বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
1.7 C
Toronto

Latest Posts

যাপিত জীবন

- Advertisement -

শুক্রবার সকালে অ্যালার্ম দিয়েছিলাম পৌনে সাতটার। সেটা বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তার কাছে আধা ঘন্টা চেয়ে নিয়ে আবার ঘুম দেই। ওঠার ঠিক আগে আমার মেয়েটা এসে বিড়ালছানার মতো কম্বলে ঢুকে আমার গলা জড়িয়ে নাক ডাকা শুরু করে দিলো। ছেলেটা গিয়ে ঢুকলো তার মায়ের কম্বলে। একদিকে ভালোবাসা, অন্যদিকে পেটের দায়; অস্বস্তিকর অবস্থা। আরো পনেরো মিনিট চেয়ে নিতেই হলো। সাড়ে সাতটায় তার বহু বন্ধন ঠেলে দিয়ে, গা ঝাড়া দিয়ে উঠে গেলাম মাছের বাপের মতো।

- Advertisement -

শনি কিংবা রবিবার হলে আলাদা কথা। তখন সকালে উঠেই আমার প্রথম কাজ হয় মেয়েটার কাছে যাওয়া। চুপ করে তার কম্বলের মধ্যে ঢুকে পড়ি। তার ঘুম ভেঙে গেলে খুশি হয়ে গল্প জুড়ে দেয়! কত আহ্লাদ, ভালোবাসা!

হাত মুখ ধুয়ে দৌড়াই রান্নাঘরে। তিনটা চুলা একসাথে জ্বালিয়ে একটাতে চায়ের পানি, একটাতে তাওয়া, আরেকটাতে ডিম্ পোচের ছোট প্যান বসিয়ে দেই। ফ্রিজ থেকে চায়ের দুধ আর ফুলকপি ভাজি বের করি। প্যাকেট থেকে একটা নান তাওয়ায় দিয়ে, প্যানে ডিম্ ছেড়ে লবন ছিটিয়ে, কাপে দুধ, চিনি ঢালী। দশ মিনিটে সবগুলো চুলা বন্ধ করে, চা ঢেলে নিয়ে খেতে বসে যাই।

মাল্টি টাস্ক করতে দেখেছিলাম আমেরিকার মিনেসোটায় ট্রিনিং-এ গিয়ে। ট্রেইনিং সেন্টারে লাঞ্চ ব্রেক-এ “আরামার্ক” ফুড সার্ভিস সেন্টারে খাবারের জন্য টোকেন নিয়ে দাঁড়াতাম। ওখানে এক সুপারস্মার্ট; সিক্সটি প্লাস ভদ্রমহিলা কিচেন থেকে খাবার সার্ভ করতো। তার অদৃশ্য এক ডজন হাত ছিল। প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ জনকে স্বল্প সময়ে খাবার দিত। তাওয়াটা ছিল বিশাল। একবারে কমপক্ষে পাঁচজনের অর্ডার নিয়ে বার্গার, স্যান্ডউইচ, পাস্তা, ভেজিটেবলস ভাজা চলতো। পাশেই তেলে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ওনিয়ন রিং ভাজতো। অর্ডারে কোনো মিক্স হতো না। তার মেমোরিও ফটোগ্রাফিক। ওরকম তড়িৎ কর্মা রাঁধুনী দ্বিতীয়টা দেখেছি বলে মনে হয় না। মুখটা ছিল সবসময় হাসিমাখা, মায়াবী। কী এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব!

সেই ভদ্রমহিলা আমার নিজের অজান্তেই হয়ে গেলেন আইকন। দ্রুত কাজ করার সময় আমার চোখের সামনে ভাসে তার চেহারা আর মেশিনের মতো হাত চালানো। ইচ্ছে হয় কিঞ্চিৎ তার মতো হতে।

খাওয়া শেষে কিছু পাস্তা হট পটে ঢেলে রেডি করে ফেলি দুপুরের লাঞ্চের জন্য। আমি বের হবার ঠিক পরপরই শুরু হয়ে যাবে বাচ্চাদের নিয়ে তাদের মায়ের যুদ্ধ। মেয়েটা প্রতিদিনের মতো দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বলল, আব্বু ওয়েইট! তারপর জড়িয়ে ধরে থাকবে কিছুক্ষন। দরজা দিয়ে বের হবার সময় বলবে: “আল্লাহ হাফেজ”, “স্লামালিকুম”, “লাভ ইউ”, “মিস ইউ”, “উম্মা”.. [ফ্লাইং কিস], “বাই বাই”, “সি ইউ”।

অর্থাৎ মোট সাতটা আইটেম থাকবে তার বিদায় সম্ভাষণে! কোনো হেরফের হয় না।

প্রথম সাইটে নয়টার আগে পৌঁছানোর কথা। অফিসের নির্দেশনা। আমি অবশ্য দশ মিনিট আগেই পৌঁছে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি বড় কনস্ট্রাকশনের কাজ হচ্ছে, বিশাল ক্রেইন দাঁড় করানো। একজন ইঞ্জিনিয়ারকে বললাম, গুড মর্নিং! পার্কিং বন্ধ?

– হ্যা। তবে তুমি ইচ্ছে করলে ওই পাহাড়ে পার্ক করতে পারো- বলে আঙ্গুল দিয়ে দেখালো।

– আমি ওদিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।

পাহাড় বলতে একটা বেশ উঁচু মাটির ঢিবি। ওখানে আমার এই নিশান পাতলা মিনি ভ্যান নিয়ে উঠার প্রশ্নই উঠে না। তাদের ‘এফ-ওয়ান-ফিফটি’ পিকআপ ট্রাক অনায়াসে উঠে গেছে। তাই পাশের ছোট্ট প্লাজা’য় এসে পার্ক করতেই দেখি ওখানের প্রায় সব গাড়িতে পার্কিং পুলিশ টিকিট দিয়ে গেছে। হলুদ কাগজ ঝুলছে। হয়তো রাতে দিয়েছে। উইনশিল্ডে স্নো।

পার্ক করবো, না কী করবো না; ভাবতে থাকি। পার্কিং পুলিশ মাঝে মধ্যে আমাদের মত গরীব খেটে খাওয়া টেকনিশিয়ানদের গাড়িতে ON DUTY লেখা দেখে মাফ করে দেয়। অবশ্য তাদের মর্জির উপর। কাল দেখলাম ডাউনটাউনে শাটার স্ট্রিট-এ কানাডা পোস্টের গাড়িতেও টিকিট দিয়ে গেছে। কঠিন ব্যাপার!

আমি অবশ্য অনেকদিন কোনো টিকিট খাই না। শেষবার পঞ্চাশ ডলারের একটা খেয়েছিলাম বছরখানেক আগে। আজকে সাহস করে রেখেই দিলাম, আল্লাহ ভরসা। ম্যাক্সিমাম চল্লিশ ডলার দিবে। মাঝে মধ্যে টিকিট না খেলে হুশ হয় না। পাওনা হয়ে গেছে। এসবের মধ্যে একটা ‘এডভেঞ্চার’ ভাব আছে। কাজ সেরে দুরু দুরু বুকে এসে উইনশিল্ডে টিকিট খুঁজবো!… তবে আজকে যদি টিকিট না খাই, তবে ছেলেটার জন্য বিকালে একটা বড়সড় গরম পিজা নিয়ে বাসায় হাজির হবো।

স্কেজিউল দেখে নিয়ে নামার আগে পানি খাবার জন্য পলিথিন ব্যাগটা হাতড়াতেই বুঝলাম মারাত্মক ভুল করে এসেছি। বাসা থেকে তড়িঘড়ি করে বের হবার সময় খাবার আর পানি ফেলে এসেছি। এই গাড়ি বাইরের পার্কিঙে রাখি বলে ভেতরে পানি রাখি না, জমে বরফ হয়ে যায়। কাল রাতে বাসার গাড়ির ইঞ্জিন মেরামত করে নষ্ট পুরানা চারটা ইগনিশন কয়েল দরজার পাশে দেখেছিলাম পলিথিনের ব্যাগে। খাবারেরটা না নিয়ে ভুলে ওটা নিয়ে বের হয়ে এসেছি।

বয়সের লক্ষণ।

আমার মেয়েটার মেসেঞ্জারে কল, আব্বু তুমি ফুড রেখে গেছো!

– হা মা। ভুলে গাড়ির পুরানা আগলি পার্টস নিয়ে আসছি!

– ও মাই সিলি ড্যাডি…! তুমি কিছু কিনে খেয়ে নিবা আচ্ছা?

– শিওর মা!

– আচ্ছা রাখি আব্বু। “আল্লাহ হাফেজ”, “স্লামালিকুম”, “লাভ ইউ”, “মিস ইউ”, “উম্মা”.. [ফ্লাইং কিস], “বাই বাই”, “সি ইউ”…

- Advertisement -

Latest Posts

Don't Miss

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.