
গত ১৭ এপ্রিল আমরা টরন্টোতে বৈশাখী উদযাপন করলাম। ইচ্ছে হলো এই উদযাপন নিয়ে কিছু লিখি। সাধারণত আমি বড়ো করে কিছু লিখি না। অবশ্য এর একটা কারণ আছে। সেটা হলো দীর্ঘদিন একজন লেখকের লেখালেখির সাথে আমার বসবাস। তাই নিজেকে আর লেখার জগতে জড়াতে ইচ্ছে করে না।
সেদিন আমরা ৪৫ জন নারী একসাথে হয়ে নিজেরা নিজেদের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। সবসময়ই তো আমরা পরিবারের সদস্যরা মিলে বন্ধুদের পরিবারগুলোর সাথে এমন সব উৎসবে যোগদান করি। যেমন ১৬ তারিখে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশও নিয়েছি সবাই মিলে। মনে হলো শুধু নারীরা মিলে কিছু করি, যার যেমনটি করতে মন চায় ঠিক তেমন করে। তাই এই উদ্যোগ নেওয়া।
আমাদের আয়োজন ছিল
দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এতোটা সময় কীভাবে যে কেটে গিয়েছিল বুঝতেই পারিনি আমরা।
প্রথমে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে এই অনুষ্ঠানের প্রাথমিক উদ্যোগ নেই। আস্তে আস্তে কমিউনিটির আরও অনেক নারী বন্ধুকে আহবান জানানো হয়। সবাইকে জানানো এবং আয়োজনটি পূর্ণ করাতে বেশি ব্যস্ত ছিলাম – প্রতিমাদি, ভ্যালেনটিনা এবং আমি। সাথে শিপ্রাদি, বিন্দুদিসহ অন্যরা অনেক রকম বুদ্ধি পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়েছেন।
বিখ্যাত সেই গান “এসো হে বৈশাখ” দিয়ে শুরু করি আমরা। অনেক অপরিচিত নতুন মুখের সাথে আমাদের সবার পরিচয় হয় এই অনুষ্ঠানের পরিচয় পর্বের মাধ্যমে। একটা বৈশাখী ফ্রেম করা হয়েছিল এই আয়োজন উপলক্ষ্যে। সবাইকে বন্দি করে রাখা হয় ওই ফ্রেমে ছবি তোলার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে। অনুষ্ঠানের প্লান শুরু হতেই এই ফ্রেম বানানোর চিন্তাটা আমার মাথায় এসে গিয়েছিল। পরে দেখলাম ফ্রেমটা ভালোই মর্যাদা পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে সবাই মন-প্রাণ খুলে গান, নাচ, কবিতা এবং যার যা ইচ্ছে করেছে তাই
করেছি। কোন কিছুতেই ‘না’ বলার কেউ ছিল না। আমরা যেন সবাই বালিকা বেলায় চলে গিয়েছিলাম।
আমাদের অনুষ্ঠানে বৈশাখী সাজের একটা পর্ব ছিলো – ১ম, ২য়, ৩য় করা। এই কাজটা ছিল কঠিনতম একটি কাজ। শিপ্রাদির সাথে কথা বলে আমরা সবার নাম চিরকুটে লিখে লটারির ব্যবস্থা করি।
ওইদিন আমাদের সাথে একজন সিনিয়র দিদি ছিলেন তিনিই এই মহান কাজটা সম্পূর্ণ করেছিলেন পর পর ৩টি চিরকুট তুলে।
১ম চিরকুটে এই প্রজন্মের
নতুন বিজনেস ওমান সুইটি দাসের নামটি উঠেছিল। এখানে একটি কথা
না বললেই নয় যে গত ১৫ এপ্রিল তরুণী কালেকশন নামে একটি বুটিক হাউজ
উদ্বোধন হয়েছে টরন্টোতে। এই তরুণী কালেকশনের ওনার হলেন সুইটি দাস।
২য় চিরকুটে ববিতাদির নামটি আসায় আমরা সবাই খুব খুশি হই। ববিতাদি অনেক গুনের অধিকারী।
তিনি নকশী পিঠাসহ অনেক কিছু বানিয়ে এনেছিলেন। শেষ চিরকুটটিতে ছিল সবার প্রিয় স্বপ্নাদির নাম। আনন্দ আর দেখে কে।
বৈশাখী সাজে তিনটি পুরস্কার ছিল এবং এই পুরস্কার স্পন্সর করেছেন আমাদের সকলের প্রিয় শিপ্রাদি। আমরা সবাই দিদির কাছে কৃতজ্ঞ।
খাবারের তালিকা নাই বা বলি। দই, খই, চিড়া, মুড়ি, নাড়ু, গুড় পায়েস, মিষ্টি, ভাত, মাছ, সবজি, চাটনি, ভর্তা, শুঁটকি ইত্যাদি ইত্যাদি। বিকালে সিঙাড়া। আর শিমু আর করবী টিম হর্টন থেকে কফি আনতেও ভুল করেননি। অনেক অনেক ধন্যবাদ এই দুজনকে। খুব ভালো লাগতো যদি এই লেখাতে বাকি সকলের নাম উল্লেখ করতে পারতাম। সেটা সম্ভব নয় বলেই সবার একটা ছবি ব্যবহার করলাম।
দিনশেষে সবার মুখে একটাই কথা উচ্চারিত হচ্ছিলো, “অনেক অনেক আনন্দ করলাম। খুব ভালো সময় কাটালাম।” এই আনন্দ আর ভালোলাগা নিয়ে আমরা আমাদের অনুষ্ঠান শেষ করে যে যার ঘরে ফিরলাম। সবাইকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।