবেন না।

২। সেলার এই বাড়িটি আবারও মার্কেটে এনে বিক্রি করবেন। সেলার তখন বিক্রির সময় যে দাম পাচ্ছেন, ধরলাম দাম পেলেন ৮ লাখ ডলার বা ৯ লাখ ডলার। আগের চেয়ে ১ বা ২ লাখ ডলার কম পেলেন। এই যে দামের ডিফারেন্স আসলো সেটি আগের বায়ারকে পরিশোধ করা লাগতে পারে।

৩। বায়ার ক্লোজিং ডেটে বাড়ির মূল্য পরিশোধ করতে না পারলে আলাদা করে সময় চাইতে পারেন যাকে বলে এক্সটেনশন। বায়ার তার আইনজীবীর মাধ্যমে এই সময় চান সেলারের আইনজীবীর কাছে। তখন সেলারের আইনজীবী তার এই অতিরিক্ত কাজের জন্য ফি ধার্য করেন যা বায়ারকে পরিশোধ করতে হয়।

৪। সেলার চাইলে বায়ারকে এক্সটেনশন দিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে সেলার নতুন ক্লোজিং ডেট পর্যন্ত প্রতিদিন বিক্রিত দামের ৬/৭% হারে অর্থ দাবী করতে পারেন। কারণ সেলারকেও এই সময় পর্যন্ত মর্টগেজ, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল, প্রপার্টি ট্যাক্স, ইনস্যুরেন্স ইত্যাদি দিতে হবে। এতে করে বায়ারের আরও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়।

বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে আপনি যদি শর্টফলের অর্থ যেকোনভাবে জোগাড় করতে পারেন এবং ক্লোজিং ডেটেই ক্লোজ করতে পারেন। যদি সেলারের সাথে নেগোশিয়েট করে কিছু কমানো যায় তাহলে চাপটা কিছুটা হলেও কমে। এক্ষেত্রে আপনার রিয়েল এস্টেট এজেন্টকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। তাই ক্লোজিং ডেটে ক্লোজ করতে পারলে আপনি বিভিন্ন জটিলতা এড়াতে পারবেন। এমনকি মামলা-মোকদ্দমা থেকেও রেহাই পেতে পারেন।

আর একেবারেই যদি ক্লোজিং ডেটে ক্লোজ করতে না পারেন তবে আপনার যে আইনজীবী তার পরামর্শ নেন। তিনি আপনাকে কী ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন তা তুলে ধরবেন। সেলারের এজেন্ট, সেলারের আইনজীবীর সাথে কথা বলে একটা সমঝোতায় আসতে হবে। না হলে সেলার এবং বায়ার উভয়েরই ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকবে। এজন্য চেষ্টা থাকবে যাতে ক্ষতি কম হয়। কারণ সেলার এই বাড়ি আবারও মার্কেটে এনে বিক্রি করছেন, আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় তারও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আবার বায়ারের ডিপোজিটের অর্থ বাজেয়াপ্ত হচ্ছে, এতে বায়ারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সময় বেশি গড়িয়ে গেলে এই ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাই ক্ষতি যত কমানো যায় সেই চেষ্টা করতে হবে।

আপনারা যারা বাড়ি কিনবেন তাড়া ভেবে-চিন্তে, মার্কেট এনালাইসিস করে তারপর রিয়েল এস্টেট মার্কেটে ঢুকবেন। এজন্য বিশ্বস্ত, মার্কেট সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন এমন একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্টের পরামর্শ নিতে পারেন।

বাড়ি কেনা-বেচা সংক্রান্ত যে কোন পরামর্শের জন্য যে কোন সময়ে আমাকে ফোন করতে পারেন:- 647-572-5600 এই নম্বরে। অথবা ই-মেইলেও যোগাযোগ করতে পারেন এই ঠিকানায়- [email protected]। আমার ওয়েবসাইট www.MahbubOsmani.com । আমি সম্পূর্ণ ফ্রিতে তথ্য দেই এবং এর বিনিময়ে আমার কাছ থেকে বাড়ি কেনা অথবা বেচা বাধ্যতামূলক নয়!
আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন কামনা করি ।

- Advertisement -

Latest Posts

Don't Miss

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.