কানাডার উৎপাদন খাতে শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এক সমীক্ষা অংশগ্রহণকারী ৮২ শতাংশ কারখানা শ্রমিক সংকটের কথা জানিয়েছে। আর ৭৫ শতাংশ শ্রমিক নিয়োগে অসুবিধা অথবা গত বছরের চেয়ে বেশি সংকটের কথা জানিয়েছে।
কানাডিয়ান ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স (সিএমই) গত অক্টোবরে ৪৪৫টি কোম্পানির ওপর সমীক্ষাটি পরিচালনা করে। মঙ্গলবার প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা যায়, কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকেই শ্রমিক ও সামগ্রি সংকট খাতের পুনরুদ্ধারে বিঘœ ঘটাচ্ছে।
সিএমইর প্রেসিডেন্ট ডেনিস ডার্বি বলেন, শিল্প কারখানাগুলো দক্ষ শ্রমিক খুঁজে পেতে ও ধরে রাখতে আগে থেকেই যে হিমশিম খাচ্ছিলো। মহামারির কারণে অভিবাসন কমে যাওয়ায় এবং পেশার বিষয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনার কারণে এখন তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতো খারাপ অবস্থা সম্ভবত আগে কখনও আমরা দেখিনি। মজুরি নিয়ে প্রতিযোগিতার কারণে ছোট কোম্পানিগুলোকে সব সময়ই সমস্যার মধ্যে থাকতে হয়। এখন বড় কোম্পানিগুলোও দক্ষ শ্রমিক খুঁজছে। কিন্তু পাচ্ছে না।
শ্রমিক সংকটের জন্য মহামারির কারণে অভিবাসন হ্রাস পাওয়াকে দায়ি করেন ডার্বি। কারণ, নতুন আসার পর অভিবাসীরা মূলত উৎপাদন খাতের কাজকেই বেছে নেন। বেবি বুমারদের দিন শেষ হয়ে আসা ও উৎপাদন খাতে ছেড়ে বাড়িতে বসে কাজ করা যায়র এমন পেশা বেছে নেওয়ায় এ খাতে শ্রমিক সংকটের আরেকটি কারণ। বিশেষ করে নারীদেরকে বাড়িতে ভ্যাকসিনেশনের বাইরে থাকা শিশুদের কারণে কাজ ছাড়তে হয়েছে। তাদের দেখাশোনার বাধ্যবাধকতা থেকেও উৎপাদন খাত ত্যাগ করতে হয়েছে অনেককে।
ডার্বি বলেন, মোট শ্রমশক্তির অর্ধেক নারী ও মেয়ে। অথচ উৎপাদন খাতের মোট কর্মীবাহিনীতে তাদের হিস্যা ২০ শতাংশেল মতো। আপনি যদি দক্ষ শ্রমিকের কথা বিবেচনা করেন তাহলে তাদের হিস্যা আরও কম মাত্র ৫ শতাংশ। কানাডার অর্থনৈতিক সুস্বাস্থ্যের জন্য এই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা জরুরি।
সিএমইর সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৪২ শতাংশ কোম্পানি বলেছে, শ্রমিক সংকটের কারণে তাদেরকে ক্রয়াদেশ হারাতে হয়েছে অথবা বাতিল করতে হয়েছে। অথবা সময়মতো সরবরাহ না দিতে পারায় জরিমানা গুনতে হয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে কাজ কানাডার বাইরে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে ১৭ শতাংশ কোম্পানি। শ্রমিক সংকট না থাকলে তাদের কর্মীবাহিনী ১ থেকে ১০ শতাংশ বেশি থাকতো বলে মত দিয়েছে ৮০ শতাংশ কোম্পানি। মানসম্পন্ন কর্মী আকৃষ্ট ও তাদের ধরে রাখাকে প্রধান উৎকণ্ঠা বলে মনে করে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশ কোম্পানি। ৬০ শতাংশ কোম্পানি কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি ও ৪৭ শতাংশ সরবরাহ ব্যবস্থাকে প্রধান উদ্বেগ মনে করে। ৮৮ শতাংশের মতে, তাদের সরবরাহ সময় গত বছরের চেয়ে বেড়ে গেছে। প্রায় ৯০ শতাংশ কোম্পানি আগামী বছর পণ্যের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।