লিঙ্গ – ভিত্তিক সহিংসতার কারণে বাংলাদেশী-কানাডিয়ান ৮৪% নারী মানসিক এবং শারিরীর স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। একই সাথে শিশু সন্তানদের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ৫৩% নারী তাাঁদের বিবাহিত জীবনে লিঙ্গ – ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হন যা তাঁরা কখনও প্রকাশ করেনি। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং আর্থিক নির্ভরতা এর কারণ বলে জানিয়েছেন। এছাড়া ভুক্তভোগী নারীদের অধিকাংশই এক্ষেত্রে কোনো ধরনের সহায়তা চাননি। মুলত তথ্যের অভাব, সন্তানদের ভবিষ্যত, ব্যয়বহুল সহায়তা পদ্ধতি ও নিরাপত্তাকে এর জন্য দায়ী করেছেন।
কানাডিয়ান সেন্টার ফর ইনফরমেশান এন্ড নলেজ সম্প্রতি এই গবেষণা পরিচালনা করেছে। লিঙ্গ – ভিত্তিক সহিংসতার কারনে বাংলাদেশী কানাডিয়ান নারীদের মানসিক ও শারিরীক স্বাস্থ্যের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে এটি ছিল গবেষণায় অনুসন্ধানের মুল বিষয়। এতে পরিবার, সমাজ ও কর্মস্থলে সংহিসতায় মহিলারা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হন এবং এর ফলে তাঁদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে দুর্দশার বিষয়গুলো গবেষণায় উঠে এসেছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার, টরন্টো সময় বেলা ৩টায় ভার্চুয়ালি এক আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনের পরিচালক তৌহিদা চৌধুরী ও উইমেন কাউন্সেলর সোহেলিয়া বন্নি। সমস্যার উত্তরণে সংগঠনটি প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে।
কানাডিয়ান সেন্টারের প্রেসিডেন্ট ইমাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল এ আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট এলাকার এমপিপি ডলি বেগম, বিগত নির্বাচনে ফেডারেল এমপি প্রার্থী আফরোজা হোসেন, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আসমা আহমেদ, ব্যারিস্টার উম্মে হাবিবা, ডাক্তার নীলঞ্জনা দত্ত, সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর, ড. একেম এম আলমগীর, ড. মাহবুব হাসান, ড. নূর কাজী, সমাজ কর্মী রীনা সেন গুপ্তা, আলমগীর কবির প্রমুখ।
কানাডিয়ান সেন্টারের গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, কভিডকালীন সময়ে বাংলাদেশী কানাডিয়ান মহিলাদের ৫০% লিঙ্গ – ভিত্তিক সহিংসতার শিকার। এছাড়া লিঙ্গ – ভিত্তিক সহিংসতার ৭৫% ঘটে গৃহে। আর ভুক্তভোগি নারীদের ৫০% এর বয়স ২৮ থেকে ৩৭ বছরের মধ্যে। শুধুমাত্র স্বামীর দ্বারাই মহিলারা নির্যাতিত হন না, শ্বাশুড়ী, সন্তান এবং পুত্রবধু দ্বারাও মানসিক নির্যাতিনের শিকার হন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী নারীগণ নির্যাতনের একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছেন, যেমন; ৬৭% পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, প্রকাশ না করার সংস্কৃতি ৫০%, আর্থিক নির্ভরতা ৩৯%, আইন না জানা ২৮%, কভিডের কারণে দারিদ্রতা বেড়ে যাওয়া ২২%, ভাষাগত সমস্যা ২২%, ধর্মীয় বিশ্বাস ১৪% প্রভৃতি। পুরুষরাও বাংলাদেশী কানাডিয়ান নারীদের নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি বিশ্বাস করেন। তাঁরা মনে করেন, শিক্ষার অভাব,আর্থিক নির্ভরতা, পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও বন্ধু-বান্ধব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে সহিংসতা বৃদ্ধি পায়।
সমস্যার উত্তরণে কানাডিয়ান সেন্টারের উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে, নারীরা যাতে প্রতিকার ও সেবা সম্পর্কিত তথ্য দ্রুত পেতে পারে তা নিশ্চিত করা, বিভিন্ন কমিউনিটি কার্যক্রমের মাধ্যমে নারীদের শিক্ষা প্রদান, ভোক্তভোগিদের ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক কাউন্সেলিং ও মেন্টরশিপ প্রদান, কমিউনিটির সমমনা সংগঠনগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করা, লিঙ্গ – ভিত্তিক সহিংস রোধে অর্থ বরাদ্দ, সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রভৃতি। গবেষণা প্রতিবেদনটি কানাডিয়ান সেন্টারের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
ফেডারেল গর্ভমেন্টের ডিপার্টমেন্ট অফ উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার ইকুয়ালিটি (WAGE) এবং কানাডিয়ান উইমেনস ফাউন্ডেশন গবেষণাটি সম্পন্ন করতে সহায়তা করে। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে এবছরের জানুয়ারি এ ছয় মাসে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। কানাডিয়ান সেন্টারের ইমাম উদ্দিন, তৌহিদা চৌধুরী ও সোহেলিয়া বন্নি এতে গবেষক ছিলেন। এ ছাড়াও কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এতে সহায়তা করেন। প্রশ্নমালা, ফোকাস গ্রুপ ডিসকাসন, কী ইনফরম্যান্ট ইন্টারভিউ এবং ইন-ডেপথ ইন্টারভিউর মাধ্যমে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। ৭৭ জন নারীর উপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়। উল্লেখ্য, কানাডিয়ান সেন্টার টরন্টোভিত্তিক একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা। ইতোমধ্যে এই সংস্থা গর্ভমেন্ট অব কানাডা, কানাডা রেডক্রসসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সাথে সম্মিলিতভাবে কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করছে।